দাদাকে থ্যালাসেমিয়া থেকে মুক্ত করল দুই বছরের বোন, ভারতে এই প্রথম

Advertisement
ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে থ্যালাসেমিয়া রোগীর ক্ষেত্রে এই ধরণের চিকিৎসা পূর্বে আগে কখনও হয়নি। এই প্রথম এবং প্রথমবারেই সম্পূর্ণ সফল হয়েছেন চিকিৎসকেরা। আর কাভ্যিয়া প্রথম কোনও ভারতীয় ‘জীবন রক্ষাকারী ভাই বা বোন’-এর মর্যাদা পেল। তবে পৃথিবীর প্রথম ‘জীবন রক্ষাকারী ভাই বা বোন’ ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডাম ন্যাশ। ২০০০ সালে সে জন্ম নিয়েছিল তাঁর ৬ বছরের দিদিকে ‘ফ্যানকোনি এনিমিয়া’ রোগের হাত থেকে মুক্ত করতে।

দাদাকে থ্যালাসেমিয়া থেকে মুক্ত করল দুই বছরের বোন, ভারতে এই প্রথম
Image by andreas160578 from Pixabay

অনলাইন পেপার : পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, দাদা অভিজিৎকে থ্যালাসেমিয়া থেকে মুক্ত করতেই ২০১৮ সালের অক্টোবরে জন্ম নিয়েছিল বোন কাভ্যিয়া। তার জন্ম নেওয়া যে সফল হয়েছে, এবিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এক প্রকার নিশ্চিত এখন। গত মার্চ মাসেই কাভ্যিয়ার শরীর থেকে সংগৃহীত অস্থি-মজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল অভিজিতের শরীরে। চিকিৎসকদের দাবি, অভিজিৎ এখন সম্পূর্ণভাবে থ্যালাসেমিয়া মুক্ত।

আসলে ‘থ্যালাসেমিয়া’ এমন একটি রোগ, সোজা কথায় রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা ছাড়া যার অন্য কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। নেই কোনও ওষুধ বা ভ্যাকসিন। এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ মারাত্মক হারে কমে যায়। প্রয়োজন পরে নির্দিষ্ট দিন অন্তর নির্দিষ্ট মাত্রার হিমোগ্লোবিনের। যা কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা এখনও পর্যন্ত সম্ভব হয়ে ওঠেনি। রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে তাই রক্ত দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় থাকে না। সাধারণত প্রতি ২০-৩০ দিন অন্তর রক্তের যোগান রাখতে হয় থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য। ভারতে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এখন প্রায় ৪ কোটিরও বেশি।

তবে কীভাবে থ্যালাসেমিয়া থেকে মুক্তি পেল অভিজিৎ? বিবিসি সংবাদ মাধ্যমে এই বিষয়ে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখান থেকে জানা যাচ্ছে, গুজরাটের আহমেদাবাদের বাসিন্দা সাহদেভসিন সোলাঙ্কির পুত্র অভিজিতের বয়স যখন ১০ মাস তখন প্রথম জানতে পারা গিয়েছিল সে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তখন থেকেই ২০-২২ দিন অন্তর তাঁকে ৩৫০-৪০০ মিলিলিটার রক্ত দিতে হত। সাহদেভসিন এই সময় থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশুনা করতে শুরু করেন। পরে তিনি জেনেছিলেন অস্থি-মজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। ডাক্তারের সঙ্গেও এই বিষয়ে তিনি পরামর্শ করতে থাকেন।

কিন্তু তখনও পর্যন্ত পরিবারের কারও সঙ্গেই অভিজিতের অস্থি-মজ্জা মিলছিল না। তখন সাহদেভসিন ‘জীবন রক্ষাকারী ভাই বা বোন’-এর বিষয়টি জানতে পারেন। কাউকে নিজের ভাই বা বোনের শরীরে অঙ্গ, অস্থি-মজ্জা বা কোষ প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত করে জন্ম দেওয়াকে বিজ্ঞান তাকে ‘জীবন রক্ষাকারী ভাই বা বোন’ বলেছে। সাহদেভসিন এব্যাপারে ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ড. মনীষ বাঙ্কারের সাহায্য প্রার্থনা করেন।

এরপর ‘জীবন রক্ষাকারী ভাই বা বোন’-এর উপযুক্ত গুণ নিয়ে জন্ম হয় কাভ্যিয়ার। তাঁকে জন্ম দেওয়া হয়েছিল ‘প্রি-ইমপ্ল্যানটেশন জেনেটিক ডায়াগনোসিস’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। জন্মের ১৬-১৮ মাস পর অর্থাৎ গত মার্চ মাসে যখন তার ওজন ১০-১২ কেজি হয়ে ওঠে, তখনই দাদা অভিজিতের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় তাঁর অস্থি-মজ্জা। ৭ মাস পর অভিজিতের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেল, তাঁর রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ এখন রয়েছে প্রায় ১১-এর উপর এবং সে এখন সম্পূর্ণ থ্যালাসেমিয়া মুক্ত ও সুস্থ। তাঁর বোন কাভ্যিয়াও এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।

ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে থ্যালাসেমিয়া রোগীর ক্ষেত্রে এই ধরণের চিকিৎসা পূর্বে আগে কখনও হয়নি। এই প্রথম এবং প্রথমবারেই সম্পূর্ণ সফল হয়েছেন চিকিৎসকেরা। আর কাভ্যিয়া প্রথম কোনও ভারতীয় ‘জীবন রক্ষাকারী ভাই বা বোন’-এর মর্যাদা পেল। তবে পৃথিবীর প্রথম ‘জীবন রক্ষাকারী ভাই বা বোন’ ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডাম ন্যাশ। ২০০০ সালে সে জন্ম নিয়েছিল তার ৬ বছরের দিদিকে ‘ফ্যানকোনি এনিমিয়া’ রোগের হাত থেকে মুক্ত করতে।

Advertisement
Previous articleবর্ধমানে মিলল বিরল প্রজাতির হলুদ কচ্ছপ, ভারতে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার
Next article১৫০ বছর ধরে অনেকটা ব্যতিক্রমী ঢঙেই লক্ষ্মী পুজো হয় চিরুলিয়ায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here