‘দি রাইউগিয়ং’ নামের বিলাসবহুল হোটেলটির নির্মাণ কাজ উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং-এ শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ সাল নাগাদ। তখন মনে করা হয়েছিল নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ২ বছর পর এটিতে উন্মুক্ত করা হবে। কিন্তু নির্মাণ শুরুর ১৬ বছর পরেও তৈরি হতে দেখা যায়নি এর কোনও জানালা। এখন হোটেলটিকে ঢেকে দেওয়া হয়েছে কাচ দিয়ে এবং সাজিয়ে তোলা হয়েছে রঙ-বেরঙের এলইডি লাইটে। – ছবি : সংগৃহীত |
অনালাইন পেপার : আধুনিক সভ্যতার এই বিশ্বে এমনও হোটেল রয়েছে, যাদের দিকে তাকালেই তাক লেগে যাওয়াটা স্বাভাবিক। বিলাসবহুল এই সমস্ত হোটেলগুলি শুধুমাত্র দেশ বা বিদেশের ধনী ব্যক্তিদের কথা মাথায় রেখেই নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে অর্থ মানেই ‘হাতের ময়লা’ বলে ধরা হয়। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের কোথাও না কোথাও এই রকম বিলাসবহুল হোটেল দেখতে পাওয়া যাবে। সচরাচর সিনেমাগুলিতেও এই সমস্ত হোটেলগুলির চিত্র তুলে ধরা হয়।
মূলত অর্থ উপার্জনের জন্যই এদেরকে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু যদি বলা হয়, ঈর্ষায় কাতর হয়েও কিছু হোটেল নির্মিত হয়েছে। এবং তা আজও চালু করা সম্ভব হয়নি। যেমন ধরা যাক, পাশের বাড়িওয়ালা সখ করে নিজের বসত বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আরও একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করে ফেললেন। এবং সেই বাড়িটিতে রঙ-বেরঙের মার্বেল বসিয়ে অথবা রাতের আধারে আরও মোহময় করতে চূড়ান্ত এলইডি-র ব্যবহার করলেন। তখন পাশের হিংসুটে প্রতিবেশীটির মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে। তিনিও তার দেখা-দেখি আরও উচু তিনতলা বাড়ি করতে শুরু করলেন। কিন্তু কোনও কারণে শেষমেশ বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ করতে পারলেন না।
এখানে ব্যাপারটা অনেকটা উত্তর কোরিয়ার মতোই। সিএনএন সংবাদ সংস্থার একটি রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ১৯৮৭ সালে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং-এ একটি হোটেল তৈরির কাজ শুরু হয়। ওই গগনচুম্বী বিলাসবহুল হোটেলটির নাম রাখা হয়েছে ‘দি রাইউগিয়ং’। কিন্তু ৩৩ বছর পরেও সেই হোটেল আজও উন্মুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
ওই রিপোর্ট থেকে আরও জানা যাচ্ছে, এই হোটেলটি মূলত উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ঈর্ষান্বিত হয়েই নির্মাণ করা শুরু হয়েছিল। ৮০-র দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ ছিল চরম। সেসময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়াকে এবং রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন যোগাত। দক্ষিণ কোরিয়া ওই সময়ে সিঙ্গাপুরে ‘দি ওয়েস্টিন স্টামফোর্ড’ নামে একটি হোটেল নির্মাণ করতেও সহযোগিতা করে। এছাড়াও আরও অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্লেষকদের ধারণা, হয়তো এই সমস্ত কাজে ঈর্ষান্বিত হয়েই উত্তর কোরিয়া ‘দি রাইউগিয়ং’ হোটেলটি নির্মাণ করতে শুরু করেছিল।
তখন মনে করা হয়েছিল, হোটেলটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ২ বছরের মধ্যেই চালু করা হবে এটিকে। ২ বছর পেরিয়ে গেলেও তার জানালা সহ আরও কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। প্রায় ১৬ বছর হোটেলটি পড়ে ছিল কোনও জানালা ছাড়ায়। পরে সম্পূর্ণ হোটেলটিকেই ঢেকে দেওয়া হয় কাচ দিয়ে এবং সাজিয়ে তোলা হয় এলইডি লাইটে। যাতে রাতের পরিবেশ অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠতে পারে। হোটেলটির উচ্চতা প্রায় ১ হাজার ফুট এবং ৩ হাজারেরও বেশি কক্ষ রয়েছে এখানে। কিন্তু এতদিন পরেও কেন হোটেলটি চালু হল না, তার উত্তর অবশ্য জানা যায়নি।