বরাবরই অসহায় মুমূর্ষু রোগীদের নিশ্চিত ভরসা ‘রক্তযোদ্ধা’ লাল্টু মিদ্যা

Advertisement
এলাকায় রক্তদানের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসীম। শুধু নিজের এলাকা নয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকাতেও তাঁর উপস্থিতি মুমূর্ষু রোগীদের ভরসা যোগায়। এমনকি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আগত রোগীদের ক্ষেত্রেও কখনও তিনি নিজে রক্তদান করেন অথবা রক্তদাতার ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়াও কলকাতায় ভারতীয় সেনা হাসপাতালে বেশ কয়েকবার সেনাদের অপারেশনে প্রয়োজনীয় রক্তের চাহিদা মেটাতে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি।
বরাবরই অসহায় মুমূর্ষু রোগীদের নিশ্চিত ভরসা ‘রক্তযোদ্ধা’ লাল্টু মিদ্যা

জনদর্পণ ডেস্ক : তিনি ভূষিত হয়েছেন ‘রক্তযোদ্ধা’ নামে। কারণ যখনই কোনও মুমূর্ষু রোগীর রক্তের প্রয়োজন পড়ে, এলাকাবাসী সবার প্রথম স্মরণ করেন তাঁকে, এই ‘রক্তযোদ্ধা’-কে। সবাই জানেন, তাঁকে স্মরণ করলেই তাঁদের রক্তের চাহিদা মিটতে বাধ্য। ‘রক্তযোদ্ধা’ নিজের রক্ত দিয়ে হোক অথবা যে কোনও উপায়ে সংগ্রহ করে হোক, কোনও মুমূর্ষু রোগীকেই খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি কখনও। রক্তের অমূল্য ‘ফোঁটা’ পৌঁছে দিয়েছেন তাঁর কাছে।

এখানে ‘রক্তযোদ্ধা’ বলতে বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার দেউলা নিবাসী লাল্টু মিদ্যা ওরফে সফিউদ্দিন মিদ্যা-কে। রক্তের প্রয়োজনে মুমূর্ষু রোগীদের কাছে ভরসার আর এক নাম তিনি। তিনি এই এলাকায় স্বেচ্ছায় রক্তদান আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ।

গত বছর ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের সময়ে যখন সমগ্র দেশ সহ গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে চলছিল লকডাউন। ওই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁর সন্তান মন্তাজুর-এর ১৮তম জন্ম দিবস উপলক্ষে নিজের বাড়িতেই সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় আয়োজন করেছিলেন স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের। ওই শিবিরে শুধু তিনি নন, তাঁর পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেকেই রক্তদান করেছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি প্রথম ভোটাধিকার-এর সঙ্গে সঙ্গে যুবসমাজ-কেও রক্তদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন।


আরও পড়ুন :


এলাকাবাসী সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় রক্তদানের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসীম। শুধু নিজের এলাকা নয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকাতেও তাঁর উপস্থিতি মুমূর্ষু রোগীদের ভরসা যোগায়। এমনকি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আগত রোগীদের ক্ষেত্রেও কখনও তিনি নিজে রক্তদান করেন অথবা রক্তদাতার ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়াও কলকাতায় ভারতীয় সেনা হাসপাতালে বেশ কয়েকবার সেনাদের অপারেশনে প্রয়োজনীয় রক্তের চাহিদা মেটাতে এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে তিনি নিজে যেমন রক্ত দিয়েছেন, অন্য রক্তদাতাকেও এগিয়ে এনেছেন।

এসবের জন্যে তাঁকে প্রাকৃতিক দুর্যোগও কখনও বাধা দিতে পারেনি। কয়েক মাস আগেই তুমুল প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে প্রায় ১২০ কিলোমিটার মোটরবাইক চালিয়ে মাঝরাত্রে পৌঁছে গিয়েছেন কোনও এক মুমূর্ষ রোগীকে প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থা করে দিতে। তবে আশ্চর্যের হলেও সত্য, মুমূর্ষু রোগীর সঙ্গে আগে হয়তো কখনও তাঁর পরিচয়ই ঘটেনি।

তিনি আরও একটি ঘটনার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ হয়েও হিন্দু মৃত ব্যক্তির পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মে সশরীরে উপস্থিত থেকে নিজের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন একাধিকবার। সমাজের কাছে মানবিক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে এর চেয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত আর কি হতে পারে!

সম্প্রতি তাঁকে এই ‘রক্তযোদ্ধা’ সম্মানে ভূষিত করেছে দিল্লির ‘ন্যাশনাল পাবলিক প্রটেকশন কাউন্সিল’ (NPPC)। এছাড়াও সুন্দরবনের কৃতি ভূমিসন্তান হিসাবে তিনি পেয়েছেন ‘সুন্দরবন রত্ন’ পুরস্কার।

Advertisement
Previous article‘সৃজনী’-তে এবার আয়োজন করা হল ওড়িশার পারম্পরিক দেওয়াল চিত্র
Next articleআজ কোথায় ‘ভাদু’! এক সময় আমোদপুরেই বসত ভাদু প্রতিযোগিতার আসর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here