জঙ্গলের পশুরা স্বাধীন। শীত আসার প্রাক্কালে তারা বাসযোগী ব্যবস্থাটুকু করে নিতে পারে। কিন্তু মানুষের কৃত্রিম পরিবেশে টিকে থাকা কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল প্রভৃতি পশুগুলি বড্ড অসহায়। শীতের প্রখরতায় ভুগতে থাকে সারা শীতকাল জুড়ে। পথের সায়মেয় বা মুক্ত বিড়ালগুলো হয়তো বনের পশুর মতোই স্বাধীন। খুঁজে নিতে পারে তাদের উপযুক্ত বাসস্থান। কিন্তু মানুষের তৈরি স্বল্প পরিসরে ঘেরা কৃত্রিম পরিবেশে সেই জায়গাটুকুও পাওয়া এখন তাদের কাছে দারুণ দুষ্কর হয়ে উঠেছে। |

সজয় পাল : শীতের মরশুম চলছে। যদিও ভরা শীত আসতে এখনও বেশ কিছুদিন দেরি। তাই বন্ধ বাক্স বা আলমারির অন্ধকার কুঠুরি থেকে একটা-দু’টো করে শীতবস্ত্র বেরোতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। কথায় আছে, ‘যার শীতবস্ত্র যত বেশি, তার শীতও তত বেশি’। কথাটি গ্রাম-বাংলার ‘সেকেলে’ কথা হলেও নেহাত ভুল কথা নয়। সমাজের একটি অংশের মানুষের একাধিক দামি শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য থাকায় তারা যত খুশি ভিন্ন প্রকৃতির বস্ত্র পরিধান করতে পারে। আর যাদের সামর্থ্য নেই, তারা একই বস্ত্র বছরের পর বছর পরিধান করে সমস্ত শীতকালটা নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেয়। ছিন্ন হলেও ক্ষতি নেই। সূচ-সুতোর অপূর্ব কারুকার্যে আবার ব্যবহারযোগ্য করে তোলে সেগুলি।
যাইহোক, শীতকে শরীরে প্রবেশের পূর্বে তাকে আটকানোর কায়দা কমবেশি প্রতিটা মানুষই জানে। ধনী-দরিদ্র প্রত্যেকেই শীত আসার আগেই তার ব্যবস্থা করে নিতে পারে। কিন্তু পরিবেশে যারা অবুঝ, অবহেলিত, অন্যের দয়ায় বেঁচে থাকা ‘নগণ্য জীব’, তাদের কষ্টের কথা ক’জন ভাবে?
জঙ্গলের পশুরা হয়তো স্বাধীন। শীত আসার প্রাক্কালে তারা বাসযোগী ব্যবস্থাটুকু করে নিতে পারে। কিন্তু মানুষের কৃত্রিম পরিবেশে টিকে থাকা কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল প্রভৃতি পশুগুলি বড্ড অসহায়। শীতের প্রখরতায় ভুগতে থাকে সারা শীতকাল জুড়ে। পথের সায়মেয় বা মুক্ত বিড়ালগুলো হয়তো বনের পশুর মতোই স্বাধীন। খুঁজে নিতে পারে তাদের উপযুক্ত বাসস্থান। কিন্তু মানুষের তৈরি স্বল্প পরিসরে ঘেরা কৃত্রিম পরিবেশে সেই জায়গাটুকুও পাওয়া এখন তাদের কাছে দারুণ দুষ্কর হয়ে উঠেছে। তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই প্রবল শীতেও ইতস্তত ঘুরে বেরাতে হয় তাদের। আসলে শীতল পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রকৃতি তাদের তেমনভাবে তৈরি হতে শেখায়নি। যতটা না শিখিয়েছে শীতপ্রধান অঞ্চলের পশুদের।
শীতের মরশুমে আবার অন্য যন্ত্রণাও দেখা দেয় সারমেয়গুলির। অধিকাংশ সারমেয় বাচ্চা প্রসব করে এই সময়ে। ফলে তাদের কষ্টের আর সীমা থাকে না। উপযুক্ত স্থানের অভাবে শীতকষ্টে প্রতি বছর প্রচুর সদ্যজাত কুকুর ছানাকে বিদায় নিতে হয় ঠিক করে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই। যারা বেঁচে থাকে, সঠিক পরিচর্যা আর খাদ্যের অভাবে তারাও রোগাক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যায় অতি দ্রুত। তাই মানুষের পরিবেশে ইতস্তত ঘুরে বেড়ানো ওই অসহায় পশুগুলিকে শীতের মরশুমে সামান্য আশ্রয় দিলে ক্ষতি কী?