Advertisement
রঞ্জন সরকার ও চিরন্তন দাস : করোনা ভাইরাস আতঙ্কে এ বছরের জন্য স্থগিত হয়ে যায় বোলপুর–শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব। প্রতি বছরই বসন্তের রঙিন আবিরে নিজেকে ও সেই সঙ্গে অন্যদের রাঙাতে লক্ষাধিক বহিরাগতের আগমন ঘটে এখানে। ‘অত্যধিক লোকসমাগম করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে’, মূলত একথা মাথায় রেখেই বসন্ত উৎসব স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বভারতীর।
বোলপুর ৮ নম্বর ওয়ার্ড :কিন্তু তাতে কি! উৎসবে এতটুকু ভাঁটা পড়েনি বোলপুরে। অন্তত সে রকমই মনে হল বোলপুর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৯ মার্চ বসন্ত উৎসবে নজর রেখে। লক্ষাধিক না হোক, কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছে এখানে। বলতে গেলে, সমস্ত বোলপুর–শান্তিনিকেতন অঞ্চলের আপামর জনতা নিজেকে আবির রঙে রাঙাতে সামিল হন এই‘এক টুকরো শান্তিনিকেতন’-এ। এখানকার উৎসবও হয়েছে অনেকটা শান্তিনিকেতনী ঢঙে। নাচ, গান, আবৃত্তিতে বসন্তের সকাল উপস্থিত সকলকেই মোহিত করে রাখে ওই ওয়ার্ডের ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েরা। তাদের সকলের পরনেও ছিল শান্তিনিকেতনী কায়দায় হলুদ পাঞ্জাবি বা শাড়ি। তারা অনুষ্ঠানের শুরুতে ওয়ার্ডের মনোমুগ্ধকর আল্পনা অঙ্কিত পথে ‘খোল দ্বার খোল’ রবীন্দ্র সঙ্গীতের সঙ্গে নৃত্য করতে করতে মূল অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠে আসে। যা দেখে মনে হতেই হবে, এ সত্যিই যেন এক ‘ছোট্ট শান্তিনিকেতন’।
মূল উৎসবের আয়োজন হয় ওই ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্র শিক্ষা নিকেতন প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর শেখ নিজে উদ্যোগ নিয়ে এই উৎসবের সমস্ত রকম ব্যবস্থা করেন। এছাড়া তিনি নিজে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানও পরিচালনা করেন।
বাহিরী গ্রাম : প্রায় একমাস ধরে নিয়মিত মহড়া চলছিল বসন্ত উৎসবের। এলাকার ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েদের এই মহড়ায় অংশগ্রহণ করতে দেখা গিয়েছিল। ‘বাহিরী বসন্ত উৎসব কমিটি’ দাবি করেছিল, তাদের এই উৎসব হবে অনেকটা শান্তিনিকেতনের আদলে। আর হলও তাই। বসন্ত উৎসবের সকালে এও যেন বদলে গেল ‘এক টুকরো ছোট্ট শান্তিনিকেতন’-এ।
বোলপুর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বের এই বাহিরী গ্রাম ৮ মার্চ বিকাল থেকেই উৎসবে মেতে ওঠে। নাচ, গানে মুগ্ধ করে রাখে বাহিরীর গ্রামীণ পরিবেশ। ৯ মার্চ অর্থাৎ দোলের দিন সকাল ৭টায় অনুষ্ঠানের শুরু হয় প্রভাত ফেরীর মধ্য দিয়ে। প্রভাত ফেরীতে অংশগ্রহণ করেন প্রায় ৩০০ জনেরও বেশি গ্রামবাসী। শুধু বাহিরী নয়, পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি থেকেও কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে আসেন এখানে।
প্রভাত ফেরীর পরই শুরু হয় উৎসবের মূল অনুষ্ঠান। বাহিরী ব্রজসুন্দরী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হওয়া এই অনুষ্ঠান চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। এখানেও শান্তিনিকেতনী ঢঙে ছেলে-মেয়েরা হলুদ পাঞ্জাবি বা শাড়ি পরে অনুষ্ঠান মঞ্চে অংশগ্রহণ করে। রবীন্দ্র সঙ্গীতের তালে তালে চলে নৃত্য। তারপর উপস্থিত সকলেই আবীর বিলি করা হয়।
এসময় অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাহিরী-পাঁচশোয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শুভঙ্কর সাধু। তিনি জানালেন, প্রথমবারের জন্য অনুষ্ঠিত হওয়া বাহিরীর এই বসন্ত উৎসব যথেষ্ট দৃষ্টি নন্দন হয়েছে। আগামীতে এই উৎসব আরও বড়ো হবে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানালেন, তাঁর ইচ্ছা বাহিরীর পাশাপাশি আগামী বছরে পাঁচশোয়া অজয় বেল্টে আরও একটি বসন্ত উৎসব শুরু করার। তার জন্য সমস্ত রকম সাহায্য তিনি করতে প্রস্তুত।
Advertisement