সাধারণত এডিস ইজিপ্টি স্ত্রী মশা এই ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে থাকে। প্রথমে কোনওভাবে তারা এই ভাইরাসে নিজেরা আক্রান্ত হয়। পরে তাদের সমস্ত কোশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। পরে মানুষ বা অন্য কোনও প্রাণীকে আক্রমণ করলে তাদের শরীর থেকে লালার মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষ বা সেই প্রাণীর শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আশ্চর্য ব্যাপার। মশারা নিজেরা সারাজীবনের জন্য ডেঙ্গু তে আক্রান্ত হলেও তাদের উপর এর কোনও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না।
বর্ষা মরশুম মানেই মশার মরশুম। এই সময়ে বিরক্তিকর মাছির পাশাপাশি প্রায় সারাক্ষণই গুনগুনিয়ে ঘুরে বেড়ায় ক্ষতিকর মশা। প্রতি বছর এদের থেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ সহ অন্য প্রাণী। পরিবেশের উপর এই পতঙ্গ দুটির কোনও লাভজনক প্রভাব এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই অচিরেই যদি এরা পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায়, আদৌ কী কোনও প্রভাব পড়বে পরিবেশের উপর?
কিন্তু হারিয়ে যাওয়া বললেই তো আর হারিয়ে ফেলা নয়। বহু চেষ্টার পরেও এই পতঙ্গ দুটিকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা কখনওই সম্ভব হয়নি। ব্রাজিল একবার উদ্যোগ নিয়েছিল তাদের দেশ থেকে মশা নির্মূলের। তাদের ইচ্ছা ছিল ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ দেশ থেকেই মশা হটিয়ে দেওয়ার। কিন্তু দীর্ঘ ১২ বছরের চেষ্টার পরেও লাভ কিছুই হয়নি। অবশেষে রণে ভঙ্গ দেয় ব্রাজিল।
তাই মশা হটানোর বৃথা চেষ্টা না করে বরং মশা বাহিত রোগগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় খুঁজে বের করাটাই শ্রেয়। এই যেমন ডেঙ্গু জ্বর। বর্ষা মরশুমেই মারণ রোগ ধারণ করে এই ডেঙ্গু। সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলেই এই রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এডিস ইজিপ্টি মশা সাধারণত এই ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহন করে থাকে। প্রথমে নিজেরা আক্রান্ত হয়। পরে এদের মাধ্যমেই অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগের ভাইরাস।
ডেঙ্গু জ্বর আসলে কী? ডেঙ্গু জ্বর আসলে একটি RNA ভাইরাস ঘটিত রোগ। এই ভাইরাস ফ্ল্যাভিভাইরিডি ও ফ্ল্যাভিভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত। তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ব্যথা, চামড়ায় লাল ঘামাচির মতো ফুসকুড়ি এই রোগের সাধারণ উপসর্গ। তবে প্রাথমিক ধাপে ধরা পড়লে ৭ দিনের মধ্যেই আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। অন্যথায় জ্বর মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেলে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। ১১০টিরও দেশে ডেঙ্গু র প্রাদুর্ভাব রয়েছে। বলা বাহুল্য, প্রতিবছর এই বর্ষা মরশুমে সমগ্র বাংলা জুড়েই অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হয় ডেঙ্গু জ্বরে। কিছু মানুষের মৃত্যুও ঘটে এই রোগের প্রভাবে।
সাধারণত এডিস ইজিপ্টি স্ত্রী মশা এই ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে থাকে। প্রথমে কোনওভাবে তারা এই ভাইরাসে নিজেরা আক্রান্ত হয়। পরে তাদের সমস্ত কোশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। পরে মানুষ বা অন্য কোনও প্রাণীকে আক্রমণ করলে তাদের শরীর থেকে লালার মাধ্যমে এই ভাইরাস মানুষ বা সেই প্রাণীর শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আশ্চর্য ব্যাপার। মশারা নিজেরা সারাজীবনের জন্য ডেঙ্গু তে আক্রান্ত হলেও তাদের উপর এর কোনও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল বিশেষ করে নিরক্ষরেখা থেকে ৩৫ ডিগ্রী উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যেই সাধারণত এডিস ইজিপ্টি মশা লক্ষ করা যায়। এই মশা আকারে বেশি বড় হয় না। কালো রঙের ওপর সাদা জেব্রা ক্রসিং এর মতো দাগ অন্য মশা থেকে এদেরকে আলাদা করেছে। সাধারণত দিনের আলোতেই এরা ঘুরে বেড়াতে বেশি পছন্দ করে। তবে রাতের অন্ধকারেও এডিস ইজিপ্টি মশার দেখা মেলে। এরা জমে থাকা নোংরা জলেই ডিম পেড়ে থাকে। তাই ভারতীয় পরিবেশে বর্ষা মরশুমেই এদের প্রকোপ বাড়ে সবচেয়ে বেশি।
এখানে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, ১৭৭৯ সাল নাগাদ প্রথম ডেঙ্গু র খোঁজ পাওয়া গেলেও এখনও পর্যন্ত এর কোনও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। দীর্ঘদিন ধরে এই রোগের টিকা নিয়ে গবেষণা চললেও এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও টিকা আবিস্কার হয়নি। তাই নিজেদের সচেতন হওয়া ছাড়া এই রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অন্য কোনও উপায় বর্তমানে নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ডেঙ্গু রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সবচেয়ে সেরা উপায় মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার দিকে নজর দেওয়া। বর্ষা মরশুমে কোনওভাবেই পরিত্যক্ত জায়গায় জল জমতে দেওয়া যাবে না। দরকার হলে মশা নির্মূলে জায়গায় জায়গায় কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। নিজেদের যথা সম্ভব শরীর ঢেকে রাখার পোশাক পড়তে হবে। আর রাতে বিশ্রামের সময় অবশ্যই মশারী ব্যবহার করতে হবে।