Advertisement
বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে যাচ্ছে ভারত। তবে ভারতের মধ্যে শুধুমাত্র যোশীমঠ থেকেই দেখা মিলবে সম্পূর্ণ বলয়গ্রাসকে। এদিনের গ্রহণ খুব ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন চিন ও নেপালের আংশিক অধিবাসীরা। আকাশ মেঘ মুক্ত হলে বঙ্গদেশ থেকেও দেখা মিলবে এই মহাজাগতিক ঘটনাটি। – ছবি : সংগৃহীত
|
রঞ্জন সরকার : প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ আজ নতুন কিছু নয়। সৃষ্টির প্রথম যুগ থেকেই এই দুটি দৃশ্য ঘটে চলেছে পালাক্রমে। অমাবস্যায় সূর্যগ্রহণ আর পূর্ণিমায় চন্দ্রগ্রহণ প্রকৃতির প্রধান স্বাভাবিক ঘটনাগুলির মধ্যে দুটি। তবে সব অমাবস্যা বা পূর্ণিমায় গ্রহণ হবেই তার কোনও কথা নেই। গ্রহণ লাগার অন্যতম কারণ অনুসারে সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদকে একই সরলরেখায় আসতে হবে। আগামী ২১ জুন অমাবস্যার দিন যেমন একই সরলরেখায় আসতে চলেছে এই তিনটি জ্যোতিষ্ক। এদিন চাঁদ থাকবে সূর্য আর পৃথিবীর ঠিক মাঝখানে। পৃথিবীর কিছুটা অংশ আড়াল করে রাখবে সে, ঘটবে সূর্যগ্রহণ।
সূর্যগ্রহণ আগেও হয়েছে এবং এবারও হবে। তবে এদিনের গ্রহণ আগের গুলোর থেকে কিছুটা আলাদা, বিরল বলা চলে। আসলে এই গ্রহণের ক্ষেত্রে চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢাকতে পারবে না। বরং সূর্যের ঠিক মাঝের অংশটুকু কিছুক্ষণের জন্য আড়াল করে রাখবে। অর্থাৎ চাঁদের গোল পরিধির চতুর্দিক থেকে দেখা মিলবে সূর্যকে। তবে এই সূর্যকে একদমই আলাদা মনে হবে। ঠিক যেন আগুনের গোলাকৃতির আংটি বা রিং-এর মতো। দেখে মনে হবে আকাশে একটি উজ্জ্বল বলয় ভেসে উঠেছে। তাই এই প্রকৃতির সূর্যগ্রহণকে ‘বলয় গ্রাস সূর্যগ্রহণ’ও বলা হয়ে থাকে। অবশ্যই গ্রহণের ওই সময়টিতে দিনের আলো কিছুটা কমে সন্ধ্যার পরিবেশ তৈরি করবে।
এই পুরো প্রাকৃতিক ঘটনাটি দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ২১ জুন পর্যন্ত। ওই দিন ভারতীয় সময় সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে শুরু হবে সূর্যগ্রহণ। কঙ্গোতে প্রথম শুরু হবে এদিনের গ্রহণ। তারপর ক্রমশ গ্রাস করবে ফিলিপিন্স পর্যন্ত। তবে ভারতের সব স্থান সর্বোচ্চ গ্রাসকে ছুঁতে পারবে না। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ভারতের হিমালয়ের কোলে ‘যোশীমঠ’ থেকে খুব ভালোভাবেই নজরে আসবে এই মহাজাগতিক ঘটনাটি। দক্ষিণ ভারত থেকে এদিন আংশিক সূর্যগ্রহণ লক্ষ্য করা যাবে। কোলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলি থেকে ৭০ শতাংশ গ্রহণ দেখার সুযোগ থাকবে। এছাড়াও সম্পূর্ণ গ্রহণ দেখার সৌভাগ্য হবে ভারতের প্রতিবেশী দেশ চিন ও নেপালের আংশিক অধিবাসীদের।
এদিন সম্পূর্ণ বলয় গ্রাস হতে দেখা যাবে ভারতীয় সময় দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে। ওই সময় সূর্যের সর্বোচ্চ বলয় গ্রাস পূর্ণ হবে এবং পরিবেশে সর্বোচ্চ অন্ধকার নেমে আসবে। এরপর চাঁদ ক্রমশ সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখান থেকে সরতে শুরু করবে। এইভাবে সম্পূর্ণ সরে যাবে ভারতীয় সময় দুপুর ২টো ২ মিনিটে। অর্থাৎ ওই সময়ে গ্রহণের সমাপ্তি ঘটবে।
দিনের আলোকোজ্জ্বল পরিবেশে হঠাৎ আংশিক অন্ধকার নেমে আসাকে বেশ উৎসাহ দিয়েই অনুভব করবে দেশবাসী, একথা বলা-ই বাহুল্য। এদিনের গ্রহণ স্থায়ী হবে প্রায় ৬ ঘণ্টা। এর পাশাপাশি অতি স্বাভাবিক এই মহাজাগতিক ঘটনার সঙ্গে কুসংস্কারকে প্রশ্রয় না দেওয়াই ভালো। তবে বঙ্গদেশের অধিবাসীরা কতটা এদিনের সূর্যগ্রহণকে উপভোগ করতে পারবেন, তা নিয়ে থেকে যাচ্ছে সংশয়। কারণ বর্ষার মৌসুমি বায়ু ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে বাংলায়। প্রায় সারাদিনই আকাশ মেঘলা থাকছে এখন। আগামী ২১ জুন আকাশের পরিস্থিতি কি হতে পারে তা আগাম কিছুই বলতে পারছেন না কেউই। ফলে চিন্তায় গ্রহণপ্রেমী বঙ্গবাসীরা।
Advertisement