দফায় দফায় বৃষ্টিতে অফুরন্ত ক্ষতি ফসলের, বাজারে সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া

Advertisement

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে চাষের ক্ষেতগুলি ডুবে গিয়েছে জলে। গাছের গোড়ায় জল জমে নষ্ট হতে শুরু করেছে ফসল। ইতিমধ্যে পটল, বেগুন, ঝিঙে, লঙ্কার গাছগুলিতে পচন ধরতে শুরু করেছে। আর তাই বাজারেও সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া। অনেক চাষি ফসল ফলান ধার-দেনা করে। ফসল নষ্ট হওয়ায় তাঁদের দুশ্চিন্তা এখন সেই ধার শোধ করবেন কিভাবে। – ছবি : রঞ্জন সরকার

endless crop damage due to intermittent rains price of vegetables is much higher

নারায়ণ চন্দ্র দাস : চাষের ক্ষেত্রে জলের প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত জল বিপরীত সংকেত বয়ে আনতে পারে। আর সেটাই হল এবার। টানা গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে চাষের ক্ষেতগুলি জলে থৈ থৈ করছে এখন। আর সেই জমা জলে মরে যাচ্ছে একের পর এক গাছ। নষ্ট হচ্ছে ফসল। অতি বৃষ্টির জল পেয়ে ইতিমধ্যেই পচন ধরতে শুরু করেছে পটল, বেগুন, ঝিঙে, শসা, লঙ্কার গাছগুলি।

     চাষের এই অবস্থার প্রভাব পড়ছে এবার সবজির বাজারেও। পূর্ব থেকে এমনিতেই এবছর সবজির দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া। গত ক’দিনের বৃষ্টিতে সেই দাম আরও বেড়ে গিয়েছে এবার। বীরভূম জেলার বোলপুরের বাজারে যেখানে কয়েকদিন আগেই পটল বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৩৫-৪০ টাকায়। এখন সেই পটলের দাম এক ধাক্কায় বেড়ে হয়েছে ৬০-৭০ টাকা প্রতি কেজি দরে। শুধু পটল নয়, অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রেও এই দাম বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমান বোলপুর বাজারে বেগুন ৬০-৭০ টাকা প্রতি কেজি, কাঁচা লঙ্কা ১৫০-২০০ টাকা প্রতি কেজি, ঝিঙে ৪০-৫০ টাকা প্রতি কেজি, কাঁচা কলা ৪-৫ টাকা প্রতিটি, টমেটো ৮০-১০০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

     বোলপুর শহরের সবজি বাজারগুলিতে অধিকাংশ সবজির আমদানি হয় অজয় নদের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি বিশেষ করে বেজরা, সিঙ্গি, পাঁচশোয়া, সাহেবডাঙা, শিমুলিয়া, ইটণ্ডা, কেন্দ্রডাঙাল, বেরগ্রাম, ধান্যসরা প্রভৃতি থেকে। এই অঞ্চলের চাষিরা জানাচ্ছেন, টানা বৃষ্টিতে তাঁদের বেশিরভাগ চাষের জমিতে জল জমে গিয়েছে। ফলে গাছ মরে ফসলের ক্ষতি হয়েছে বেশ অনেকটাই। সেই সঙ্গে রোগ পোকার উপদ্রবও বেড়েছে ইদানিং। ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনও লাভ হচ্ছে না। ধুরে যাচ্ছে বৃষ্টির জলে।

     আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গেল, গত ৩ দিনে এই অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৬৯.২ মিলিমিটার। কৃষি দফতর জানাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ফসলের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। ফসল বিক্রির এই সময়ে চাষিরা লাভের মুখ দেখে থাকেন। কিন্তু এই ক’দিনের অতি বৃষ্টি চাষিদের ‘পাকা ধানে মই’ দিয়ে গেল বলা চলে।

     বোলপুরের পার্শ্ববর্তী গ্রাম ছোটো শিমুলিয়ার চাষি বিশ্বনাথ রায় জানালেন, এবছর তিনি তাঁর চাষের জমির ১০ কাটায় লাউ, ১ বিঘায় পটল, ১০ কাটায় কেন্দুলি ফলিয়েছিলেন। কিন্তু ফসল তোলার মুখে এই অতি বৃষ্টি সব যেন মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে গেল। তাঁর লাভের ফসল এখন প্রায় নষ্ট হওয়ার মুখে। তিনি আরও জানালেন, এমনিতেই তিনি চাষ করেন ধারের টাকায়। সেই ধার এখন কিভাবে মেটাবেন, সেটাই দিন-রাত ভাবাচ্ছে তাঁকে। করোনা আবহে এদিকে বাজারের অবস্থা সঙ্গিন। যে কোনও জিনিষের দাম আকাশ ছোঁয়া। দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে।

Advertisement
Previous articleএ যেন কল্পকাহিনীর সেই ‘এলডোরাডো’, বাস্তবে ভেসে চলেছে মহাকাশে
Next articleএই ১০ জন উইকেট কিপারকে আজীবন মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here