থানকুনি, চেনা গাছের অজানা কথা

Advertisement

অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠা চির পরিচিত থানকুনি পাতার গুরুত্ব অপরিসীম। আয়ুর্বেদিক মতে এই গাছের ঔষধিগুণ অসীম। বহুতল বাড়ির টবেও থানকুনির চাষ করা যেতে পারে। খুব যত্নেরও প্রয়োজন হয় না। থানকুনি পাতায় রয়েছে বিভিন্ন জৈব যৌগ। একাধিক রোগের চিকিৎসায় এর পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। থানকুনি গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি

indian pennywort the unknown of the known tree

সোমনাথ মুখোপাধ্যায় :বর্ষাকালে পুকুর, জলাধার অথবা বাগানের স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় অযত্নে-অবহেলায় আর পাঁচটা গাছের মাঝে নির্বিচারে বেড়ে ওঠে থানকুনি পাতার গাছ। গোল গোল খাঁজকাটা ছোট ছোট পাতা। দেখতে সুন্দর। কেউ কেউ একে থুলকুনি বা আদামনিও বলে থাকেন। ইংরেজি নাম Indian Pennywort। যাইহোক একটু যত্ন করলে এই গাছটিকে সারাবছর সংরক্ষণ করা যায়। আয়ুর্বেদিক মতে এই গাছের ঔষধিগুণ অসীম। বহুতল বাড়িতে যারা থাকেন, তারা বাড়ির টবেও গাছটিকে চাষ করতে পারেন। খুব একটা যত্ন লাগে না। মাঝে মাঝে টবের মাটি পাল্টে দেওয়া ও জৈব সার দিলেই গাছ সবুজ হয়ে শোভা বর্ধন করে।

     এমনিতে আমরা জানি, এই গাছের পাতার রস পেটের রোগে বিশেষত আমাশয় সারানোর জন্য বিশেষ উপকারী। ছোটবেলায় মা-ঠাকুরমারা এই পাতার রস আমাদের থেঁতো করে খাইয়েছেন। এমনকি পাতলা ঝোলের সঙ্গে এই পাতা দিয়ে খাওয়ানো হতো। যতদূর মনে পড়ে অনেক আগে এই পাতা থেকে ‘বারবারাল এন’ নামক একটি ওষুধ প্রস্তুত করা হতো। এই ওষুধ এখন আর পাওয়া যায় না। তবে পাতা ও ডাটিগুলি খুব ভালো করে ধুয়ে নিয়ে বেটে তার রস করে নিয়মিত খেলে এখনও বেশ উপকার পাওয়া যায়।

     পেটের রোগ ছাড়াও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য থানকুনি পাতার রস বিশেষভাবে উপকারী। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র সহ সমস্ত দেহের স্নায়ু মন্ডলীর জন্য এই পাতার মধ্যে থাকা বিশেষ ধরনের অ্যালকালয়েড অত্যন্ত উপকারী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। স্নায়ুমণ্ডলীর সুষ্ঠু বিকাশের জন্য বাচ্চাদের এই পাতার রস খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরী। অ্যালজাইমার বা স্নায়ুর রোগে ভুগছেন এমন রোগীর ক্ষেত্রেও থানকুনি পাতার রস বিশেষ লাভদায়ক।

     গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে থানকুনির ব্যবহার রয়েছে। জ্বর মুখে ঘা প্রভৃতি চিকিৎসার জন্য থানকুনি পাতার রস বিশেষ উপকারী। থানকুনি পাতায় রয়েছে নানা ধরনের উপকারী খনিজ পদার্থ, জৈব যৌগ ও নানা ধরণের এন্টি-অক্সিডেন্ট। তাই পুষ্টি মূল্যের দিক থেকে থানকুনি পাতার নিয়মিত ব্যবহার শরীরের পক্ষে বিশেষভাবে উপকারী। থানকুনি পাতায় যেসব উপকারী জৈব যৌগ রয়েছে তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল- Indocentelloside, Brahmoside, Thsnkumiside, Kaempferol, Triterpene, Glycosides, Asiaticoside প্রভৃতি।

     এই পাতা ত্বকের জেল্লা বাড়াতে এবং চুল ওঠা বন্ধ করতেও বিশেষ সহায়ক বলে আয়ুর্বেদিকরা বলে থাকেন। তাছাড়া একজিমা ও ত্বকের দীর্ঘস্থায়ী ঘা-এর জন্য এই পাতার রস বিশেষ উপকারী। তাই চর্ম চিকিৎসায় আয়ুর্বেদাচার্যরা এই পাতার রস ব্যবহার করে থাকেন। অনেকে যৌন শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও থানকুনির বিশেষ ভূমিকা আছে বলে মনে করেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও থানকুনি পাতার রস বিশেষ উপকারী।

     হজমের গোলযোগ এবং খিদে বৃদ্ধির জন্য এই পাতার রস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সার্বিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখলে আমাদের এই চিরপরিচিত ঔষধি গাছটি রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। বিদেশে থানকুনি গাছটি নিয়ে প্রচুর গবেষণা চলছে। এই গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় অবশ্যই বর্ষাকাল। কাজেই অবহেলা না করে বাড়িতে থানকুনি লাগানোর উদ্যোগ শুরু হোক এখন থেকেই।

Advertisement
Previous articleডেথ ভ্যালি আবারও দখল করল সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড
Next articleরাতের সমুদ্রতট সেজে উঠেছে প্রকৃতির আলোয়, মুগ্ধ তো হতেই হবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here