জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখন গোল্ডিলকস জোন-এর গ্রহ খুঁজছে, কিন্তু কেন?

Advertisement
গোল্ডিলকস জোন-এর নির্দিষ্ট কোনও ‘জোন’ বা দূরত্ব নেই। কারণ এই দূরত্ব নির্ভর করে অনেকটা নক্ষত্রের প্রকৃতির উপর। যদি কোনও নক্ষত্রের আকার ও উষ্ণতা বেশি হয়, তবে এই দূরত্ব নক্ষত্র থেকে অনেকটাই দূরে হবে। আবার নক্ষত্রের আকার ও উষ্ণতা যদি কম হয়, সেক্ষেত্রে এই দূরত্ব কম হবে। এছাড়াও লাল বামন তারা আয়তনে বড়ো হলেও উষ্ণতা কম হওয়ায় গোল্ডিলকস জোন এক্ষেত্রে অনেকটাই নক্ষত্রের কাছে এগিয়ে আসবে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখন গোল্ডিলকস জোন-এর গ্রহ খুজছে, কিন্তু কেন?
Symbolic Image – Image by Wikilmages from Pixabay

সজয় পাল : সৌরজগতের গ্রহগুলির মধ্যে একমাত্র পৃথিবীতেই বিকশিত হয়েছে প্রাণ। কারণ একমাত্র এখানেই রয়েছে প্রাণ সৃষ্টির উপযুক্ত পরিবেশ। বাকি গ্রহগুলির কোনওটিতেই প্রাণের অস্তিত্ব নেই। অন্তত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও প্রমাণ পাননি। সৌরজগতের বাইরেও রয়েছে কোটি কোটি সৌরজগৎ। সেখানও রয়েছে গ্রহ বেষ্টিত সৌরজগতের মতো পরিবেশ (অন্তত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়)। তবে কি সেখানেও থাকতে পারে পৃথিবীর মতো কোনও নীলাভ গ্রহ! যেখানে প্রাণ বিকশিত হতে পারে!

এই সন্দেহ আজকের নয়, বহুদিনের। পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অহরহ এবিষয়ে জানতে সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরেই। তবে নতুন নতুন গ্রহ আবিস্কার ও তার পরিবেশ সম্পর্কে সামান্য ধারণা করতে পারলেও প্রাণ থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাননি। এই প্রাণের প্রমাণ পেতেই তাঁরা এখন ‘গোল্ডিলকস জোন’ (Goldilocks Zone)-এর গ্রহ খুঁজে চলেছেন। কিন্তু কেন? আর এই গোল্ডিলকস জোন-ই বা আসলে কি?

এখানে গোল্ডিলকস জোন বা হ্যাবিটেবল জোন (Habitable Zone) বলতে যে কোনও নক্ষত্র থেকে এমন একটি দূরত্বকে বোঝানো হচ্ছে, যে অঞ্চলের গ্রহগুলির গড় তাপমাত্রা খুব শীতলও থাকবে না আবার খুব উষ্ণও হবে না। অর্থাৎ সাধারণ উষ্ণতায় জল থাকবে এখানে প্রায় তরল। সৌরজগতের গ্রহগুলির মধ্যে একমাত্র পৃথিবী-ই রয়েছে এই রকম অবস্থানে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা, তার জন্যেই পৃথিবীতে উদ্ভব ঘটেছে প্রাণের। কারণ প্রাণ সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় জল। আর এই পৃথিবীতেই তো কোটি কোটি বছর পূর্বে প্রাণের জন্ম হয়েছিল সাগরের জলেই।

গোল্ডিলকস জোন-এর নির্দিষ্ট কোনও ‘জোন’ বা দূরত্ব নেই। কারণ এই দূরত্ব নির্ভর করে অনেকটা নক্ষত্রের প্রকৃতির উপর। যদি কোনও নক্ষত্রের আকার ও উষ্ণতা বেশি হয়, তবে এই দূরত্ব নক্ষত্র থেকে অনেকটাই দূরে হবে। আবার নক্ষত্রের আকার ও উষ্ণতা যদি কম হয়, সেক্ষেত্রে এই দূরত্ব কম হবে। এছাড়াও লাল বামন তারা আয়তনে বড়ো হলেও উষ্ণতা কম হওয়ায় গোল্ডিলকস জোন এক্ষেত্রে অনেকটাই নক্ষত্রের কাছে এগিয়ে আসবে।

তবে এখানে জানিয়ে রাখা প্রয়োজন, গোল্ডিলকস জোন-এ অবস্থান করলেও সব গ্রহে অবশ্য প্রাণের বিকাশ নাও ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটি শর্তের প্রয়োজন পড়ে। তার অন্যতম ওই গ্রহে অবশ্যই ‘ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট’ থাকতে হবে। নাহলে ওই গ্রহে প্রাণ বিকশিত হলেও মহাজাগতিক রশ্মির প্রভাবে তা নষ্ট হয়ে যাবে।

সৌরজগতের গ্রহগুলির মধ্যে পৃথিবী ছাড়াও শুক্র ও মঙ্গল এই দুটি গ্রহও প্রায় গোল্ডিলকস জোন-এ পড়ছে। এখানেও প্রাণের উদ্ভব হতে পারতো। কিন্তু বাকি শর্তগুলির জন্য তেমন কিছুই ঘটেনি। এর মধ্যে মঙ্গলেই সবচেয়ে বেশি প্রাণ সৃষ্টির পরিবেশ ছিল। এক সময়ে যে সেখানে নদী, সাগর বা জলধারা ছিল, তার প্রমাণও জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। কিন্তু লাল গ্রহের কোনও ‘ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্ট’ না থাকায় (যদিও কোনও এক সময়ে ছিল) সে আশা অনেকটাই ক্ষীণ। শুক্র গ্রহেও প্রাণের আবির্ভাব হতে পারত, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাবে সেখানকার গড় তাপমাত্রা এখন অত্যন্ত অসহনীয় (প্রায় ৪৬০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছাকাছি)।

এখন বাকি রয়েছে সৌরজগতের বহির্জগৎ। অর্থাৎ অপার বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড। কোটি কোটি নক্ষত্র ও তাদের গ্রহগুলির মধ্যে হয়তো এমন কোনও গ্রহ থেকে থাকবে, যেটি অবস্থান করছে একেবারেই ঠিকঠাক গোল্ডিলকস জোন-এ। হয়তো সেখানেও রয়েছে পৃথিবীর মতো পরিবেশ। রয়েছে আকাশ, জল, মাটি, বাতাস আর প্রাণ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখন তাঁদের শক্তিশালী টেলিস্কোপে চোখ রেখে সেদিকেই নজর রেখে চলেছেন।

Advertisement
Previous articleআবার বিপদ! ঘূর্ণিঝড় গুলাব-এর পিছনেই আসছে আর এক ঘূর্ণাবর্ত
Next articleসৃজনী শিল্পগ্রামে এবার ৪ দিন ধরে চলছে ঝাড়খণ্ডের জনজাতি উৎসব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here