Advertisement
জনদর্পণ ডেস্ক : সমগ্র দেশ জুড়ে এখন ‘লকডাউন’ চলছে। কোভিড–১৯ করোনা সংক্রমণ আটকাতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এই ‘লকডাউন’। কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার উভয়ই বারবার দেশবাসীকে ঘরের বাইরে বেরোতে নিষেধ করছে। তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই পরিস্থিতিতেও বাইরে বেরিয়ে পড়ছে। যদিও প্রশাসন তা যথেষ্ট শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এত কিছুর পরেও ভারতে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর থেকে রক্ষা পাওয়া আদৌ কী সম্ভব? উত্তর অবশ্যই ‘হ্যাঁ’-এর দিকে ঝুঁকছে। এব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কিন্তু পুরোপুরি আস্থা রাখছে ভারতের ওপরই। এমনকি ‘হু’ এও বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, করোনা মোকাবিলায় একমাত্র ভারতই পারে সমগ্র পৃথিবীকে পথ দেখাতে।
‘হু’-এর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর মাইকেল জে রায়ানের ধারণা, এক সময়ে ভারত গোটা বিশ্বকে গুটি বসন্ত আর পোলিও মুক্ত করতে পথ দেখিয়েছিল। এই দু’টি সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে ভারতের। তিনি এরই সঙ্গে আশা করছেন, করোনা থেকেও মুক্তির পথ বাতলাতে পারবে ভারত।
ভারত বিচিত্র ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিয়ে ধৈর্য সহকারে টিকে থাকা একটি দেশ। বিভিন্ন সময়ে বহু ভয়ঙ্কর ঝড়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। অতীতের একটা সময়ে কলেরায় উজার হয়ে যেত গ্রামের পর গ্রাম। মৃতদেহ দাহন করার জন্যেও কাউকে সঙ্গ পাওয়া যেত না। এই দেশ গুটি বসন্ত আর পোলিওর সঙ্গেও সংগ্রাম করেছে এক সময়ে। বর্তমানে এই দু’টি সংক্রমণ এই দেশ থেকে এখন প্রায় হারিয়েই গিয়েছে বলা চলে। করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রেও এমনটি যে হবে, এটা বিশ্বাসও করতে শুরু করেছে অনেক বিশেষজ্ঞ।
অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে একজন মানুষ ওপর জনের খুব কাছাকাছি বসবাস করতে পছন্দ করে। তাই এই দেশের কোনও প্রান্তে একবার কোনওভাবে মহামারি প্রবেশ করলে, খুব দ্রুত গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠাটাই স্বাভাবিক। সেই সঙ্গে ভারত এমনই এক বৈচিত্র্যময় দেশ, যে দেশে প্রায় প্রতিদিনই কয়েক হাজার বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে। প্রবেশের পরই সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় তাদের। এই বিদেশি পর্যটকদের মাধ্যমেও যদি কোনও মহামারি এদেশে প্রবেশ করে, তাও দ্রুত গোটা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আর যদি তেমনটি ঘটে, তার ফল কি হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
কিন্তু করোনা দেশ জুড়ে কিছুটা ছড়িয়ে পড়লেও এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। তার অন্যতম কারণ কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকারগুলির তীক্ষ্ণ সতর্কতা। দেশের বাইরে করোনা দ্রুত গতিতে পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার দিকে সব সময়ই নজর রেখে গিয়েছে ভারত সরকার। কোনও ভাবেই যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য অনেক আগে থেকেই নিতে শুরু করেছিল একাধিক ব্যবস্থা। অনেক আগে থেকেই দেশের বড়ো বড়ো উৎসব বা জনসমাগমে লাগাম টানতে শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু কোথাও হয়তো কোনও ফাঁক থেকে গিয়েছিল। সেই ফাঁক গলেই করোনা প্রথম আঘাত হানে কেরলে।
কিন্তু সমস্ত দায়িত্ব শুধুমাত্র সরকারের ওপর ছেড়ে দিলেই কি নিশ্চিত হওয়া যায়? এটা সার্বভৌম গণতান্ত্রিক দেশ। শুধু করোনা কেন, যে কোনও শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে দেশের জনসাধারণকেই এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে সাহায্য করতে। দেশের স্বার্থে ও জনগণের হিতাকাঙ্ক্ষে সরকার যে নির্দেশনামা পেশ করবে তা অনুসরণ করাটাই হবে দেশের ও নিজের জন্য মঙ্গলকর।
ইতিমধ্যে ভারত ‘লকডাউন’-এর ফলও পেতে শুরু করেছে খুব ভালোই। আক্রান্তের সংখ্যা অনুযায়ী এখনও দ্বিতীয় পর্যায়েই আটকে রয়েছে করোনা। যদিও প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারা যাবে, অন্য দেশগুলিতে যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সে তুলনায় ভারতে যথেষ্ট কম। এমনকি এখনও পর্যন্ত (২৫ মার্চ রাত ১০টা) আক্রান্তদের মধ্যে ৪৩ জন সুস্থও হয়ে উঠেছে। যা যথেষ্ট ইতিবাচক।
ভারতের ‘করোনা-গ্রাফ’ :
তারিখ
|
আক্রান্ত
|
মৃত্যু
|
২০ মার্চ পর্যন্ত
|
২৯৪
|
৪
|
২১.০৩.২০২০
|
৫৯
|
২
|
২২.০৩.২০২০
|
১০৮
|
২
|
২৩.০৩.২০২০
|
৩৮
|
২
|
২৪.০৩.২০২০
|
৩৭
|
১
|
২৫.০৩.২০২০
|
৭০
|
০
|
মোট আক্রান্ত
|
৬০৬
|
১১
|
করোনা আপডেট :
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত) বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৫২ হাজার ২৪১ জন। তার মধ্যে মারা গিয়েছে ২০ হাজার ৪৯৫ জন। ইতিমধ্যে মৃতের সংখ্যা অনুযায়ী স্পেন চিনকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা অনুযায়ী প্রথম ৫টি দেশ যথাক্রমে – চিন (৮১ হাজার ২১৮ জন), ইতালি (৭৪ হাজার ৩৮৬ জন), আমেরিকা (৬০ হাজার ৬৫৩ জন), স্পেন (৪৭ হাজার ৬১০ জন) ও জার্মানি (৩৫ হাজার ৭৪০ জন)। মৃতের সংখ্যা অনুযায়ী প্রথম ৫টি দেশ যথাক্রমে – ইতালি (৭ হাজার ৫০৩ জন), স্পেন (৩ হাজার ৪৩৪ জন), চিন (৩ হাজার ২৮১ জন), ইরান (২ হাজার ৭৭ জন) ও ফ্রান্স (১ হাজার ১০০ জন)।
তবে এত কিছুর পরে ইতিবাচক খবরও রয়েছে। ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্তদের ১ লক্ষ ১৩ হাজার ১২১ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে। (সূত্র : ওয়ার্ল্ডোমিটার)
- All Rights Reserved
Advertisement