Advertisement
২০১৮ সালের হিসাবে ভারতে সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৫ শতাংশ। অর্থাৎ ২৫ শতাংশ ভারতীয় এখনও নিরক্ষর। এক সময়ে এই নিরক্ষরদের কথা মাথায় রেখে দেশ জুড়ে খোলা হয়েছিল প্রচুর সাক্ষরতা কেন্দ্র। পরে ২০০৯ সাল নাগাদ হঠাৎ সেগুলি আবার বন্ধ হয়ে যায়। সাক্ষরতা কেন্দ্রগুলির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষাকর্মীরাও সমাজকে শিক্ষিত করার অভিপ্রায়ে আর এগোতে পারেননি। – ছবি : সংগৃহীত
|
জয়দেব দেবাংশী : স্বাধীনতার এত বছর পরেও এদেশের সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৫ শতাংশ (২০১৮ সালের হিসাবে)। অর্থাৎ ভারতের ২৫ শতাংশ (২০১৮ সালের হিসাবে) মানুষ এখনও নিরক্ষর। দেশ এগিয়ে চলছে। শিল্পোন্নতি ঘটছে। অর্থনীতিতে ক্রমশ সমৃদ্ধও হচ্ছে। অথচ সম্পূর্ণভাবে নিরক্ষরতাকে দূর করা আজও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অবশ্য এই নিরক্ষর থাকার বেশ কতকগুলি কারণও রয়েছে। তার অন্যতম একটি অবশ্যই দরিদ্রতা। এদেশের বহু মানুষ এখনও দারিদ্র সীমার নিচেই বসবাস করছেন। তাঁদের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরনো’-র সংসারে অর্থের যোগান না থাকায় তাঁদের শিশুদেরও খুব তাড়াতাড়ি স্কুল ছুট হতে হয়। যতদিন না এই স্কুল ছুটের সংখ্যা কমানো যাবে, ততদিন সাক্ষরতার হার বাড়ানো সম্ভব নয়।
এ সমস্যা শুধু ভারতের নয়, সারা বিশ্বের। এমনকি উন্নত দেশগুলির দিকে তাকালেও বোঝা যাবে, হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দেশ বাদ দিলে অধিকাংশ দেশের সাক্ষরতার হার কিন্তু ১০০ শতাংশ নয়। অর্থাৎ অর্থনীতিতে প্রভূত সমৃদ্ধ হলেও নিরক্ষর থেকেই যাচ্ছে ওই দেশগুলিতেও। তবে পশ্চিম বিশ্বের দেশগুলির সাক্ষরতার হার তুলনামূলক অনেকটাই বেশি। আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি নিরক্ষরতার হার সর্বাধিক।
১৯৬৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর একবার ১১ দিনের জন্য ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল নিরক্ষরতার বিষয়টি মাথায় রেখে। সারা বিশ্বের ৩৭টি দেশের শিক্ষামন্ত্রী এবং ৮৮ জন শিক্ষাবিদ এই আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এর পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৬৬ সালে ২৬ অক্টোবর ইউনেস্কো থেকে ‘৮ সেপ্টেম্বর’ দিনটিকে ‘বিশ্ব সাক্ষরতা দিবস’ হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অনেকেই বিশ্বাস করেন ‘শিক্ষায় জ্ঞানের আলো’। যার শিক্ষা নেই, তার সব কিছু থেকেও কিছুই প্রায় নেই। ভারতের দরিদ্র পরিবারগুলি দিনের অধিকাংশ সময়ই ব্যয় করে থাকে অর্থ সংগ্রহের কাজে। তাই শিক্ষার ভাবনা তারা ভাবলেও সময় জোটাতে পারে না। এক সময় তাদের কথা চিন্তা করেই দেশে গড়ে উঠেছিল সাক্ষরতা কেন্দ্র। দিনান্তে কাজের শেষে ওই দরিদ্র পরিবারগুলির নিরক্ষর মানুষেরা ছুটে যেতেন ওই সমস্ত সাক্ষরতা কেন্দ্রগুলিতে। কিছুটা শিক্ষা তারা সেখান থেকে সংগ্রহও করত।
তখন বেশ কতকগুলি স্তরে সাক্ষরতা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে ছিল বুনিয়াদী সাক্ষরতা, সাক্ষরোত্তর কর্মসূচি, ধারাবাহিক শিক্ষা। এক শ্রেণীর ‘শিক্ষা পাগল’ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ঘরের শিক্ষিত মানুষেরা সমাজকে শিক্ষিত করার এই গুরু দায়িত্ব দারুণ উৎসাহে নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। তাঁদের তকমা দেওয়া হয়েছিল ভিআই, ভিটি, প্রেরক, সঞ্চালক, সহ প্রেরক, সহ সঞ্চালক ইত্যাদি নামে। তখন কেন্দ্র থেকে সামান্য ভাতাও দেওয়া হত তাঁদের।
ওই সময় বীরভূম জেলাতেই গড়ে উঠেছিল ১৭৩৭টি ধারাবাহিক শিক্ষাকেন্দ্র ও ২৯০টি মুখ্য ধারাবাহিক শিক্ষাকেন্দ্র। ৫০৫৪ জন শিক্ষাকর্মী এই কাজে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু ২০০৯ সাল নাগাদ এই কর্মসূচি হঠাৎ করেই সরকারি সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে যায়। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত সেই ‘শিক্ষা পাগল’ শিক্ষাকর্মীরাও সাক্ষরতার কাজে আর বেশি দূর এগোতে পারেননি। ওই শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বেশ বয়স্ক। তাঁরাও ‘রণে ভঙ্গ’ দিতে বাধ্য হন।
প্রতি বছরই ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব সাক্ষরতা দিবস পালন করা হয় বেশ ঘটা করেই। শুধুমাত্র এই দিনটিতেই সাক্ষরতা বা নিরক্ষরতার প্রসঙ্গ উঠে আসে সবার সামনে। যদিও করোনা মহামারির জন্য এবছর ৮ সেপ্টেম্বর তেমন কোনও ঘটা করে পালন করা হয়নি। এদেশে আজও নিরক্ষরতার হার প্রায় ২৫ শতাংশ। সমগ্র পৃথিবী জুড়ে এই হার এক বিশাল অঙ্কের। এদের শিক্ষিত করার দায়িত্ব এখন কে নেবে?
Advertisement