বীরভূম জেলার সিউড়ি-বোলপুর বাস রুটের সেকমপুর বাসস্টপ থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটারের ব্যবধানে ছোট্ট একটি গ্রাম ডোমাইপুর। এই গ্রামের ঘোষ বাড়িতে ‘ঘটে পটে’ দুর্গার এক জীবন্ত নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। সত্যকিঙ্কর ঘোষের উত্তরসূরি ও গ্রামের কয়েকটি দেবাংশী পরিবারের মিলিত প্রচেষ্টায় বৈষ্ণব মতে এই পুজো করা হয়ে থাকে। তবে কে প্রথম এই পুজোর সূচনা করেছিলেন তা আর সঠিকভাবে জানা যায় না। কথিত রয়েছে কোনও এক সময়ে একটি বেল গাছের নিচে থেকে একটি কাঠের অংশ উঠে এসেছিল। তারপর দেবীর আদেশেই শুরু হয়েছিল সেখানে ঘট ও নবডালের মাধ্যমে দুর্গা পুজো। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি |

রেমা মণ্ডল : গ্রাম-বাংলায় দীর্ঘদিন থেকেই একটা কথা প্রচলিত রয়েছে, ‘ঘটে পটে’ দুর্গা পুজো। এই থিম পুজোর যুগেও কিন্তু ‘ঘটে পটে’ দুর্গা পুজো বঙ্গের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে রাঢ় বাংলার একাধিক অঞ্চলে আজও প্রচলিত রয়েছে। এখানে এই দুর্গা ‘পটের দুর্গা’ নামে পরিচিত। তবে থিম পুজোর রমরমায় এই পটের দুর্গা বেশ অনেকটাই ম্রিয়মাণ এখন।
বীরভূম জেলার সিউড়ি-বোলপুর বাস রুটের সেকমপুর বাসস্টপ থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটারের ব্যবধানে ছোট্ট একটি গ্রাম ডোমাইপুর। এই গ্রামের ঘোষ বাড়িতে ‘ঘটে পটে’ দুর্গার এক জীবন্ত নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়।
ঘোষ বাড়ির সদস্য চিন্ময় ঘোষ জানালেন, তাঁদের এই পুজো প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো। বর্তমানে স্বর্গীয় সত্যকিঙ্কর ঘোষের উত্তরসূরি ও গ্রামের কয়েকটি দেবাংশী পরিবারের মিলিত প্রচেষ্টায় বৈষ্ণব মতে এই পুজো করা হয়ে থাকে। তবে কে প্রথম এই পুজোর সূচনা করেছিলেন তা আর সঠিকভাবে জানা যায় না।
চিন্ময় ঘোষ আরও জানালেন, কথিত রয়েছে কোনও এক সময়ে একটি বেল গাছের নিচে থেকে একটি কাঠের অংশ উঠে এসেছিল। তারপর দেবীর আদেশেই শুরু হয়েছিল সেখানে ঘট ও নবডালের মাধ্যমে দুর্গা পুজো।

চিন্ময় ঘোষের মা করুণাময়ী ঘোষ জানালেন, ওই বেল গাছের পাশেই ছিল মহামূল্যবান শ্বেত পাথরের রঘুনাথের শালগ্রাম শিলা ও তার মন্দির। দেবী দুর্গার সঙ্গেই তখন পুজো করা হতো রাঘুনাথকেও। পরে কোনও এক ভণ্ড সাধু সেই শালগ্রাম শিলা সেখান থেকে নিয়ে চলে যায়। তবে বর্তমানে রঘুনাথের সেবা না হলেও প্রতিবছর শরৎকালে এক অভিনব পটে আঁকা চিত্রে দেবী দুর্গার পুজো হয়ে থাকে।
করুণাময়ী দেবী আরও জানালেন, পট চালির মধ্যখানে বিরাজ করেন দেবী দুর্গা। তার বাম পাশে থাকে সমৃদ্ধির প্রতীক দেবী লক্ষ্মী ও ডান পাশে রাখা হয় বিদ্যার দেবী সরস্বতীকে। সপ্তমীর দিন কলাবউকে দোলায় চাপিয়ে স্নান করানো হয়। এখানে পুজোর যা কিছু উপাচার, সবই করা হয় বৈদিক নিয়মনীতি মেনে। এককালে এই পুজোতে বলির প্রচলন ছিল। কিন্তু পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে পশুবলির বদলে অষ্টমীতে নিয়ম মেনে চাল-কুমড়ো বলি দেওয়া হয়।
খুব সুন্দর