প্রায় নিঃশব্দেই পেরিয়ে গেল অলচিকি লিপির আবিস্কারক রঘুনাথ মুর্মুর জন্মদিন

Advertisement
রঘুনাথ মুর্মুই প্রথম বুঝেছিলেন, মাতৃভাষা অর্থাৎ সাঁওতালি ভাষায় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে না পারলে, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বিকাশ প্রায়ই অসম্ভব। তাই বহু গবেষনার পর ১৯২৫ সালে তিনি আবিস্কার করেন অলচিকি লিপি। ১৯৩৮ সাল নাগাদ অলচিকি প্রসারের জন্য তিনি তৈরি করেন কাঠের ছাপা মেশিন। তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৩৯ সালে জনসমক্ষে অলচিকি লিপি তুলে ধরেন। – জনদর্পণ : প্রতিনিধি
প্রায় নিঃশব্দেই পেরিয়ে গেল অলচিকি লিপির আবিস্কারক রঘুনাথ মুর্মুর জন্মদিন

বিজয় ঘোষাল : প্রায় ১ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে করোনা সংক্রমণ। যদিও গত নভেম্বরের পর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছিল এই সংক্রমণের হার। কিন্তু গত মার্চ থেকে আবার শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। আর এই ঢেউ পূর্বের তুলনায় আরও মারাত্মক।

করোনা সংক্রমণের এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝেই এবার নিঃশব্দে পেরিয়ে গেল অলচিকি লিপির আবিস্কারক রঘুনাথ মুর্মুর জন্মদিন। তাঁর জন্মদিনকে স্মরণীয় করতে বীরভূম জেলার সাঁইথিয়া ব্লকের ভ্রমরকোল গ্রাম-পঞ্চায়েতের নওয়াপাড়া গ্রামের অধিবাসী ও স্থানীয় শিক্ষক সুভাষচন্দ্র মুর্মুর উদ্যোগে একটি ছোট্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যদিও অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে কঠোর করোনা বিধি মেনে। অনুষ্ঠানে পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর সাঁওতালি ভাষা ও সাহিত্য বিকাশে অবদানের কথা আলোচনা করা হয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাঁর পূর্বে সাঁওতালি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে ব্যাপকভাবে চর্চা করতে অন্য কাউকেই বিশেষভাবে দেখা যায়নি। ৫ মে ১৯০৫ সালে উড়িষ্যার মূয়রভঞ্জ জেলার ডাহারডি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং এখানেই তিনি বাল্যজীবন কাটে। পাশের গ্রাম গাম্ভারিয়ায় তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু ওই অঞ্চলে তখনও লেখাপড়ার একমাত্র মাধ্যম ছিল ওড়িয়া ভাষা। এতে তাঁর একাধিক দিক দিয়ে লেখাপড়ায় বাঁধা আসতে থাকে। কারণ তিনি সামাজিকভাবে সাঁত্ততালি ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত। কিছুটা বাধ্য হয়েই তাঁকে ওড়িয়া ভাষায় লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হয়। তিনি মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও ম্যাটিক পাশ করার পর আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। কারণ পারিবারিক দারিদ্রতার জন্য লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় তাঁকে। পরে অবশ্য তিনি বারিপারা পাওয়ার হাউস থেকে apprenticeship ট্রেনিং নেন।

রঘুনাথ মুর্মুই প্রথম বুঝেছিলেন, মাতৃভাষা অর্থাৎ সাঁওতালি ভাষায় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে না পারলে, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বিকাশ প্রায়ই অসম্ভব। তাই বহু গবেষনার পর ১৯২৫ সালে তিনি আবিস্কার করেন অলচিকি লিপি। ১৯৩৮ সাল নাগাদ অলচিকি প্রসারের জন্য তিনি তৈরি করেন কাঠের ছাপা মেশিন। তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৩৯ সালে জনসমক্ষে অলচিকি লিপি তুলে ধরেন। অলচিকি লিপির প্রচার ও প্রসার সাঁওতালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে আনার জন্য ১৯৬০ সালে তাঁর চেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় আদিবাসী সোশিও এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যসোসিয়েশন (ASEACA)। পরে ধীরে ধীরে উড়িষ্যা সহ পাশ্ববর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহারে ছড়িয়ে পড়ে এই সমিতির শাখা।

অলচিকি লিপি আবিস্কারের পরেও থেমে থাকেননি পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু। রচনা করেছেন সাঁত্ততালি ভাষায় একাধিক শিশুপাঠ্য বই। এছাড়াও সাঁওতালি সাহিত্যের বিকাশের জন্য রচনা করেছেন নাটক। স্বাধীনোত্তর ভারতে সাঁওতালি ভাষাগোষ্ঠীর ভিত্তিতে একটি আলাদা রাজ্যের দাবিতেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৮২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এই মহান পণ্ডিতের জীবনাবসান হয়। প্রয়াণের বহুদিন পর তাঁর মন্ত্র দীক্ষিত দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে ২০০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর সংবিধানের অষ্টম তপশীলে সাঁওতালি ভাষাকে মর্যাদা দেওয়া হয়।

Advertisement
Previous articleএই গয়নার বয়স আড়াই হাজার বছরেরও বেশি
Next articleকরোনা ভাইরাস : ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কেন এত ভয়ঙ্কর?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here