প্রসঙ্গ বিশ্বভারতী : এ যেন কবির ধ্যানের সম্পদ

Advertisement
সম্প্রতি বিশ্বভারতীকে কেন্দ্র করে কিছু বিতর্কের জন্ম হয়েছে। একাধিক স্যোশাল মিডিয়ায় বারংবার তারই প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু অনেকেই ভুলে যাচ্ছেন, এই বিশ্বভারতী ছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের চল্লিশ বছরের সাধনার সম্পদ। কবি নিজেই বলেছেন, ‘কবিতা আমার আনন্দের প্রকাশ – আমার মনের বিলাস, কিন্তু বিশ্বভারতী আমার জীবনের যত বড় সত্য, – জীবনের সাধনা, আমার ধ্যানের ধন।’ – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি

context visva bharati this is like the wealth of the poet s meditation

সুকুমার দাস : ঋষিপুরুষ রবি ঠাকুরের যে জীবন, তা সত্য, নিত্য ও শাশ্বত। তমোময় মৃত্যু সে জীবনকে স্পর্শ করতে পারে না। আট দশক আগে কবির মৃত্যুতে জননেত্রী বিদুষী মহিলারাও বুঝেছিলেন, শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয় দিয়ে কবির যে স্বপ্নের সূত্রপাত, বিশ্বভারতীতে তার পূর্ণতা। তাই কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, তাঁর বিশ্বভারতীর প্রতি সহমর্মিতা অন্যতম প্রধান কর্তব্য হয়ে উঠেছিল তাঁদের। ২৪ আগস্ট ১৯৪১, রবিবার বিকেল ৩টে, কলকাতার সেনেট হাউসে এক সভা আহূত হল। যোগ দিলেন পরাধীন ভারতের ৩৭টি মহিলা সমিতি।
     ২৫ আগস্ট বাংলার জনপ্রিয় একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হল তার বিস্তৃত বিবরণ। শিরোনাম ছিল “ভারতীয় সংস্কৃতির মূর্ত্ত প্রতীক মহামানব রবীন্দ্রনাথ”। সভানেত্রী ছিলেন সুচারু দেবী। বিশ্বভারতীর সাহার্য্যার্থে অর্থ সংগ্রহের প্রস্তাব গৃহীত হল। তাঁরই নেতৃত্বে মহিলাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হল।
     মিসেস রাণু মুখার্জির অভিমত ছিল, ‘এই সভা আশা করে যে, বিশ্বভারতীর উন্নতির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়া, বাঙলার নারী, রবীন্দ্রনাথের স্মৃতির প্রতি, যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করিবেন।’ শ্রীমতি অনুরূপা দেবী প্রস্তাব দেন, ‘বিশ্বভারতীকে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য সকলেরই কর্তব্য রহিয়াছে।…  এবার যদি পূজার কাপড়ের পরিবর্ত্তে রবীন্দ্রনাথের পুস্তক তাঁহারা উপহার দেন, তাহা হইলে তাঁহারা নিজেরাও আনন্দ লাভ করিতে পারিবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বভারতীরও সাহায্য করা হইবে।’
     মিসেস সৌদামিনী মনে করেছিলেন, ‘তাঁহারা যদি কবির স্মৃতির প্রতি প্রকৃতভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিতে চাহেন, তাহা হইলে বিশ্বভারতীর ক্রমোন্নতির জন্য তাঁহাদিগকে বিশেষভাবে চেষ্টা করিতে হইবে।’ মিসেস রাণু মুখার্জির আবেদনের মধ্যে এক চিরকালীন আবেগ ও ভালবাসা ছিল, যা আজও সমভাবে প্রাসঙ্গিক, ‘শান্তিনিকেতনে কবির চল্লিশ বৎসরের সাধনার ধন এই বিশ্বভারতী। ইহা অপেক্ষা প্রিয় বোধহয় তাঁর কাছে জীবনে কিছু ছিল না। কবির নিজের মুখে শুনেছি – কবিতা আমার আনন্দের প্রকাশ – আমার মনের বিলাস, কিন্তু বিশ্বভারতী আমার জীবনের যত বড় সত্য, – জীবনের সাধনা, আমার ধ্যানের ধন।… আমার একান্ত আবেদন যে, আপনারা রবীন্দ্রনাথের ধ্যানের ধন এই বিশ্বভারতী-কে বাঁচিয়ে রাখুন।’
     আসুন সকলে ভুল শুধরে নিই। ব্যক্তি স্বার্থ আর অহংকে ত্যাগ করি, স্যোশাল মিডিয়ায় বিশ্বজুড়ে বিতর্কের চাপান-উতোরকে আর প্রশ্রয় নয়, বিশ্বকবির ‘সাধনার ধন’ বিশ্বভারতীকে রাজনৈতিক খেলাঘরে পরিণত হওয়াকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করার শপথ নিই!

লেখক বিশ্বভারতী রবীন্দ্রভবনের গ্রন্থাগারিক
Advertisement
Previous articleমাস্ক না পড়লে শাস্তি স্বরূপ শোয়ানো হচ্ছে কফিনে
Next articleএক মাছিতেই উড়িয়ে দিল বসত বাড়ির ছাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here