Advertisement
অতীতের আদিম জনগোষ্ঠীর শিকার ধরতে ব্যবহার করা মুখোশ অনেক পরে রূপ পাই ছোটো ছেলে-মেয়েদের খেলনা সামগ্রীতে। বর্তমানে মুখোশ তৈরির সঙ্গে যুক্ত আছেন বীরভূম জেলার অসংখ্য মুখোশ শিল্পী। এরকমই এক মুখোশ শিল্পী শ্যামল মণ্ডলের পরিত্যক্ত ধাতব বস্তু দিয়ে তৈরি মুখোশ নিয়ে গত ২৪ জুলাই থেকে সৃজনীতে শুরু হয়েছে এক অভিনব কর্মশালা। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি
|
বিজয় ঘোষাল : ‘মুখোশ’-এর আক্ষরিক অর্থ ‘মুখাবরণ’ বা ‘ছদ্মমুখ’। আবার মুখোশ বললে নকল বেশধারীকেও ঝোঝায়। মুখোশের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় কোনও ব্যক্তির বাহ্যিক প্রকাশ। অতীতে আদিম জনগোষ্ঠীর মানুষেরা জঙ্গলে হিংস্র জীবজন্তুদের বোকা বানিয়ে শিকারের কাজ সহজ করার জন্য এই মুখোশের ব্যবহার সর্বপ্রথম শুরু করেছিল। বল্লম, তীর ও অন্যান্য অস্ত্র-সস্ত্রের মধ্যে মুখোশও ছিল তাদের অন্যতম শিকার সামগ্রী।
পরে এই মুখোশই হয়ে ওঠে ছোটো ছেলে-মেয়েদের খেলার অংশ। আজও গ্রাম-বাংলার কোনও অনুষ্ঠান বা মেলা প্রাঙ্গণে সেই ছোট্টরা তাদের বাবা-মায়ের কাছে বায়না করে রাম, সীতা, হনুমান, রাক্ষস বা ভূতের মুখোশ কিনে দেওয়ার জন্য। তাই মুখোশ শিল্প বরাবরই বাংলার পেশাগত লোকায়ত শিল্পে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করে আছে।
আবার এই মুখোশ শিল্পের প্রসঙ্গ উঠলেই সর্বপ্রথম নাম চলে আসে পুরুলিয়া জেলার। এই জেলার কাদামাটি, ছাচ, নরম কাগজ, সুতির কাপড়ে নির্মিত ছৌ-নাচের মুখোশ পৌঁছে গিয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।
তবে বীরভূম জেলাও মুখোশ শিল্পে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। এই জেলার কিছু অংশে আজও মুখোশ শিল্পের দেখা মেলে। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন জেলার অসংখ্য শিল্পী। এদের মধ্যে কেউ শখের বশে মুখোশ তৈরি করেন। কেউবা মুখোশ শিল্পকেই জীবন ও জীবিকার প্রধান মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছেন।
বীরভূমের মুখোশ শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম সিউড়ি অরবিন্দ পল্লীর বাসিন্দা শ্যামল কুমার মন্ডল। তিনি পরিত্যক্ত ধাতব বস্তু যেমন- টিনভাঙা, লোহালক্কড়ের টুকরো প্রভৃতি ব্যবহার করে সুনিপুণভাবে কারিগরী দক্ষতায় মুখোশ তৈরি করে থাকেন। এছাড়াও তিনি কাষ্ঠদ্রব্য দিয়েও মুখোশ তৈরি করেন।
সম্প্রতি শিল্পী শ্যামল মন্ডলের এই অবাঞ্ছিত ও পরিত্যক্ত ধাতব বস্তু সামগ্রী ব্যবহার করে মুখোশ তৈরির অসাধারণ শিল্পকর্ম জনসমক্ষে আনতে ও সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে একটি অভিনব কর্মশালার আয়োজন করল পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের শাখা, শান্তিনিকেতন সৃজনী শিল্পগ্রাম। কর্মশালা শুরু হয়েছে গত ২৪ জুলাই এবং তা চলবে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত। এই কয়েক দিনের কর্মশালায় শিল্পী শ্যামল মন্ডলের সঙ্গে সহযোগী শিল্পী হিসাবে রয়েছেন শান্তিনিকেতনের বানডাঙার শিল্পী প্রসেনজিৎ সাহা ও সিউড়ির লম্বোদরপুরের জিষুদেব চক্রবর্তী।
এই ধরনের কর্মশালায় অংশগ্রহণ করতে পেরে খুশি শ্যামল মন্ডল ও তার সহযোগী শিল্পীরা। শ্যামল মন্ডল জানালেন, শান্তিনিকেতনের সৃজনী যেভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করেছে, তাতে উৎসাহ পাবে অন্যান্য মুখোশ শিল্পীরাও।
সৃজনী শিল্পগ্রামের আধিকারিক অমিত অধিকারী জানালেন, “ফেলে দেওয়া এই সমস্ত পরিত্যক্ত ধাতব বস্তুর শিল্পের রূপ ভাবনা আমাদের অনেক দিনের। এই কর্মশালায় সেই অবাঞ্ছিত ধাতব বস্তু দিয়ে নির্মিত লোকশিল্প মুখোশ স্থান পেয়েছে, যা আগামী দিনে সৃজনী শিল্পগ্রামে দর্শকদের জন্য সংগ্রহ করা হবে। যাতে আবার এই লোকশিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটে”।
Advertisement