প্রাচীন টেরাকোটা : রামনগর গ্রামের প্রাচীন ও পুরাকীর্তি মন্দির (ভিডিও সহ)

Advertisement

রামনগরে একটিই টেরাকোটা মন্দির রয়েছে। মন্দিরটি গ্রামবাসীদের কাছে গ্রামদেবতা মন্দির বা মনসা মন্দির নামে পরিচিত হয়ে রয়েছে। অথচ মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠা করা রয়েছে একটি শিবলিঙ্গ। যদিও মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাকাল সম্পর্কে সঠিক ধারণা কেউ দিতে পারেন না। কিন্তু মন্দিরের গায়ে খোদিত পোড়ামাটির একটি ফলক থেকে জানা যায়, ১২৬০ শকাব্দে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহাদেব দত্ত নামের রামনগর গ্রামেরই এক জনৈক ব্যক্তি।



সুজয় ঘোষাল ও বিজয় ঘোষাল : বীরভূমের এক অতি প্রাচীন গ্রাম রামনগর। গ্রামটির দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হচ্ছে মূয়রাক্ষী নদী। এটি বীরভূম ও মূর্শিদাবাদের সংযোগ স্থলে অবস্থিত। বাহ্যিক দিক থেকে আর পাঁচটা গ্রামের মতোই অতি সাধারণ একটি গ্রাম এই রামনগর। তবে পুরাকীর্তির দিক থেকে এটি ওই আর পাঁচটা গ্রাম থেকে কিছুটা হলেও আলাদা। কারণ এখানেই রয়েছে প্রাচীন টেরাকোটা র অপূর্ব কারুকার্যে সমৃদ্ধ একটি মনসা মন্দির। যদিও এককালে অসংখ্য মন্দির ছিল এই গ্রামে। তবে কালের পরিবর্তনে তাদের অনেকগুলিই এখন ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

রামনগরে একটিই টেরাকোটা মন্দির রয়েছে। মন্দিরটি গ্রামবাসীদের কাছে গ্রামদেবতা মন্দির বা মনসা মন্দির নামে পরিচিত হয়ে রয়েছে। অথচ মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠা করা রয়েছে একটি শিবলিঙ্গ।

যদিও মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাকাল সম্পর্কে সঠিক ধারণা কেউ দিতে পারেন না। কিন্তু মন্দিরের গায়ে খোদিত পোড়ামাটির একটি ফলক থেকে জানা যায়, ১২৬০ শকাব্দে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহাদেব দত্ত নামের রামনগর গ্রামেরই এক জনৈক ব্যক্তি। আর তাকে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে সহযোগিতা করেছিলেন ঢেকা গ্রামের রাজা রামজীবন রায়। যিনি এই টেরাকোটা মন্দির ছাড়াও পার্শ্ববর্তী আরও অনেকগুলি মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে সহযোগিতা করেছিলেন।

রামনগর গ্রামের এই প্রাচীন টেরাকোটা মন্দিরটির সমগ্র শরীর জুড়েই দেখতে পাওয়া যাবে টেরাকোটা র অপূর্ব কারুকার্য। কোথাও বা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রাম-রাবণের যুদ্ধ। কোথাও বা তুলে ধরা হয়েছে শ্রীকৃষ্ণের দশাবতার। এছাড়াও রয়েছে গণেশ, রথ চালনা, ফুল, পাখি ইত্যাদি। প্রতিটি টেরাকোটা র ফলক নিখুঁত ও গাণিতিক ছন্দে মন্দির গাত্রে বসানো হয়েছে। যার এক একটির আকার বর্গাকার বা আয়তকাকার।

প্রাচীন ও পুরাকীর্তি নিদর্শনের স্বরূপ হিসাবে এই টেরাকোটা মন্দিরটিকে ১৯৫৭ সাল নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ পুরাকীর্তি, পুরাবস্তু ও প্রত্নক্ষেত্র আইন অনুসারে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয়েছে।



তা সত্ত্বেও প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ এই টেরাকোটা মন্দিরটি অবজ্ঞা ও অবহেলায় প্রায় ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে টেরাকোটা র মূল্যবান ফলকগুলি। আর সেই সঙ্গে মুছে যাচ্ছে মন্দিরগাত্রে ফুটে ওঠা সামাজিক ও পৌরাণিক গল্পগুলি।

এই টেরাকোটা মন্দির চত্বরেই রয়েছে আরও একটি প্রাচীন মন্দির। স্থানীয়রা একে রামেশ্বর শিব মন্দির নাম দিয়েছে। যদিও এটি কোনও টেরাকোটা মন্দির নয়। তবে প্রাচীনত্বের নিরিখে এই মন্দিরটির গুরুত্বও কিছু কম নয়। জানা যায়, এই গ্রামের বণিক রামজয় দত্ত এই রামেশ্বর শিব মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর এই মন্দিরের নামানুসারেই এই গ্রামের নাম হয়েছে রামনগর।

রামনগর গ্রামের সবচেয়ে বড় উৎসব চড়ক বা শিবের গাজন প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে এই মন্দির চত্বরেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তখন দূর-দূরান্ত থেকে বিপুল মানুষের সমাগম ঘটে এখানে।

এছাড়াও এই গ্রামে আরও অনেকগুলি প্রাচীন মন্দির ছড়িয়ে রয়েছে সমগ্র গ্রাম জুড়ে। যেগুলি গোটা গ্রামকে এক সময় সমৃদ্ধ করে রেখেছিল। তবে কালের নিয়মে তার অনেকগুলিই এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

তবে সিঙে বাড়ির দুর্গা মন্দিরটি এখনও কোনও রকমে অক্ষত রয়েছে। জানা যায়, ১৩২০ বঙ্গাব্দে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হরিলাল সিংহ। আজও পুরনো প্রথা মেনে এখানে দুর্গা পুজোও হয় প্রতি বছর।

Advertisement
Previous articleসাবধান! লিচু কিন্তু সবার জন্য নয়
Next articleমৌসিনরাম কেন আজ বৃষ্টি বহুল গ্রাম?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here