চৌম্বকক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট-এর অস্তিত্বও বিলীন হয়ে যাবে। ফলে ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মির প্রবেশ আর কোনওভাবেই আটকানো যাবে না। ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, বন্ধ হয়ে যাবে ইন্টারনেট পরিষেবা। আর সবশেষে ক্ষতির মুখে পরবে জীবজগৎ। পৃথিবীর তামাম জীবকুলকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে।
একের পর এক বিপর্যয় নেমে আসছে পৃথিবীর বুকে। যার ফল মোটেও সুখকর নয়, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যাচ্ছে এখন। কয়েক বছর আগেই বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনা। শ্লথ হয়ে গিয়েছিল মানব সভ্যতার গতি। সেই ক্ষত মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে এখনও। বর্তমানে মাংকি পক্স আফ্রিকা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আরও অনেক দেশে। আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে দ্রুততার সঙ্গে।
এর মাঝে আবার কয়েক বছর আগের খবর ছিল ‘ঘুমিয়ে পড়ছে সূর্য’। তার তেজ কমে যাচ্ছে ক্রমশ। ফলে পৃথিবীর বুকে বহিরাগত ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মির আগমনের পথ তৈরি হচ্ছে প্রসস্ত। সেই সঙ্গে অধিক বজ্রপাত, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ক্ষতিকর রোগ-জীবাণু বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।
এবার আরও ভয়াবহ আর এক নতুন খবর জানালেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী নাকি তার চৌম্বকত্ব হারিয়ে ফেলছে ধীরে ধীরে! যা মোটেও ভাল খবর নয় পৃথিবীবাসীর জন্য। এর ফলও হতে পারে অতি মারাত্মক।
পৃথিবীর চৌম্বকত্ব আসলে কী?
পৃথিবীর গভীরে শক্ত জমাট বাধা অন্তঃভূকেন্দ্রের ওপর প্রায় ৬ হাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা নিয়ে অবস্থান করছে তরল বহিঃভূকেন্দ্র। এই অংশটি সব সময়ই চঞ্চল। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির জন্য এই অঞ্চলে ডায়নামো তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় তড়িৎপ্রবাহ। তড়িৎপ্রবাহ তৈরি হলে সেই অঞ্চলে চৌম্বকক্ষেত্র -ও তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। ফলে পৃথিবী পেয়েছে তার নিজস্ব চৌম্বকত্ব। এই চৌম্বকক্ষেত্র -টির উত্তর ও দক্ষিণ অংশ যথাক্রমে সুমেরু ও কুমেরুতে অবস্থান করছে।
চৌম্বকক্ষেত্র -এর কাজ কী?
এই চৌম্বকক্ষেত্র -টি পৃথিবীর অভ্যন্তর ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছে সুদূর মহাকাশে অসীম সীমানা পর্যন্ত। তারপর তৈরি করেছে নিজের চারপাশে অদৃশ্য স্থায়ী দুটি ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট। এই বেল্ট দুটিকেই বলা হয় পৃথিবীর রক্ষাকবজ। কারণ সূর্য ও বহির্বিশ্ব থেকে ধেয়ে আসা ক্ষতিকর অসংখ্য মহাজাগতিক রশ্মি এই বেল্টে আটকা পড়ে যায়। বেল্ট ভেদ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বা ভূমিভাগে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে রক্ষা পায় জীবকুল। সৃষ্টি হয় নতুন নতুন সভ্যতার।
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে উল্লেখযোগ্য হারে কমতে শুরু করেছে পৃথিবীর এই চৌম্বক ক্ষমতা। ওই তথ্য থেকে আরও জানা গিয়েছে, গত ২০০ বছরে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র প্রায় ৯ শতাংশ কমে গিয়েছে। যা যথেষ্ট চিন্তার বিষয় বলেই মনে করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
চৌম্বকক্ষেত্র পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে কী হবে?
এর ফল হবে অতি মারাত্মক। কারণ চৌম্বকক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট-এর অস্তিত্বও বিলীন হয়ে যাবে। ফলে ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মির প্রবেশ আর কোনওভাবেই আটকানো যাবে না। ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, বন্ধ হয়ে যাবে ইন্টারনেট পরিষেবা। আর সবশেষে ক্ষতির মুখে পরবে জীবজগৎ। পৃথিবীর তামাম জীবকুলকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন জার্মান রিসার্চ ফর জিও সায়েন্স-এর গবেষক জার্গেন মাজকা।
মঙ্গলের চৌম্বকক্ষেত্র
এখানে বলা প্রয়োজন, সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ মঙ্গলেরও এক সময়ে চৌম্বকক্ষেত্র ছিল। এবং সেই সঙ্গে ছিল ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্টও। কিন্তু কয়েক কোটি বছর আগে কোনও এক সুবিশাল উল্কা পিণ্ডের আঘাতে মঙ্গলের অন্তর্ভাগ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে ভূকেন্দ্রটি ধীরে ধীরে জমাট বেধে কঠিনে পরিণত হওয়ায় চৌম্বকত্ব হারিয়ে গিয়েছে চিরদিনের জন্য। সেখানে স্বাভাবিকভাবে উন্নত জীবজগৎ সৃষ্টি হওয়া এখন প্রায়ই অসম্ভব।
তবে কী কারণে পৃথিবীর এই চৌম্বকত্বের হ্রাস ঘটছে, তা এখনও সুস্পষ্ট নয় কারও কাছে। তবে কোনও কোনও জ্যোতির্বিজ্ঞানীর ধারণা, হয়তো পৃথিবী আবার তার চৌম্বকক্ষেত্র -এর দিক পরিবর্তন করছে, তাই এই হ্রাস। কিন্তু পুরোটা জানতে আরও অনুসন্ধানের প্রয়োজন।