Advertisement
সোমনাথ মুখোপাধ্যায় : এই দশকের শেষ বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯। যেসব দেশ থেকে এই বলয়গ্রাস দেখা যাবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি সহ শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত প্রভৃতি। তবে ভারতের সব জায়গা থেকে পরিপূর্ণ বলয়গ্রাস না দেখা গেলেও খন্ডগ্রাস সূর্যগ্রহণ প্রায় সব জায়গা থেকেই সুস্পষ্টভাবে দেখা যাবে। ভারতের কোজিকোড কোয়েম্বাটুর, ম্যাঙ্গালুড়ু কাসরগোড, ওয়ার্নাড, উটি, এরোড, তিরুচিরাপল্লীপ্রভৃতি জায়গা থেকে সবচেয়ে সুন্দরভাবে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এই গ্রাসের স্থায়ীত্ব হবে তিন মিনিট চল্লিশ সেকেন্ড। এই গ্রহণের সবচেয়ে সুন্দর বিষয় হল সূর্যের চারিদিকে দেখা যাবে অগ্নিময় বলয়, যাকে বলা হয় Ring of fire। এটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন।
গ্রহণ বিজ্ঞানের দিক থেকে কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হল অত্যন্ত স্বাভাবিক এক প্রাকৃতিক ঘটনা। বাস্তবিক গ্রহণ হল আলোছায়ার খেলা। সূর্য, চন্দ্র বা পৃথিবীর ওপর এর কোনও প্রভাব নেই। মাটিতে যেমন কোনও অস্বচ্ছ বস্তুর ছায়া পড়ে এও তেমনি। সূর্যগ্রহণের সময় আলোর উৎস সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে একই তলে একই সরলরেখায় যখন অস্বচ্ছ বস্তু চাঁদ এসে পড়ে তখন চাঁদের ছায়া তৈরি হয়। এই আলোহীন অঞ্চলকে বলে প্রচ্ছায়া (Umbra)। পৃথিবীর প্রচ্ছায়াযুক্ত অঞ্চলে যারা বাস করেন তারা পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখতে পাবেন। আর যারা উপচ্ছায়া (Penumbra) অঞ্চলে থাকবেন তারা দেখবেন খন্ডগ্রাস সূর্যগ্রহণ। পশ্চিমবঙ্গ যেহেতু উপচ্ছায়া অঞ্চলে থাকছে, তাই এখান থেকে খন্ডগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখতে পাওয়া যাবে। পশ্চিমবঙ্গে গ্রহণ শুরু হবে সকাল ৮.২৭ মিনিটে, গ্রহণ তার পূর্ণতায় পৌঁছাবে ৯.৫২ মিনিটে এবং গ্রহণ শেষ হবে ১১.৩২ মিনিটে।
গ্রহণকে ঘিরে নানা ধরনের কুসংস্কার প্রচলিত আছে আমাদের সমাজে। প্রাচীন যুগ থেকে মানুষ গ্রহণের প্রকৃত কারণ না জানায় বিষয়টিকে অশুভ বলে মনে করত। যা থেকে রাহু–কেতুর গল্পের জন্ম। এই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগেও গ্রামবাংলায় অনেকের মনে এখনও অন্ধকার বাসা বেঁধে আছে! তারা মনে করেন গ্রহণের সময় নানান রকম ক্ষতিকারক জীবাণুর উৎপত্তি হয় তাই গ্রহণের সময় রান্না করা বা খাবার খাওয়া উচিত নয়। গ্রহণের সময় নাকি সন্তানের জন্ম হলে সেই সন্তান সারা জীবন দুঃখ ভোগ করে কিংবা তার শরীরে জন্মগত বিকৃতি থাকে। কেউ কেউ আবার অপবিজ্ঞান নির্ভর কথাবার্তা বলেন, তাদের অভিমত গ্রহণের সময় নাকি নানা ক্ষতিকারক রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করে। তাই গ্রহণের সময় বাইরে বেরোনো উচিত নয়। আসলে এসব চিন্তা–ভাবনার পেছনে কোনও বৈজ্ঞানিক সত্য নেই। তাই রীতিমতো খাওয়া-দাওয়া করতে করতে (স্বাভাবিক জীবন যাপনের মাধ্যমে) গ্রহণ উপভোগ করুন।
তবে গ্রহণ দেখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানতা নেওয়া দরকার। কোনও অবস্থাতেই সূর্যের দিকে খালি চোখে বারেকের জন্যও তাকাবেন না। এতে আপনার চোখের রেটিনা পুড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে আর্লি ক্যাটারাক্ট দেখা দিতে পারে। এমনকি চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। রোদ চশমা, এক্স–রে প্লেট, ফিল্মের নেগেটিভ, বাইনাকুলার, টেলিস্কোপ বা হলুদ জলে সূর্যের প্রতিফলন দেখবেন না। গ্রহণ দেখতে হলে কেবলমাত্র সোলার ফিল্টার বা মাইলার ফিল্মের চশমা ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া ওয়েল্ডিংয়ের ১৪ নম্বর সেডের গ্লাসও ব্যবহার করা নিরাপদ।সবচেয়ে ভালো উপায় হল পিনহোল ক্যামেরার মাধ্যমে পরোক্ষে প্রতিফলিত সূর্যের গ্রহণ দেখা।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ ও বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলি আগামী ২৬ তারিখ নিরাপদে গ্রহণ দেখানোর জন্য সারা পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বীরভূম জেলার বিভিন্ন স্থানে গ্রহণ দেখানোর জন্য শিবির করতে চলেছে। এ পর্যন্ত জানা গিয়েছে, বোলপুর, সিউড়ি, রামপুরহাট, আমোদপুর, দুবরাজপুর, ইলামবাজার, মহম্মদ বাজার, সাঁইথিয়া, ময়ূরেশ্বর, মুরারই প্রভৃতি স্থানে এক বা একাধিক জায়গায় শিবির করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখান থেকে নিরাপদে গ্রহণ দেখার জন্য অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে মাইলার চশমা সরবরাহ করা হবে। তাছাড়া থাকছে হাতে–কলমে গ্রহণ বিষয়ক নানা আকর্ষণীয় এক্সপেরিমেন্ট দেখার সুযোগ।
Advertisement
খুবই সুন্দর প্রয়াস,"গ্রাস" কথাটি না থাকলেই ভালো হতো না কি ?
Great