Advertisement
জনদর্পণ ডেস্ক : ২২ মার্চ করোনা সংক্রমণ রুখতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকা ১৪ ঘণ্টার ‘জনতা-কারফিউ’-এ সমস্ত ভারত কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় লোকসমাগম একেবারেই নজরে পড়েনি। রেল পরিষেবা সহ সমস্ত যানবাহন চলাচল ছিল একেবারেই বন্ধ। দেশের প্রতিটা শহরে এই একই চিত্র ধরা পড়েছিল এদিন।
কিন্তু ২৩ মার্চ সকাল থেকেই এলাকার বাজারগুলিতে ব্যাপক লোকসমাগম নজরে পড়ল। যদিও দেশের সমস্ত রেল ও মেট্রো পরিষেবা ২২ মার্চ রাত ১২টা থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই পরিষেবা বন্ধ থাকবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
২২ মার্চ ‘জনতা-কারফিউ’ চলার সময়েই প্রধানমন্ত্রী নতুন করে প্রস্তাব দেন দেশের ৭৫টি করোনা আক্রান্ত জেলাকে ‘লকডাউন’ করার। এব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছেও প্রস্তাব পত্র পৌঁছায়। সেখানে এও উল্লেখ থাকে, প্রয়োজনে রাজ্য সরকার ‘লকডাউন’ জেলার সংখ্যা বাড়াতে পারে। সেই মতো ২২ মার্চেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২৩ মার্চ বিকাল ৫টা থেকে ২৭ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত কলকাতা সহ জেলার সমস্ত পৌর এলাকা এবং বেশ কয়েকটি জেলাকে ‘লকডাউন’ করার কথা ঘোষণা করে।
এই ঘোষণার পরই ২৩ মার্চ সকাল থেকেই রাজ্যের বাজারগুলিতে প্রাত্যহিক জিনিসপত্র কেনার ধুম পড়ে যায়। প্রায় প্রতিটা বাজারেই এই ভিড় ছিল মাত্রাছাড়া। তার সঙ্গে কিছু জিনিসপত্রের দামও এক লাফে বেড়ে হয়েছে আকাশ ছোঁয়া।
এদিন সবজি বাজারগুলিতেই ভিড় হতে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। বারবার অধিক জনসমাগম না করার কথা ঘোষণা করা সত্ত্বেও কেন এই ভিড় জানতে চাওয়ায়, বাজার করতে আসা আমোদপুরের এক বাসিন্দা জানালেন, যেহেতু ২৭ মার্চ পর্যন্ত বাজার ‘লকডাউন’ থাকবে, তাই বেশি করে সবজি কিনতে এসেছেন তিনি। যদিও অধিক লোকসমাগম এড়িয়ে চলার পক্ষেও তিনি। এব্যাপারে তিনি জানালেন, বাজারে এলে জনসমাগম তো ঘটবেই। কিন্তু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও তো কিনতে হবে। তাই সাবধানে যতটা সম্ভব মানুষজনের স্পর্শ এড়িয়ে বাজার করছেন তিনি। তাঁর মতো অন্যেরাও একই কথা বললেন। শুধু সবজি বাজারগুলি নয়, এদিন মুদিখানা সহ অন্য দোকানগুলিতেও এই একই চিত্র ধরা পড়ে।
তবে ‘লকডাউন’ সম্পর্কে কিছু মানুষ ভুল ধারণাও করছেন। তাঁদের মতে ‘লকডাউন’ মানে হাট-বাজারের সমস্ত কিছুই বন্ধ হয়ে যাওয়া। ধারণাটি একেবারেই ঠিক নয়। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছে কোন কোন পরিষেবা ২৭ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে আর কোন কোন পরিষেবা চালু থাকবে।
বন্ধ থাকার তালিকায় আছে – সমস্ত রকম গণপরিবহণ ব্যবস্থা (বাস, ট্যাক্সি, অটো, টোটো প্রভৃতি), সমস্ত প্রকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, দোকান, অফিস, কলকারখানা। খোলা থাকছে – মুদিখানা, সবজি, মাছ-মাংস, দুধের দোকান, রেশন, ওষুধের দোকান, অনলাইন খাদ্যসামগ্রী পরিষেবা, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা, ব্যাঙ্ক-এটিএম, থানা-আদালত-জেলখানা, গ্যাস পরিষেবা, পেট্রোলপাম্প, ইন্টারনেট, সমস্ত রকম সংবাদমাধ্যম। ঘোষণায় এও বলা হয়েছে, ‘লকডাউন’ চলার সময়ে যাতে কোনওভাবেই ৭ জনের বেশি জমায়েত না হয় এবং কেউ যেন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না বের হয়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (ভারতীয় সময় ২৩ মার্চ দুপুর ১টা) ভারতে এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২৫। তার মধ্যে মারা গিয়েছে ৮ জন। সারা বিশ্বে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৮২। তার মধ্যে মারা গিয়েছে ১৪ হাজার ৭০৫ জন। সবচেয়ে করুণ অবস্থা ইতালির। সেদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজারের কাছাকাছি প্রায় পৌঁছে গিয়েছে। তারা মধ্যে মারা গিয়েছে ৫ হাজার ৪৭৬ জন। (সূত্র : ওয়ার্ল্ডোমিটার)
Advertisement