Advertisement
৬ জুন থেকে একাধিক উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর খুব কাছ ঘেঁষে পেরিয়ে যাবে। ওই উল্কাগুলির নাম রাখা হয়েছে ২০০২এনএন৮, ২০১৩এক্সএ২২, ২০১০এনঅয়াই৬৫। নাসা জানালো কাছ ঘেঁষে পেরিয়ে গেলেও পৃথিবীর কোনও ক্ষতি তারা করবে না। ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। – ছবি : ইন্টারনেট
|
রঞ্জন সরকার : উল্কারা ছড়িয়ে রয়েছে সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে। কেউ ইতস্তত ছটফটে, কেউ বা নিয়মনিষ্ঠ ভদ্র। এই নিয়মনিষ্ঠরা সাধারণত নিয়ম মাফিক তাদের নির্দিষ্ট গতিতে নক্ষত্রদের কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে। ঠিক যেমন গ্রহদের মতো। এরকমভাবেই ঘুরতে ঘুরতে কখনও তারা এসে হাজির হয় অন্য কোনও গ্রহের খুব কাছাকাছি। তখন ওই গ্রহের অভিকর্ষজ টানে এগিয়ে যায় তার দিকে। কখনও বা ওই গ্রহের বুকেই আছড়ে পড়তে দেখা যায় তাদের।
পৃথিবীর অভিকর্ষজের টানেও উল্কারা মাঝে মধ্যে হাজির হয় এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে। তখন বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে তারা জ্বলে ওঠে। গ্রাম-বাংলার আকাশে এমন ঘটনা কখনও ঘটে থাকলে, দর্শক হঠাৎ চেঁচিয়ে বলে ওঠে, ‘ওই তারা খসলো’। উল্কার আকার যদি ছোটো হয়, তবে তা ভূমিষ্ঠ হওয়ার অনেক আগেই বায়ুমণ্ডলে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু উল্কার আকার একটু বড়ো হলে, তারা বায়ুমণ্ডলেই সম্পূর্ণ জ্বলে পুড়ে শেষ হতে পারে না। তাদের অবশিষ্টাংশ ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। তখন বিপদও ঘটতে পারে। এমনকি প্রাণহানি অথবা জীবকুল ধ্বংসও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই রকমই একটি বড়ো উল্কাপিণ্ডের আঘাতে পৃথিবীর বুক থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বিশালাকার ডাইনোসরেরা। অ্যারিজোনায় উল্কার আঘাতে যে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল, তা দেখলে আজও বুকের মধ্যে ‘ছ্যাঁত’ করে ওঠে। বেশ কয়েক বছর আগেও উত্তরের দেশ রাশিয়াতে আকাশ আলো করে উল্কার আঘাত মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। এই ভারতভূমির গুজরাটেও একবার একরকমই উল্কাপাতের ঘটনা ঘটেছিল। চাঁদের বুকে যে সমস্ত ছোটো বড়ো বিভিন্ন আকারের এবড়োখেবড়ো গর্ত প্রত্যক্ষ করা করা যায়, তার অধিকাংশই সৃষ্টি হয়েছে এই উল্কাপিণ্ডের আঘাতে।
যাইহোক, গ্লোবাল নিউজ সূত্রে জানা যাচ্ছে, আগামী ৬ জুন থেকে একাধিক উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর খুব কাছ ঘেঁষে পেরিয়ে যাবে। এরকমই বার্তা দিয়েছে নাসা। এই উল্কাপিণ্ডদের নামকরন করা হয়েছে ২০০২এনএন৮, ২০১৩এক্সএ২২, ২০১০এনঅয়াই৬৫। এদের কারও গতি ৭.৪৮ কিমি/ঘণ্টা। কারও বা ২৪.০৫০ কিমি/ঘণ্টা।
ওই সূত্র থেকে আরও জানা যাচ্ছে, ২০০২এনএন৮ উল্কাপিণ্ডটি পৃথিবীর খুব কাছে আসবে ভারতীয় সময় ৬ জুন বিকাল ৩টে ২০ মিনিটে। এটি চওড়ায় প্রায় ২৫০ মিটারের কাছাকাছি। ভারতীয় সময় ৮ জুন বিকাল ৩টে ৪০ মিনিটে পৃথিবীর খুব কাছে আসবে ২০১৩এক্সএ২২ উল্কাপিণ্ডটি। আর সর্বশেষ ২০১০এনঅয়াই৬৫ উল্কাপিণ্ডটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে পৌঁছবে ভারতীয় সময় সকাল ৬টা ৪৪ মিনিটে। এই উল্কাপিণ্ডটি লম্বায় প্রায় ৩১০ মিটারের কাছাকাছি হবে বলে জানিয়েছে নাসা। এর গতিবেগ প্রায় ৪৬.৪০০ কিমি/ঘণ্টা।
নাসা জানাচ্ছে, পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে ওই উল্কাপিণ্ডরা পেরিয়ে গেলেও, পৃথিবীর কোনও ক্ষতি তারা করবে না। কারণ ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়ার কোনও সুযোগই এই মুহূর্তে নেই।
Advertisement