নিজের জমির ফসল বেচে ‘ত্রাণ’ দিলেন গ্রামবাসীদের

Advertisement
cko
জয়দেব দেবাংশী : লকডাউনে ঘরবন্দী দেশের প্রায় সমস্ত মানুষ। তাই উপার্জনও বন্ধ অধিকাংশের। দীর্ঘ লকডাউনে সঞ্চিত অর্থেও ইতিমধ্যে টান পড়তে শুরু করেছে অনেকের। দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষগুলির অবস্থা আরও সঙ্গিন। কাজ বন্ধ থাকায় অর্থের মুখ দর্শন হয়নি বহুদিন। যদিও প্রশাসনিকভাবে বা রেশন ব্যবস্থায় বিনামূল্যে খাদ্যদ্রব্য তুলে দেওয়া হয়েছে তাঁদের হাতে। কিন্তু অনেকক্ষেত্রে সেটাও যথেষ্ট হয়ে উঠছে না তাঁদের পক্ষে।
     হাট-বাজারের অবস্থাও খুব ভালো বলা যাবে না এই মুহূর্তে। সবজির মূল্য সাধ্যের মধ্যে থাকলেও, সংসারের আনুষঙ্গিক অন্যান্য অনেকগুলি দ্রব্যাদির আমদানি কম হওয়ায় তার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে যথেষ্ট। ফলে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেও চলে যাচ্ছে ওই সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলি।
     এই অবস্থায় সমাজের কিছু মানুষ এগিয়ে এসেছেন অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়াতে। নিজের সাধ্য মতো সাহায্য করে চলেছেন নিরলসভাবে। বীরভূম জেলার অমরপুর গ্রামপঞ্চায়েতের পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় চাষি মনির উদ্দিন চৌধুরী এদিন যেমন ত্রাতা হয়ে দাঁড়ালেন তাঁর গ্রামবাসীদের পাশে। নিজের জমির ফসল বেচে সেই টাকায় চাল-ডাল কিনে বিলি করলেন গ্রামবাসীদের মধ্যে।
     গত ৩০ এপ্রিল সম্পূর্ণ এককভাবে মনির উদ্দিন ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সমস্ত সম্প্রদায়ের ২৫৫টি পরিবারের হাতে উঠিয়ে দিলেন নিজের ত্রাণ। এদিনের তাঁর ত্রাণে ছিল পরিবার পিছু ৫ কেজি চাল, ৫০০ গ্রাম ডাল, ৫০০ গ্রাম সরিষার তেল, ১ প্যাকেট সয়াবিন, ১টি সাবান, ১টি মাক্স।
     মনির উদ্দিন জানালেন, করোনার আতঙ্কে সমগ্র দেশ এখন স্তব্ধ। দেশ জুড়ে লকডাউন চলায় মানুষ এই মুহূর্তে গৃহবন্দী। তাঁর নিজের জন্মভূমি এলাকার দাসপাড়া, মালপাড়া, বাগদীপাড়া, বাউড়িপাড়া সহ অন্য পাড়াগুলির অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র। তাঁদের কিছু সংখ্যকের উপার্জন এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। অনেকের সঞ্চিত অর্থেও ইতিমধ্যে টান পড়তে শুরু করেছে। সমস্যা বেড়েছে নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষদের। এই মানুষদের অনেকই মুখ লজ্জার কারণে সংসারে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও কোনও কিছু চাইতে পারেন না। তিনি চেয়েছেন এই পরিস্থিতিতে মানুষদের পাশে যথা সম্ভব দাঁড়াতে। শুধু নিম্ন মধ্যবিত্ত নয়, সমস্ত গ্রামবাসীর পাশেই তিনি দাঁড়াতে চান।
     তিনি আরও জানালেন, নিঃস্বার্থভাবে নিজের জমির ফসল বেচে এই ত্রাণের ব্যবস্থা তিনি করেছেন। ভবিষ্যতে প্রয়োজন পড়লে নিজের জমি বেচে সেই অর্থও তিনি দান করতে চান। এছাড়াও তিনি বললেন, নিজের এলাকার মানুষকে ত্রাণ দিয়ে এই মহৎ কর্ম তিনি শুরু করেছেন, আগামীতে পঞ্চায়েত এলাকার পাশাপাশি ব্লক এলাকাগুলিতেও তাঁর এই ত্রাণ পৌঁছে দিতে চান তিনি।
Advertisement
Previous articleলকডাউনে ই-লার্নিং শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য ডেকে আনবে না তো?
Next articleবাবা সাহেবের সঙ্গে ভারতীয় শ্রমিকদের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত নিবিড়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here