Advertisement
সজয় পাল : কোনও বড়ো উৎসবের আগে এলাকা জুড়ে প্রশাসনিকভাবে শব্দ দূষণের উপর সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। উৎসবকে ঘিরে যেন মাত্রাতিরিক্ত শব্দ পরিবেশকে দূষিত করতে না পারে, সেদিকে প্রশাসন যথেষ্ট সতর্ক থাকে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রশাসনকে সম্পূর্ণ বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ এই দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের কোনও ধার ধারে না। তারা শুধুমাত্র ওই সময়ের জন্য নিজের আনন্দটুকু নিয়েই ভাবতে চায়। এই শ্রেণীর মানুষের সবচেয়ে পছন্দের বিষয় উচ্চস্বরে ডিজে প্রদর্শন। তাতে পাশের মানুষটি অস্বস্তি ভোগ করলেও তাতে তাদের কোনও যায় আসে না।
এখানে শব্দ দূষণ বলতে বোঝানো হয়েছে, শ্রুতিসীমা অতিক্রমকারী কোনও শব্দ যখন মানুষ বা অন্য প্রাণীর শ্রবণশক্তিকে নষ্ট করে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে সেরকম শব্দকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী মানুষের স্বাভাবিক শব্দ গ্রহণ করার মাত্রা ৪০–৫০ ডেসিবল। এর বেশি মাত্রাযুক্ত শব্দ গ্রহণ করলে যে কোনও মানুষের একাধিক সমস্যা হতে পারে। স্থায়ীভাবে নষ্ট হতে পারে শ্রবণ ক্ষমতা। কিন্তু অবাক করে দিয়ে শহর অঞ্চলগুলিতে এই শব্দ দূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে দৈনিক গড়ে প্রায় ১২০ ডেসিবল। উৎসবের দিনগুলিতে এই মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একজন মানুষ প্রতিদিন কতক্ষণ এবং কটটুকু শব্দের মধ্যে নিজেকে স্বাভাবিকভাবে অবস্থান করাতে পারবে, এবিষয়ে একটি মানদণ্ড দিয়েছে। সেখানে বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, একজন মানুষ প্রতিদিন ৮৫ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দের মধ্যে প্রায় ৮ ঘণ্টা অবস্থান করতে পারবে। এর বেশি মাত্রার শব্দ ওই সময়টুকুর মধ্যে গ্রহণ করলে বিভিন্ন শারীরিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আর শব্দের মাত্রা যদি ১৩০ ডেসিবল বা তার বেশি হয়, তাহলে সে অবস্থান করতে পারবে মাত্র ১ সেকেন্ড। তাহলে বোঝায় যাচ্ছে একজন মানুষ প্রতিদিন কতটুকু শব্দের মধ্যে কতক্ষণ অবস্থান করলে সে শব্দ দূষণ থেকে কিছুটা মুক্ত থাকতে পারবে তারও একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা আছে।
বিগত কয়েক বছর ধরে যে কোনও অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে ডিজে প্রদর্শন একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি শীতের বনভোজনেও এর প্রদর্শন বেশ ভালোভাবেই লক্ষ করা যাচ্ছে। বর্তমানের ডিজে বক্সগুলিতে উচ্চমাত্রার কম্পনযুক্ত স্পীকার লাগানো হচ্ছে। তাতে বেশ দূর থেকেই অস্বাভাবিক কম্পন অনুভূত হয়। উচ্চস্বরে বক্স বাজানোর সময় এই কম্পনের মাত্রা মাঝে মধ্যে প্রায় ১৩০ ডেসিবলকেও ছাড়িয়ে যায়। যা শিশু, বৃদ্ধ, হৃদরোগী, পশু–পাখি সহ সমগ্র সুস্থ মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। অথচ এই শ্রেণীর বক্স দীর্ঘ সময় ধরে বেজেই চলে বিনা বাধায়, বিনা নিয়ন্ত্রণে।
এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা বা ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, তা কিন্তু নয়। তারপরেও প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ক্রমশ বেড়েই চলেছে উচ্চস্বরে ডিজে প্রদর্শনের এই রীতি।
Advertisement