Sunday, February 16, 2025

পাঙ্গানুর : অস্তিত্বের সংকটে এখন বিশ্বের সবচেয়ে ছোট জাতের গরু

- Advertisement -

বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির কিছু গরু। পাঙ্গানুর গরু তার মধ্যে অন্যতম। সারা ভারতবর্ষ বা আরও জোর দিয়ে বললে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে পাঙ্গানুর প্রজাতির গরু রয়েছে সর্বসাকুল্যে হাজারেরও কম। ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে এই বিশেষ প্রজাতির গরু। অথচ পুরাণেও এই গরুর কথা উল্লেখ রয়েছে।

পাঙ্গানুর
পাঙ্গানুর গরু – Image by Wikimedia Commons

ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সুপ্রাচীনকাল থেকেই গরু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আজও ধারণা করা হয়, একটি পরিবারের ভরণপোষণে এক জোড়া গরুই যথেষ্ট। হয়তো তাই আর্য সভ্যতার যুগে এই গরুকেই তখন সবচেয়ে মূল্যবান বলে মনে করা হত। সে সময়ে গরুর বদলে প্রয়োজনীয় সামগ্রী হস্তান্তরের বন্দোবস্তও ছিল রীতিমতো। আজও ব্রাহ্মণকে গরু দান বিশেষ আশীর্বাদ সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

যদিও বর্তমান ভারতে দেশি গরুর সঙ্গে মিশে গিয়েছে বিদেশি কিছু প্রজাতির গরু। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এখন একাধিক সংকর প্রজাতির গরু তৈরি করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে জার্সি বা হলেস্টাইন গরুর উল্লেখ করা যেতেই পারে। সাধারণত এর পিছনে অধিক দুধ ও মাংসের প্রলোভন রয়েছে।

এর ফলে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির কিছু গরু। পাঙ্গানুর গরু তার মধ্যে অন্যতম। সারা ভারতবর্ষ বা আরও জোর দিয়ে বললে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে পাঙ্গানুর প্রজাতির গরু রয়েছে সর্বসাকুল্যে হাজারেরও কম। ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে এই বিশেষ প্রজাতির গরু। অথচ পুরাণেও এই গরুর কথা উল্লেখ রয়েছে।

পাঙ্গানুর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যুক্ত গরু। যা অন্য সমস্ত প্রজাতির গরুর থেকে তাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে রেখেছে। একমাত্র দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের চিতোর জেলাতেই এই বিশেষ প্রজাতির গরুর সন্ধান পাওয়া যায়। আর এটিই বিশ্বের সবচেয়ে ছোট প্রজাতির গরু।

- Advertisement -

খুব বেশি হলেও পাঙ্গানুর প্রজাতির গরুর উচ্চতা আড়াই থেকে ৩ ফুটের বেশি হয় না। ওজন মাত্র ২৩০ থেকে ৪৫০ পাউন্ড বা ১০৫ থেকে ২০০ কিলোগ্রাম। এদের কপাল যথেষ্ট চওড়া। গায়ের রঙ সাদা, লাল বা ধূসর হয়ে থাকে। শিং দুটিও বেশ ছোট।

পাঙ্গানুর খর্বকায় প্রজাতির গরু হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত দুধ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এদের দুধের বৈশিষ্ট্যও কিন্তু অন্য সমস্ত গরুর দুধের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অন্য সমস্ত গরুর দুধে যেখানে ৩ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ ফ্যাট থাকে, এদের দুধে থাকে প্রায় ৮ শতাংশ ফ্যাট।

এছাড়াও এই প্রজাতির গরুর মূত্রে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ। শোনা যায়, স্থানীয় চাষিরা নাকি অনেক সময় ব্যাকটেরিয়া থেকে ফসলকে বাঁচাতে পাঙ্গানুর গরুর মূত্র স্প্রে করে থাকে।

তা সত্ত্বেও ধীরে ধীরে পাঙ্গানুর প্রজাতির গরু বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সমস্ত ভারতে এই গরুর সংখ্যা এখন হাজারেরও কম। অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের চিতোর জেলাতেই এদের সংখ্যা সর্বাধিক। গবেষণায় জানা গিয়েছে, চিতোর জেলার পাঙ্গানুর অঞ্চলেই নাকি এই প্রজাতির গরুর আদি বসতি। আর তাই এর নামও হয়েছে পাঙ্গানুর –এর নামানুসারে।

শোনা যায়, মকরসংক্রান্তিতে গরুকে ভোজন করালে শুভ ফল পাওয়া যায়। চলতি বছরের গোড়ার দিকের ওই দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে পাঙ্গানুর গরুর কয়েকটি ছবি সমাজ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়ে উঠেছিল। জানা যায়, ওই দিন প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর বাসভবনে নিজের হাতে পাঙ্গানুর গরুকে ভোজন করিয়ে দিন শুরু করেছিলেন। তারপর থেকেই এই বিশেষ প্রজাতির গরু সম্পর্কে জানতে বেশ আগ্রহ দেখাতে শুরু করে সাধারণ মানুষ।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর