৩০ জুন সমগ্র সাঁওতাল তথা আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৮৫৫ সালের এই দিনে শুরু হয়েছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ বা হুল বিদ্রোহ। দিনটি প্রতি বছরই বিভিন্ন এলাকার ক্লাব বা সংগঠনগুলিতে বিশেষ মর্যাদায় পালন করা হয়। এবছর ছিল ১৬৬তম হুল দিবস। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি |
জনদর্পণ ডেস্ক : ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন ছিল ভারতীয় ইতিহাসের এক অন্যতম স্মরণীয় দিন। দিনটি স্মরণীয় হয়ে রয়েছে ‘হুল মাহা’ বা ‘হুল দিবস’-এর জন্য। ওই দিন সিধু-কানহুর নেতৃত্বে সাঁওতাল বিদ্রোহ বা হুল বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। তাঁদের নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য সাঁওতাল তথা আদিবাসী দলে দলে যোগদান করতে এগিয়ে আসে। তাঁদের আন্দোলন ছিল মূলত স্বাধীনতার এবং অধিকার আদায়ের। বলা যেতে পারে, ১৮৫৫ সালের ৩০ জুনে সংগঠিত হওয়া সেই সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল পরাধীন ভারতের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন।
তবে সেসময়ে এই বিদ্রোহ শুধুমাত্র উপজাতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই যে সীমাবদ্ধ ছিল, তা কিন্তু নয়। অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদেরকেও এই বিদ্রোহে সালিম হতে দেখা গিয়েছিল। অন্য সম্প্রদায়ের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরাও বুঝতে পেরেছিল, শোষকদের কোনও জাত হয় না। তাই শোষকদের উৎখাত করতেই হবে।
১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সিধু, কানহু, চাঁদ, ভৈরবের নেতৃত্বে বিহারের ভগনাডিহির মাঠে প্রায় ১০ হাজার মানুষের সমাবেশ ঘটে। বিভিন্ন এলাকা, এমনকি দূর-দূরান্ত থেকেও এই সমাবেশে যোগ দিতে দলে দলে মানুষ এগিয়ে আসে। ওই দিনের সমাবেশে উঠে আসে একাধিক চরম সিদ্ধান্ত। তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় ইংরেজ, সুদখোর, জমিদার, জোতদার, মহজনদের উৎখাত করতেই হবে। তাঁদের সেই বিদ্রোহের আঁচ আছড়ে পড়ে সমগ্র ভারতবর্ষের অধিকাংশ অঞ্চলগুলিতে। এমনকি কেঁপে ওঠে তৎকালীন ইংরেজ সরকারের পায়ের নিচের মাটিও।
যদিও সেদিনের সাঁওতাল বিদ্রোহ বা হুল বিদ্রোহ সম্পূর্ণ সফল হতে পারেনি। শহিদ হতে হয় সিদু-কানহু-কে। কিন্তু অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই, এই বিদ্রোহ-ই ইন্ধন জুগিয়েছিল পরবর্তী সময়ের ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে।
সেই হিসাবে এই দিনটি সমগ্র সাঁওতাল তথা আদিবাসীদের কাছে খুবই গৌরবের ও দুঃখের। প্রতি বছরই দিনটিকে বিভিন্ন এলাকায় ক্লাব বা সংগঠনগুলিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। এবছর ছিল ১৬৬তম হুল দিবস। ৩০ জুন অন্য অঞ্চলগুলির মতো সাঁইথিয়া ব্লকের অন্তর্গত আমোদপুর নওয়া গ্রামেও বিশেষভাবে দিনটি পালন করা হয়েছে। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাঁইথিয়া ব্লকের যুগ্ম সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক বংশীবদন মু্র্মু।
এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত শিক্ষক সুভাষচন্দ্র মু্র্মু জানালেন, তাঁরা ৩০ জুন-এর গুরুত্ব কী? কেন পালন করা হয়? এবং সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাসের অনেকটাই অনুষ্ঠানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তবে করোনা সংক্রমণের এই সময়ে সমগ্র অনুষ্ঠানটিই হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।