জৌলুস হারালেও কালিকাপুর জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজো আজও ব্যতিক্রমী

Advertisement
এমনিতেই বাঙালির সবচেয়ে বড়ো উৎসব এই দুর্গোৎসবের খরচ এক বিশাল অঙ্কের। এই খরচের জন্যই অনেক জমিদার পরিবার তাঁদের প্রচলিত দুর্গা পুজো হয় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে, নয়তো বারোয়ারী পুজোতে রূপান্তরিত করেছে। কিন্তু রায় পরিবারের এই দুর্গা পুজো আজও একাধিক সমস্যার মধ্যেও টিকে রয়েছে। বছরের বিভিন্ন সময় এই জমিদার বাড়িকে কেন্দ্র করে যে দুই-একটি চলচ্চিত্র বা নাটকের শুটিং হয়ে থাকে, সেখান থেকেই কিছু প্রাপ্ত অর্থ সরিয়ে রাখা হয় পুজোর খরচের জন্য। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি

জৌলুস হারালেও কালিকাপুর জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজো আজও ব্যতিক্রমী
জৌলুস হারালেও কালিকাপুর জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজো আজও ব্যতিক্রমী 2

রেমা মন্ডল : আউসগ্রামের ২ নাম্বার ব্লকের ছোট্ট গ্রাম কালিকাপুরের দূরত্ব বর্ধমান শহর থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার। এখানেই রয়েছে রায় বাবুর সুবিশাল প্রাসাদ। যদিও প্রাসাদটি এখন অনেকটাই ধ্বংসের মুখে ধাবিত। পরিবার সূত্রে জানা গেল, রায় বাড়ির পূর্বপুরুষ পরমানন্দ রায় এক সময় বর্ধমানের মহারাজার দেওয়ান পদের অধীনে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে মহারাজা আউস গ্রামের জমিদারি দান করেন পরমানন্দ রায়কে। তখন এই অঞ্চলটি ছিল বেশ জঙ্গল বেষ্টিত।

রায় পরিবার সূত্রে আরও জানা গেল, রায় পরিবার আদতে ছিল মৌখিরা গ্রামের বাসিন্দা। কুনুর নদীর বন্যার প্রকোপ এবং যথাযথ সঙ্কুল স্থানের জন্য তারা চলে আসেন এই কালিকাপুরে। পরমানন্দ রায়ের তত্ত্বাবধানে সেসময়ে জঙ্গল কেটে নির্মাণ করা হয় এই সুবিশাল প্রাসাদটি। এই প্রাসাদেই রয়েছে দুর্গা মন্দির, নাট মন্দির সহ তাঁর সাত পুত্রের জন্য সাত মহলা বাড়ি। এ যেন অনেকটাই রূপকথার মতো।

এই জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজো প্রায় ৪০০ বছরেরও বেশি পুরনো। যদিও আগের মতো এর জৌলুস এখন আর নেই। কিন্তু রয়েছে এর ব্যতিক্রমী ভাবধারা। যা আর পাঁচটা পুজোর থেকে অনেকটাই আলাদা করে দিয়েছে। এককালে এই জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজোর জন্য তত্ত্ব পাঠানো হত বর্ধমানের রাজবাড়ি থেকে। কিন্তু সেসব দিন আর না থাকলেও আজও নিয়ম করে এই পুজো সময় বর্ধমানের রাজা বিজয় চাঁদ ও উদয় চাঁদ-এর নামে সংকল্প করা হয়। পুজোর ১৫ দিন আগে বোধনের দিন থেকেই চলতে থাকে আড়ম্বর। বোধনের ঘট এনে শুরু হয় চণ্ডী পাঠ। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত ষোড়শ উপাচারে পুজো হয়। এছাড়াও জমিদারি আমল থেকে চলে আসা প্রথা মেনেই সপ্তমীর দিন পালকি করে কলাবউকে নিকটবর্তী অজয় নদী থেকে স্নান করিয়ে আনা হয়।

গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেল, জমিদারি আমলে দুর্গা পুজোর দিনগুলিতে মহা আড়ম্বরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। প্রজাদের জন্য আয়োজন করা হতো যাত্রাপালা ও কবিগানের। বর্তমানেও পুজোর দিনগুলিতে বাউল গান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকেন।

এমনিতেই বাঙালির সবচেয়ে বড়ো উৎসব এই দুর্গোৎসবের খরচ এক বিশাল অঙ্কের। এই খরচের জন্যই অনেক জমিদার পরিবার তাঁদের প্রচলিত দুর্গা পুজো হয় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে, নয়তো বারোয়ারী পুজোতে রূপান্তরিত করেছে। কিন্তু রায় পরিবারের এই দুর্গা পুজো আজও একাধিক সমস্যার মধ্যেও টিকে রয়েছে। বছরের বিভিন্ন সময় এই জমিদার বাড়িকে কেন্দ্র করে যে দুই-একটি চলচ্চিত্র বা নাটকের শুটিং হয়ে থাকে, সেখান থেকেই কিছু প্রাপ্ত অর্থ সরিয়ে রাখা হয় পুজোর খরচের জন্য। এক সময়ে এই জমিদার বাড়িতে শুটিং হয়েছে ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘নৌকা ডুবি’, অপর্ণা সেনের ‘গয়নার বাক্স’, মৃণাল সেনের ‘কান্দাহার’-এর মতো কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের।

বর্তমানে জমিদার বাড়ির সদস্য সংখ্যা প্রায় তিনশোর কাছাকাছি। অধিকাংশ সদস্য কর্মসূত্রে বাইরে থাকলেও পুজোর দিনগুলিতে তাঁরা সকলেই এখানে এসে মিলিত হন। তখন হাসি, মজা, আড্ডা আর খাওয়া-দাওয়াতেই কেটে যায় পুজোর দিনগুলি।

Advertisement
Previous articleবীরভূমেই সবচেয়ে বেশি ‘পটের দুর্গা’ দেখা যায় (ভিডিও সহ)
Next articleপাথরকুচি গ্রামের একই পাড়ায় আজও হয়ে চলেছে পরপর সাতটি দুর্গার আরাধনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here