প্রত্নতান্ত্রিক নিদর্শনেও মিলেছে মা দুর্গার প্রতিচ্ছবি

Advertisement

কথিত আছে, রাজা সুরথ নাকি মর্তে প্রথম দুর্গোৎসব শুরু করেছিলেন। তিনি ছিলেন কাশ্মীরের কাছে কোল দেশের রাজা। যোগেশ চন্দ্র রায় বিদ্যানিধির মতে, এই তথ্য ‘চণ্ডী উপাখ্যান’-এ উল্লেখ রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, উত্তর ভারতে পূজিত দুর্গার মধ্যে প্রচলিত ছিল অষ্টভুজা, দশভুজা ও দ্বাদশভুজা। মধ্যভারত, মহারাষ্ট্র ও বিজপুরে প্রচলন ছিল চতুর্ভুজা দুর্গা মূর্তির। তবে দশভুজা দুর্গা মূর্তির প্রচলন সবচেয়ে বেশি ছিল বঙ্গদেশে। – ছবি : সংগৃহীত

image of mother durga is also found in the archeological patterns

রেমা মণ্ডল : গোটা আশ্বিন মাস পেরিয়ে কার্তিক মাসে অনুষ্ঠিত হবে এবারের দুর্গোৎসব। কারণ হিন্দু রীতি অনুসারে এবছরের আশ্বিন মাসকে মলমাস ঘোষণা করা হয়েছে। তাই বেশ দেরিতেই আগমন ঘটছে এবার মায়ের। দুর্গোৎসব বরাবরই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। বহু যুগ ধরেই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে সমগ্র বঙ্গদেশ সহ ভারতবর্ষে। কিন্তু কোথায়, কীভাবে এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল তা অবশ্য সঠিকভাবে এখন আর বলা যায় না। তবে কিছু প্রাচীন নিদর্শনের কথা উল্লেখ করা যায়।

     কথিত আছে, রাজা সুরথ নাকি মর্তে প্রথম দুর্গোৎসব শুরু করেছিলেন। তিনি ছিলেন কাশ্মীরের কাছে কোল দেশের রাজা। যোগেশ চন্দ্র রায় বিদ্যানিধির মতে, এই তথ্য ‘চণ্ডী উপাখ্যান’-এ উল্লেখ রয়েছে।

     কুষান যুগ অর্থাৎ খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে সিংহবাহিনী দুর্গা মূর্তি এবং গুপ্ত যুগ অর্থাৎ চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীতেও মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গামূর্তির নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। তার প্রমাণ স্বরূপ ওই দুই যুগের নিদর্শন থেকে দুটি ভিন্ন দুর্গা মূর্তির সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ ভিএস আগরওয়াল।

     এমনকি বহু পূর্বে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতাতেও মাতৃপুজোর প্রচলন ছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন। কারণ সেখানকার ধ্বংসাবশেষ থেকে একটি বিশেষ নারী মূর্তি পাওয়া গিয়েছে, যার অনেকটাই শক্তিরূপিণী দেবীর সঙ্গে মিল রয়েছে। তবে এই সময়ে দেবী পরিবার ছাড়াই এককভাবে পূজিত হত।

     রাজস্থানের বিভিন্ন স্থান থেকে খ্রিষ্টীয় পূর্ব অথবা খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে নির্মিত মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি পাওয়া গিয়েছে। তামিলনাড়ুর মহাবলিপুরমে আজও পল্লব রাজা নরসিংহবর্মণ নির্মিত মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তির অস্তিত্ব রয়েছে। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, উড়িষ্যা প্রভৃতি রাজ্য থেকেও প্রাচীন দুর্গা মূর্তির নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। যা দেবী দুর্গার প্রাচীনত্বের প্রমাণ দেয়। এমনকি এই বঙ্গদেশেও মা দুর্গার আরাধনা সুপ্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। কারণ শশাঙ্কের প্রচলিত মুদ্রাতেও দেবী দুর্গার দেখা মিলেছে। এখানে দেবী ছিলেন অষ্টভুজা।

     প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, উত্তর ভারতে পূজিত দুর্গার মধ্যে প্রচলিত ছিল অষ্টভুজা, দশভুজা ও দ্বাদশভুজা। মধ্যভারত, মহারাষ্ট্র ও বিজপুরে প্রচলন ছিল চতুর্ভুজা দুর্গা মূর্তির। তবে দশভুজা দুর্গা মূর্তির প্রচলন সবচেয়ে বেশি ছিল বঙ্গদেশে।

Advertisement
Previous articleআমোদপুর শহরের রূপকার বিপ্লবী রজতভূষণ দত্ত
Next articleচিরদিনই পুরস্কার বিমুখ ছিলেন বিদ্যাসাগর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here