Advertisement
সজয় পাল : কোনও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় বেশিদিন বিচরণ করলে দেখা দিতে পারে খাদ্যাভাব। প্রজননের জন্যেও চাই সুনির্দিষ্ট এবং নিরাপদ জায়গা। তাই কয়েক শ্রেণীর পাখি কিছু দিন অন্তর স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। এরা ‘পরিযায়ী পাখি’ নামে পরিচিত।
এই পরিযায়ী পাখিরা প্রতি বছর পৃথিবীর কোনও এক বা একাধিক দেশ বা অঞ্চল থেকে বিশ্বের অন্য কোনও দেশ বা অঞ্চলে চলে যায় কোনও একটি বিশেষ ঋতুতে। সেই ঋতুর শেষে তারা আবার ফিরে আসে নিজেদের পুরনো জায়গায়। উত্তর গোলার্ধের অধিকাংশ পরিযায়ী পাখি বসন্তকালে উত্তর দিকে উড়ে যায় অত্যধিক পোকামাকড় আর নতুন জন্ম নেওয়া উদ্ভিদ বা উদ্ভিদাংশ খাওয়ার লোভে। এই সময় তারা পরিযায়ী অঞ্চলে বংশবৃদ্ধিও ঘটায়। শীতকালে বা অন্য যে কোনও সময়ে খাবারের অভাব দেখা দিলে তারা আবার দক্ষিণে রওনা হয়।
নিকটস্থ স্থানগুলি বাদে বহু দূরের স্থানগুলিকে পরিযায়ীরা কীভাবে পথ চিনে যেতে পারে, তা এক অবাক করা বিষয়। পক্ষী বিজ্ঞানীদের দাবি, পাখিরা উপকূলরেখা, পাহাড়শ্রেণী, নদী, সূর্য, চাঁদ, তারা, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র ইত্যাদির মাধ্যমে পথ খুঁজে নেয়। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ পাখিরাই ঝাঁকের সামনের দিকে থেকে নতুনদের পথ চেনায়। বাংলায় পরিযায়ী পাখি বলতে অনেকে শুধু শীতকালে আসা হাঁসদের বোঝেন। কিন্তু খঞ্জনা, চটক, মাঠচড়াই, কসাই, গাংচিল এরাও পরিযায়ী।
পরিযায়ী পাখিরা কেউই কিন্তু ‘অতিথি পাখি’ নয়। সূক্ষ্ম গবেষণায় জানা গেছে, পরিযানের সময় যে দেশে তারা বিচরণ করে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেখানেই তারা ডিম পেড়ে সেই ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বের হওয়া পর্যন্ত বাস করে। বরং নিজের দেশে বাস করে স্বল্প সময়ের জন্যে। তাই তারাও জন্মসূত্রে আঞ্চলিক পাখি। তাদের ‘অতিথি পাখি’ না বলে শুধু ‘পরিযায়ী পাখি’ বলায় ভালো।
বর্তমানে সারা পৃথিবী জুড়ে পরিযায়ীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এর মূল কারণ হলেও চোরা শিকারিদের প্রভাব নেহাত কম নয়। তাই পরিযায়ী পাখিদের আবাস্থলকে নিরাপদ রাখা ও পাখিদের বিচরণস্থলকে সংরক্ষণে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রতি বছর ১০ ও ১১ মে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত হয়। তাদের সম্পর্কে বিশ্ব জুড়ে সচেতনতা বাড়াতে ২০০৬ সাল থেকে এই দিবস পালন করা শুরু হয়েছে।
Advertisement