Friday, June 20, 2025

দিনা সানিচার : যাঁর জীবন থেকে নেওয়া হয়েছে মোগলি চরিত্র

- Advertisement -

আশ্রম থেকে তাঁর একটি নামও দেওয়া হয়, দিনা সানিচার। নামটি উর্দু ভাষা থেকে নেওয়া। উর্দুতে সানিচার কথার অর্থ শনিবার। সম্ভবত শনিবারেই দিনা সানিচার এই আশ্রমের বাসিন্দা হয়েছিলেন। তবে দুঃখের বিষয় দিনা সানিচার কোনও দিনও সভ্য মানুষের মতো নিজেকে তৈরি করতে পারেনি।

দিনা সানিচার

জনদর্পণ ডেস্ক : ছোটবেলায় মোগলির সঙ্গে পরিচয় হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কারণ গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রুডইয়ার্ড কিপ্লিং-এর ‘দ্য জাঙ্গল বুক’ জনপ্রিয়তার শীর্ষে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বইটির হিরো অর্থাৎ ‘মোগলি’ ততদিনে যে কোনও মানুষের ছোটবেলার আইডলে পরিণত হতে পেরেছে।

পরবর্তীকালে দ্য জাঙ্গল বুক থেকে নেওয়া গল্পগুলিকে সাজিয়ে তৈরি হয়েছে একাধিক ধারাবাহিক কার্টুন। শিশুদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পরিচয় এই সময় থেকেই। আরও পরে তৈরি হয়েছে পূর্ণ দৈর্ঘ্যের একাধিক হলিউড মুভি।

দ্য জাঙ্গল বুক (১৮৯৪)-এ ভারতীয় ব্রিটিশ লেখক রুডইয়ার্ড কিপ্লিং অত্যন্ত অদ্ভুতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নেকড়ে দলের সঙ্গে বেড়ে ওঠা একটি বন্য শিশুর চরিত্রকে। যার নাম দেওয়া হয়েছে মোগলি। মোগলি সেখানে নেকড়ের পালের সঙ্গে বিচরণ করতে করতে সময় কাটাচ্ছে ভালুক (ভাল্লু), কালো চিতা (বাঘিরা)-র সঙ্গে। তারপর জঙ্গলের রাজা বাঘের সঙ্গে লড়াই করে বারবার নিজের জীবন বাঁচিয়ে চলেছে। রুডইয়ার্ড কিপ্লিং এখানে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে জঙ্গলের চরিত্রগুলির সঙ্গে একটি মানব শিশুর মেলবন্ধন ঘটিয়ে আশ্চর্য এক চিত্র তুলে ধরেছেন তাঁর দ্য জাঙ্গল বুক বইটিতে।

নেকড়ে, ভালুক, বাঘ বা কালো চিতা এরা জঙ্গলের অতি স্বাভাবিক এক একটি চরিত্র। যদিও প্রত্যেকেই ব্যস্ত তাদের নিজস্ব জীবন চর্চা বা জগত নিয়ে। এদের মধ্যে একটি মানব শিশুকে প্রবেশ করানো অতি অস্বাভাবিক একটি বিষয়। মানুষের স্বাভাবিক জ্ঞানাঙ্গে এই বিষয়টি কোনওভাবেই ধারণ করা সম্ভব নয়।

- Advertisement -

কিন্তু এই জগতে অস্বাভাবিক বলেও তেমন কিছু প্রায় নেই। অন্তত ১৮৬৭ সাল নাগাদ একটি ঘটনায় তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলার একটি পাহাড়ি জঙ্গলে একদল শিকারি শিকারে বেরিয়েছিলেন। হঠাৎ তাদের নজরে আসে একদল নেকড়ের সঙ্গে চারপায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে একটি ৫-৬ বছরের মানব শিশু। শিকারির দল ব্যাপারটি ভাল করে বোঝার আগেই বিপদের গন্ধ পেয়ে অন্য নেকড়ের সঙ্গে মানব শিশুটি পাহাড়ের গুহায় ঢুকে পড়ে।

Capture31
দিনা সানিচার

বাধ্য হয়ে শিকারির দলটি কয়েকটি নেকড়ে মেরে শিশুটির কাছে যেতে পারে। শিশুটি তখন নেকড়ের মতোই নিজের স্বভাব জানান দিচ্ছিল। সে কোনওরকম কথা বলতে পারছিল না। শুধু নেকড়েদের মতোই শব্দ করছিল বারবার।

তাঁরা তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যায়। সেখান থেকে স্থানীয়দের কাছে বহু চেষ্টা করেও তাঁর পরিচয় উদ্ধার করতে পারা যায়নি। পরে তাঁর আশ্রয় মেলে সেকুন্দরা অনাথ আশ্রমে। এবং এখানেই তাঁর বাকি জীবন অতিবাহিত হয়।

আশ্রম থেকে তাঁর একটি নামও দেওয়া হয়, দিনা সানিচার। নামটি উর্দু ভাষা থেকে নেওয়া। উর্দুতে সানিচার কথার অর্থ শনিবার। সম্ভবত শনিবারেই দিনা সানিচার এই আশ্রমের বাসিন্দা হয়েছিলেন।

তবে দুঃখের বিষয় দিনা সানিচার কোনও দিনও সভ্য মানুষের মতো নিজেকে তৈরি করতে পারেনি। সে আজীবন বন্য পশুদের মতোই, বিশেষ করে নেকড়েদের মতোই জীবনযাপনে অভ্যস্ত থেকে গিয়েছিল। নেকড়ের মতোই সে সবসময় কাঁচা মাংস খেতে পছন্দ করত। দুপায়ের বদলে চার পায়ে হাঁটতে ভালবাসত। আর মাঝে মধ্যেই নেকড়ের মতোই শব্দ করে ডেকে উঠত। মানুষের মতো কথা সে কোনও দিনও বলতে পারেনি। আবার মানুষের সান্নিধ্যও সে বিশেষ পছন্দ করত না। তাঁকে চেষ্টা করেও সভ্য সমাজের তেমন কিছু শেখানো সম্ভব হয়নি।

তবে সভ্য সমাজের পোশাক পরিধানকে সে গ্রহণ করতে পেরেছিল। আর গ্রহণ করতে পেরেছিল ধূমপানকে। সে অসম্ভব ধূমপায়ী ছিল। হয়তো তাই খুব কম সময়ের মধ্যেই সে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে ১৮৯৫ সাল নাগাদ দিনা সানিচার এই রোগের কারণে মারাও যায়।

এখানে দিনা সানিচার এর প্রথম জীবনের সঙ্গে দ্য জাঙ্গল বুক এর মোগলির অদ্ভুতরকম মিল লক্ষ করা যায়। তাই অনেকেই মনে করেন রুডইয়ার্ড কিপ্লিং হয়তো মোগলি চরিত্রটি দিনা সানিচার থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। হয়তো দিনা সানিচার এর মতো আরও অনেক ‘বন্য শিশু’ ছিল সে সময়ে। জঙ্গলে অন্য বন্য পশুদের সঙ্গে তাদের দেখাও পেয়েছে অনেকে। কিন্তু দ্য জাঙ্গল বুক এর মোগলির মতো নেকড়ের দলে মিশে থাকা দিনা সানিচার সে সময়ে একজনই ছিল। যদিও এ ব্যাপারে রুডইয়ার্ড কিপ্লিং কখনও কিছু বলেননি।

- Advertisement -

এই রকম আরও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

সাম্প্রতিক খবর