ভাঙচুর চালানো হল বাঘা যতীনের ভাস্কর্যে। ১৭ ডিসেম্বর মাঝরাতে লজ্জাজনক এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে দুস্কৃতিরা। ভাস্কর্যটি স্থাপিত ছিল কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া কলেজের গেটের কাছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নাক ও মুখের ডান পাশের কিছুটা অংশ। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে কি কারণে ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করা হয়েছে, সেব্যাপারে এখনও কিছু জানা যায়নি। ঘটনাটির পূর্ণ তদন্ত চলছে। |

অনলাইন পেপার : যত রাগ ভাস্কর্যের উপর। একই মাসে এবং একই জেলায় মাত্র ২ সপ্তাহের ব্যবধানে শ্রেষ্ঠ দুই বাঙালির ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটল বাংলাদেশে। প্রথম ঘটনাটি ঘটে ৪ ডিসেম্বর মাঝরাতে। ওই দিন ভাঙচুর করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য। আর এবার ১৭ ডিসেম্বরের মাঝরাতে ভাঙচুর চালানো হয় বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্যে।
ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে গত দু’মাস ধরে উত্তাল হয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ঘটনার সূত্রপাত ঢাকার ধোলাইপাড়ে শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনকে কেন্দ্র করে। বরাবরই এই ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে আসছে সেদেশের কয়েকটি ইসলামপন্থী সংগঠন। তারা ভাস্কর্য ‘ছিঁড়ে, টেনে হিঁচড়ে’ ফেলারও হুমকি দিয়েছে। এক্ষেত্রে মামুনুল হক ও আমীর জুনাইদ বাবুনগরী নামের দুই ইসলামপন্থী নেতাকে ভাস্কর্য স্থাপনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছে। গত ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের আটহাজারীর একটি স্কুল মাঠে বক্তব্য দেওয়ার সময় হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী ভাস্কর্য ‘ছিঁড়ে, টেনে-হিঁচড়ে’ ফেলার কথা উল্লেখ করেন।
এই ঘটনার পরই গত ৫ ডিসেম্বর সকালে কুষ্টিয়ার পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য ভগ্ন অবস্থায় দেখা যায়। পরে সিসিটিভি ফুটেজে উল্লেখ পাওয়া যায়, ভাস্কর্যটির কিছুটা অংশ ভেঙে ফেলছে দু’জন দুস্কৃতি। পুলিশ ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত মোট চারজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির দুইজন একটি কওমী মাদ্রাসার ছাত্র এবং বাকি দুইজন ছিল ওই মাদ্রাসারই শিক্ষক।
ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। এবার ভাঙচুর চালানো হল বাঘা যতীনের ভাস্কর্যে। বিবিসি সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেল, ১৭ ডিসেম্বর মাঝরাতে লজ্জাজনক এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে দুস্কৃতিরা। ভাস্কর্যটি স্থাপিত ছিল কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া কলেজের গেটের কাছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নাক ও মুখের ডান পাশের কিছুটা অংশ। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সন্দেহভাজন ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি। ঘটনাটির পূর্ণ তদন্ত চলছে।
বাঘা যতীন বা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের একজন প্রথম সারির বিপ্লবী। ১৮৭৯ সালে ৭ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার কয়া গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। তিনি ছিলেন বাংলার অন্যতম প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের প্রধান নেতা। উড়িষ্যার বালেশ্বরে চলা ব্রিটিশ সেনার সঙ্গে সম্মুখ সমরে তিনি আহত হন। পরে বালাসোর হাসপাতালে ১৯১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।
বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদ সংস্থা প্রথম আলো সূত্রে জানা গেল, বাঘা যতীনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে কুমারখালীর কয়া কলেজের প্রধান ফটকের সামনে তাঁর এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ।
ভাস্কর্যের উপর ক্ষোভ বাংলাদেশে এই প্রথমবার নয়। এর আগে ২০১৭ সালেও সেদেশের সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে গ্রীক দেবীর ভাস্কর্য স্থাপনকে ঘিরেও ছড়িয়েছিল উত্তেজনা। সেবারেও সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে গ্রীক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ করতে দেখা গিয়েছিল হেফাজতে ইসলামের সমর্থকদের। পরে ওই বছরই ১৬ মে মাঝরাতে কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়া হয়।