‘কং’ পর্বতমালাকে সর্বপ্রথম সামনে আনেন স্কটল্যান্ডের অভিযাত্রী মাঙ্গো পার্ক। তিনি নিজার নদীর উৎস খুঁজতে আফ্রিকার এই অঞ্চলে এসে প্রায় ২ বছর কাটিয়ে যান। পরে তাঁর সেই অভিযানের ঘটনা ১৭৯৯ সালে লন্ডনে বই আকারে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে যে মানচিত্রটি ছিল, যেটি এঁকেছিল ওই সময়কার বিখ্যাত কার্টোগ্রাফার জেমস রেনেল, সেখানে প্রথম ওই ‘কং’ পর্বতমালার উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। পর্বতমালার নামকরণ করা হয়েছিল আইভরি কোস্ট-এর ‘কং’ শহরের নামে। |

অনলাইন পেপার : মানুষের একটা ভুল ‘কল্পনা’ গোটা ইতিহাসকেই সময়ে সময়ে পালটে দিতে পারে। তার অন্যতম বড়ো উদাহরণ অবশ্যই ‘কং’ পর্বতমালার অস্তিত্ব। পশ্চিম আফ্রিকার এই পর্বতমালার অস্তিত্ব বাস্তবিকই ছিল ‘কল্পনা’ প্রসূত। যদিও সামান্য এই ভুলের জন্যই ১৭৯৮ সাল থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত রীতিমতো মানচিত্রেও দেখানো হয়েছিল এর অবস্থান। একে উল্লেখ করা হয়েছিল পশ্চিম আফ্রিকার হাইল্যান্ড থেকে গিনির টেমবাকাউন্ডার কাছে নাইজার নদীর উৎস পর্যন্ত। শুধু উনবিংশ শতাব্দী নয়, ২৫ বছর আগেও কিছু ক্ষেত্রে এই পর্বতমালাকে ভুলভাবে দেখানো হয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাপ থেকে এই পর্বতমালাকে এখন তুলে নেওয়া হয়েছে। এর কোনও অস্তিত্বও আজ আর প্রায় নেই বললেই চলে।
কিন্তু রয়ে গিয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন। ‘কং’ পর্বতমালার অস্তিত্বই যদি না থাকবে, তবে উনবিংশ শতকের আফ্রিকান মানচিত্রগুলিতেই বা কেন স্থান দেওয়া হয়েছিল একে? এই পর্বতমালাকে সর্বপ্রথম সামনে আনেন স্কটল্যান্ডের অভিযাত্রী মাঙ্গো পার্ক। তিনি নিজার নদীর উৎস খুঁজতে আফ্রিকার এই অঞ্চলে এসে প্রায় ২ বছর কাটিয়ে যান। পরে তাঁর সেই অভিযানের ঘটনা ১৭৯৯ সালে লন্ডনে বই আকারে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে যে মানচিত্রটি ছিল, যেটি এঁকেছিল ওই সময়কার বিখ্যাত কার্টোগ্রাফার জেমস রেনেল, সেখানে প্রথম ওই ‘কং’ পর্বতমালার উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। পর্বতমালার নামকরণ করা হয়েছিল আইভরি কোস্ট-এর ‘কং’ শহরের নামে।
তবে যে পর্বতমালার অস্তিত্বই নেই, তাকে কেন ওই মানচিত্রে তুলে ধরা হয়েছিল? এক্ষেত্রে নাকি কল্পনার স্থান দিয়েছিলেন মাঙ্গো পার্ক। পশ্চিম আফ্রিকার ভৌগলিক বিশেষজ্ঞ টমাস ব্যাসেট সম্প্রতি বিবিসি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, মাঙ্গো পার্ক পাহাড় বলতে হয়তো পাহাড়ের মরীচিকা দেখেছিলেন। নয়তো দূর থেকে মেঘ দেখে তাঁর পাহাড় বলে ভ্রম হয়েছিল। পরে জেমস রেনেল ‘কং’ পর্বতমালাকে মানচিত্রে স্থান দিয়েছিলেন তাঁর নিজের মতো করে।
তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, মাঙ্গো পার্ক ও জেমস রেনেল-এর এই ভুলে গোটা আফ্রিকার মানচিত্রটাই বদলে গিয়েছিল প্রায় ১০০ বছরের জন্য। এরপর বহু কার্টোগ্রাফার নিজেদের মতো করে তাঁদের অঙ্কিত আফ্রিকান ম্যাপে উল্লেখ করেছিলেন এই ‘কং’ পর্বতমালাকে। ১৮০৪ সালে জার্মান কার্টোগ্রাফার জোহান রেইনেকে, ১৮০৫ সালে ইংল্যান্ডের কার্টোগ্রাফার জন ক্যারিও এই পর্বতমালাকে স্থান দিয়েছিলেন তাঁদের ম্যাপে। এইভাবে উনবিংশ শতাব্দীর প্রায় প্রতিটি আফ্রিকান মানচিত্রে এই কাল্পনিক পর্বতমালাটির অস্তিত্ব ছিল। শেষে ভুল ভাঙে ১৮৮৯ সাল নাগাদ। ফরাসী অভিযাত্রী লুই গুস্তাফ বিঞ্জার ওই অঞ্চলে পৌঁছে ‘কং’ পর্বতের কোনও অস্তিত্বই খুঁজে পাননি। পরে একে একে ম্যাপ থেকেও ওই পর্বতমালাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, ‘কং’ পর্বতমালার অস্তিত্ব না থাকার প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও বার্থোলিমেউর অক্সফোর্ড এডভান্স এটলাসের ১৯২৮ সালের সূচিতে একে উল্লেখ করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, মাত্র ২৫ বছর আগেও অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে গুডি’স ওয়ার্ল্ড এটলাসে একে দেখানো হয়েছিল।