তারাপীঠ মন্দিরের ‘পুষ্পবর্জ্য’-এ কেঁচোসার তৈরি হচ্ছে মল্লারপুরে

Advertisement
t3
বিজয় ঘোষাল : বীরভূমের অন্যতম সিদ্ধপীঠ তারাপীঠ মন্দির দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে এখানে ‘তারা মা’-এর উদ্দেশ্যে তাঁদের দেওয়া পুষ্পাঞ্জলী স্বরূপ লক্ষ লক্ষ লাল জবা, ফুলের মালা, বেলপাতা ও অন্যান্য পুজোর দ্রব্যাদি প্রায় নিত্যদিনই ডাঁই হয়ে পড়ে থাকে তারাপীঠ মন্দির চত্বরে। তারা মা’-এর প্রতি উৎসর্গীকৃত সেই পবিত্র পুষ্প সহ পুজোর দ্রব্যাদি পা দিয়ে মাড়িয়ে যেতে ভয় পান পুণ্যার্থীরাতাই দিনের শেষে সেই সব পুজোর সামগ্রীগুলিকে ফেলে দেওয়া হয় মন্দিরের পাশে প্রবাহিত দ্বারকা নদীতে।
     নদীতে ফেলে দেওয়ার পরেও সেই পুষ্পাদির কোনও সদগতি হয় না দিনের পর দিন পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়, মাছি ভনভন করে আর জন্ম নেয় রোগ সৃষ্টিকারী মশার নদীর স্বচ্ছ জলধারারও পুষ্প দূষণে রঙ বদলে যায় হিসাব করে দেখা গিয়েছে, এইভাবে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ১০ টন ফুল ও অন্যান্য পুজোর সামগ্রী ফেলে দেওয়া হয় দ্বারকা নদীতে, যা নির্মলতার দিক থেকে যথেষ্ট দৃষ্টিকটু। বছরের পর বছর এভাবেই চলে আসছে তারাপীঠ মন্দির প্রাঙ্গণে শুধু তারাপীঠ নয় ভারতের অধিকাংশ নদীগুলির দূষণের অন্যতম কারণ এইপুষ্পবর্জ্য পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে নদী দূষণে অন্যতম দূষক হিসাবে পুষ্পবর্জ্যের অবদান প্রায় ১৬ শতাংশ।
t4
     যাইহোক, দিনের পর দিন এইভাবে তারাপীঠ মন্দির প্রাঙ্গণে দ্বারকা নদীদূষণ এতদিন যথেষ্ট চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা সহ প্রশাসনিক আধিকারিকদের সেই চিন্তা কিছুটা লাঘব করতে এগিয়ে এল মল্লারপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা নঈসুভা প্রতিদিনের মন্দির থেকে প্রাপ্ত এই পুষ্পবর্জ্যকে মন্দির থেকে তুলে নিয়ে জৈবসার তৈরির অন্যতম কাঁচামালে পরিনত করছে এই সংস্থা। তারা কাজে লাগাচ্ছে কোঁচোসার তৈরির উপদান হিসাবে পুষ্পবর্জ্য-র সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা ও তাকে বিকল্প সম্পদের উপযোগী সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করার প্রয়াস বীরভূমে এই প্রথম
     এই সংস্থা প্রায় প্রতিদিনই মন্দির চত্বর থেকে পুজো হয়ে যাওয়া ফুল, বেলপাতা ও পুজোর অন্যান্য সামগ্রী ফুলবহনকারী গাড়িতে নিয়ে আসে মল্লারপুর লাগোয়া গোয়ালা গ্রামে। সেখানেই তৈরি হয় পুষ্পবর্জ্য থেকে কোঁচো সারতারাপীঠের এই পুষ্পবর্জ্য থেকে কেঁচোসারে রূপান্তরিত করতে যুক্ত আছেন ওই গ্রাম ও তার পাশ্ববর্তী গ্রামের মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা।
t1
     কীভাবে প্রস্তুত হচ্ছে এই কেঁচোসার? এব্যাপারে জানালেন চন্দ্রমালা, চৈতালি, ধর্মরাজ গোষ্ঠীর সদস্যরা। তাঁরা বললেন, প্রত্যেকদিন দুপুর নাগাদ সংস্থার ফুলবহনকারী গাড়িতে ওই পুষ্পবর্জ্য গোয়ালা গ্রামে নিয়ে আসা হয় তারপর সেই বর্জ্য থেকে অবাঞ্ছিত পদার্থগুলিকে সরিয়ে ফেলেসদস্যরা বেছে নেওয়া ফুল, বেলপাতাকে সার তৈরির কাঁচামাল হিসাবে রেখে দেওয়া হয়। সার তৈরির প্রাথমিক প্রক্রিয়াবাতাস চলাচল করতে পারে এরকম একটি মাটির চৌবাচ্চার প্রয়োজন হয় পাত্রের নিচে একটি ছিদ্র থাকে তা দিয়ে অপ্রয়োজনীয় জল বের করার ব্যবস্থা থাকে এরপর পাত্রের তলদেশ ইটের টুকরো বা পাথরকুচি এবং তার ওপর বালির আস্তরণ দিয়ে ভরাট করা হয় তারপর অর্ধপচিত জবাফুল, বেলপাতা সহ তরকারির খোসা, ধান বা খড়ের তুষ, ব্যবহৃত চাপাতা বা খামারজাত সার বা গোবর দেওয়া হয় ভাবে কিছুদিন রেখে দেওয়ার পর সেগুলি পচে যায়পচে যাওয়া পদার্থগুলিই হল কেঁচোর খাবার। তারপর ছাড়া হয় কেঁচো এই কেঁচোর রেচন পদার্থই হল কেঁচোসার ঠিক দুই মাসের মধ্যে কালচে বাদমি রং-এর চায়ের গুড়ো মতো তৈরি হয়ে যায় কেঁচোসার। এই সারের প্রতি কেজি দাম রাখা হয়েছে ২০ টাকা। যা পরে স্থানীয় বাজার ও কৃষকদের মাধ্যমে বাজারজাতকরণেরব্যবস্থা করা হয়।
t2
     কেন এই জৈবসার পরিবেশবান্ধব? এব্যাপারে জানালেন সংস্থার সম্পাদক সাধন সিনহা তাঁর কথায়, যে সব জমিতে কেঁচো সার ব্যবহার করা হয় সেই জমিতে ৫ গুন বেশি নাইট্রোজেন, গুন বেশি ফরফরাস, ১২ গুন বেশি পটাশ এবং ২ গুন বেশি ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। কেঁচো সার দিয়ে গুটিকলম করলে তাড়াতাড়ি শিকড় গজায় ও মাটিতে উপকারী জীবাণুতৈরি হয়। এছাড়া কেঁচো সারের নির্যাস গাছে স্প্রে করলে গাছ সতেজ থাকে।
     প্রডিউসার কোম্পানির মুখ্য কার্যকরী আধিকারিক উৎপল ঘোষ জানালেন, বর্তমানে কৃষিজমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার অত্যাধিক বেড়ে যাওয়াই মাটির উর্বরতা শক্তি ও জলধারণের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছেতাই ২০১৬ সাল থেকে তারাপীঠ মন্দির ও দ্বারকা নদীতে পড়ে থাকা পুষ্পবর্জ্য দিয়ে এই কেঁচোসার তৈরি শুরু হয়েছে এই প্রক্রিয়া এক দিকে যেমন দ্বারকা নদীকে দূষনের হাত থেকে রক্ষা করবে, অপরদিকে পুষ্পবর্জ্য থেকে তৈরি জৈবসার চাষিদের কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার প্রয়োগের নির্ভরতা কমাবে।
Advertisement
Previous articleদূষণ নিয়ন্ত্রণের পাঠ পড়েও দূষণ সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে কতজন?
Next articleমহাকাশে এলিয়েন সন্ধানে এবার কোমর বেঁধে নামছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here