Advertisement
শিব প্রসাদ খাঁ : হজরত দাতা মেহেবুব শাহ ওয়ালি বা দাতাবাবা ছিলেন একজন সুফি সাধক। তাঁর সুফি সাধনার বিশেষ মর্যাদাই তাঁকে বিখ্যাত করে তোলে। এই সাধকের আদি বাসস্থান সম্পর্কে কেউ সঠিক কিছু বলতে পারেন না। কোনও কোনও ঐতিহাসিকের মতে, তিনি উত্তর ভারত থেকে এসে সিউড়ি থানার অন্তর্গত পাথরচাপুড়ি গ্রামের পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে তাঁর সাধনা ক্ষেত্র তৈরি করেন।
দাতা বাবা তাঁর সাধনার মাধ্যমে সুফি তত্ত্বের যে আধ্যাত্বিকতাবাদ, তা ছড়িয়ে দিতে থাকেন চারিদিকে। সে সময়ে তাঁর বহু শিষ্যও হতে শুরু করে। হিন্দু, মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই এই সুফি তত্ত্ববাদের অনুপ্রেরণায় মোহিত হয়ে ওঠে। চারিদিকে তাঁর নাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে ধীরে ধীরে।
ঊনবিংশ শতকে বাউল, সহজিয়া সম্প্রদায়ের সাথে মুসলিম ধর্মের সুফি সাধনাও বাংলায় ব্যাপ্তি পেতে থাকে। সে সময়ের সুফি সাধনার আধ্যাত্ববাদকে মুসলিম সমাজের কিছু গোঁড়া ইমাম সম্প্রদায় মেনে নিতে পারেনি। ফলে গোঁড়া মুসলিমদের হাতে অনেক সুফি সাধকই প্রাণ হারান। শুধু তাই নয়, বাংলার সুফি সাধনাকে শেষ করতে তৎপর হয়েছিলেন তৎকালীন নবাবরাও। এসবই ইতিহাসের প্রামাণ্য বিষয়।
পাথরচাপুড়ির দাতাবাবা ছিলেন নিজে একজন সুফি সাধক। তাই তিনিও যে ধর্মান্ধ গোঁড়াদের কুনজরে ছিলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সমাজের তথা কথিত উচ্চবর্ণকে অতিক্রম করে কোনও কালেই মানুষের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি, এখনও হয় না। হয়তো তাই নিজেকে আত্মগোপন করে রাখতে তিনি এই পাথরচাপুড়ির জঙ্গলে এসে পৌঁছে ছিলেন। যদিও তাঁর সম্পর্কে বহু তথ্য আজও অজানা রয়ে গেছে।
তাঁর প্রয়াণ দিবসকে স্মরণ করেই প্রতি বছর ৯ চৈত্র পাথরচাপুড়িতে একটা বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি সুদূর বাংলাদেশ থেকেও দর্শনার্থীরা এসে মাজারে চাদর চড়িয়ে দাতা বাবাকে শ্রদ্ধা জানান।
Advertisement