Advertisement
প্রদীপ ভট্টাচার্য : দিল্লি হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি এস মুরলীধর প্রশ্ন তুললেন, “সম্পূর্ণ শহর ছাই হইলে তবে এফআইআর করা হইবে কি?” দিল্লি পুলিশের নীরবতায়এই তিরস্কার রাজা কেন নীরবে মেনে নেবেন? গভীর রাতে রাজার আদেশ দিল্লি ছাড়ো, বিচারপতি বদলি হলেন মুহূর্তের মধ্যে।
দেশটির গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্র আজ ধর্ষিত হচ্ছে। শাসকের বিকৃত হিংসা তাকে বারবার বিবস্ত্র করছে। গুমরে কাঁদছে আম্বেদকরদের সংবিধান। যে বিপুল সংখ্যক মানুষ একদিন ধর্মীয় রাষ্ট্রের প্রলোভন, প্ররোচনা অনায়াসে উপেক্ষা করে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে নিরাপদ ভবিষ্যৎ মনে করেছিল১৯৪৭-এর সুখ-দুঃখের মিশ্র রাগে। আজ তাঁরাই অসহায়ের মতো দেখলেন তাঁদের এতদিনের জীবন–জীবিকা নিমেষের মধ্যে পুড়ে খাক হয়ে যেতে ক্ষমতার লেলিহান শিখায়।
![]() |
ছবি সংগৃহীত |
আগুনে পুড়ছে দেশের রাজধানী, দেশের চতুর্দিকে পুড়ছে পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্পর্ক, দেশের সংবিধান, ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক সব উপাদান – সমস্ত কিছুই। ধর্মনিরপেক্ষতা আজ যেন এক অসহায় শব্দমাত্র। দেশের এক বিশাল সংখ্যক মানুষকে “তোমরা অবনাগরিক” বোঝাতে মাঠে নামছে “গৈরিক বাহিনী” আর রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা বাহিনীর “বৃহন্নলা”। কি অদ্ভুত সমাপতন, এই দিনই আমেরিকা থেকে শাসকের “প্রভু” পদধূলি দিতে দেশে এসে হাজির হয়েছেন। তার মুখনিঃসৃত বানী, “আমেরিকা ফর হোয়াইট আমেরিকানস” অক্ষরে অক্ষরে মেনে পোষ্য তার আদর্শের “হিন্দুত্বই হিন্দুস্থান”-কে প্রকাশ্য এজেণ্ডা হিসাবে বাজারে এনেছে। এ যেন এক ঢিলে অনেক পাখি শিকার। বেরোজগারি ভুলে যাও, সরকারের সম্পত্তি জলের দরে স্পনসর আম্বানি-আদানিদের মৃগয়াক্ষেত্র করা ভুলে যাও, লাগামছাড়া দাম ভুলে যাও, হাজার হাজার কৃষকের আত্মহনন ভুলে যাও, মেরুকরণের সফল ব্র্যাণ্ডিং হোক। ততদিন না হয় কিছু মোমবাতি কেঁদে খাক হোক।
কিন্তু ওহে হিটলার-হিমলার-গোয়েবলসদের ভারতীয় সংস্করণ। এদেশের নাম “ভারতবর্ষ”। আজও এখানে আধপোড়া ধর্মগ্রন্থ জীবন বিপন্ন করে কুড়িয়ে আলাদা করে যত্ন করে রাখে অন্য ধর্মের ধর্মপ্রাণ মানুষ। ধর্ম নয়, মানুষ আশ্রয় পায় মানুষের কাছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী নির্বিকল্প সমাধিতে “গদিসুরক্ষা প্রকল্প”-এ, গৃহরক্ষার মহামাত্য চুপচাপ “বিধর্মী পোড়াও” কর্মসূচিতে মদত দিয়ে যায় নেকড়ে বাহিনীকে। “আমার এখানে কিছু হয়নি”মার্কা নিরপেক্ষতা আসলে লেনদেনের গোপন বোঝাপড়া ইত্যাদিই শেষ কথা নয় বুঝিয়ে দিচ্ছে আক্রান্ত মানুষ।
দিল্লি আজ এক রাষ্ট্রীয় লজ্জা। তবে এই দিল্লিই এক মানবিক শ্লাঘা, যা শেখায় রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে মানুষ এখনও দাঁড়ায় মানুষেরই পাশে।
লেখক সাহিত্য অনুরাগী, বোলপুর-শান্তিনিকেতন
(মত প্রকাশ সম্পূর্ণ নিজস্ব)
Advertisement