জেলা শাসকের কাছে ‘সুস্থ বসার পরিবেশ’-এর জন্য আবেদন করল সিউড়িবাসী

Advertisement
সিউড়ির বেশ কিছু সামাজিক সংগঠন ও সেই সঙ্গে সিউড়ির একাধিক অধিবাসী ১১ ডিসেম্বর সিউড়ি জেলা শাসকের অফিসে একটি ডেপুটেশন জমা দেন। তাদের দাবি, জেলার সদর শহর সিউড়িতে খেলার মাঠ, সুরক্ষিত খোলা জায়গা তথা বসার স্থানের অভাব চরম। যেটুকু আছে তাও পর্যাপ্ত নয় এবং একে একে তাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সিউড়ির চাঁদমারি থেকে পাওয়ার হাউস পর্যন্ত সমস্ত মাঠ ঘিরে ফেলা হচ্ছে। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি

জেলা শাসকের কাছে ‘সুস্থ বসার পরিবেশ’-এর জন্য আবেদন করল সিউড়িবাসী

জনদর্পণ ডেস্ক : গ্রামের পরিবেশের সঙ্গে শহরের পরিবেশের তফাৎ রয়েছে বিস্তর। গ্রামের পরিবেশে যেখানে দেখতে পাওয়া যাবে দিগন্ত বিস্তৃত খোলা মাঠ, সবুজ শস্য খেত, আম-কাঁঠালের বন। কখনও বা কোনও গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে একটা নীলচে স্বচ্ছ নদী। এখানে যে কোনও সবুজ প্রান্তরে কিছুক্ষণের জন্য বসা যায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডাও দেওয়া যায়। অথবা সোনালী বিকালের নরম সূর্য আভায় শিশুদের মন খুলে খেলতেও দেখা যায়।

তবে শহরের পরিবেশ একেবারেই এর বিপরীত। কংক্রিটের বহুতল বিল্ডিং-এর জঙ্গলগুলির ফাঁক দিয়ে জালের মতো বিছিয়ে রয়েছে অজস্র কালো পিচ পথ। কানে বাজে যানবাহনের মুহুর্মুহু কর্কশ শব্দ, মানুষের কোলাহল আর চতুর্দিক ঘিরে থাকে কালো ধোঁয়ার আবরণে। পথচারীদের জন্য দু’দণ্ড বিশ্রামের স্থানটুকুও এখানে বিরল। খুঁজে পাওয়া যাবে না শিশুদের খেলার মুক্ত প্রাঙ্গণটুকুকেও।

বীরভূমের সদর শহর সিউড়িও এই ‘কংক্রিটের জঙ্গল’ থেকে এখন কোনওভাবেই মুক্ত নয়। দিনে দিনে এখানে যুক্ত হচ্ছে আরও ‘জঙ্গল’-এর স্তূপ। ভারাক্রান্ত তাই শহরের স্থানীয় শান্তিপ্রিয় বাসিন্দারা। বিকালের অবসর বা ছুটির দিনের বিরতিতে কোনও সুস্থ ও শান্ত মুক্ত প্রাঙ্গণে কিছুক্ষণ যে তাঁরা বসবে, এখন তারও কোনও উপায় নেই। তাঁদের ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েরাও বড্ড ঘরকুনো হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। কারণ তাদের জন্যেও পর্যাপ্ত খেলার মাঠ বা বসার স্থানটুকুও অবশিষ্ট নেই।

এই পরিস্থিতিতে সিউড়ির বেশ কিছু সামাজিক সংগঠন ও সেই সঙ্গে সিউড়ির একাধিক অধিবাসী ১১ ডিসেম্বর সিউড়ি জেলা শাসকের অফিসে একটি ডেপুটেশন জমা দেন। তাদের দাবি, জেলার সদর শহর সিউড়িতে খেলার মাঠ, সুরক্ষিত খোলা জায়গা তথা বসার স্থানের অভাব চরম। যেটুকু আছে তাও পর্যাপ্ত নয় এবং একে একে তাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সিউড়ির চাঁদমারি থেকে পাওয়ার হাউস পর্যন্ত সমস্ত মাঠ ঘিরে ফেলা হচ্ছে। এর পাশাপাশি যুক্তিহীন সময়সীমার মধ্যে ঘিরে ফেলার ফলে শিশু, ছাত্র-ছাত্রী, কিশোর, কর্মজীবী, প্রবীণ নাগরিক, শিক্ষার্থী সহ সমস্ত শহরবাসীই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই অবস্থায় একটি সুস্থ স্বাভাবিক সুন্দর পরিবেশ এবং মানসিক বিকাশের জন্য সিউড়ি শহরে একটি স্বাধীন সুরক্ষিত সজ্জিত খোলা মাঠের বা বসার স্থানের অত্যন্ত প্রয়োজন।

সিউড়ি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক প্রিয়নীল পাল জানালেন, এই যান্ত্রিক ভরা ব্যস্তময় জীবনে শিশু-কিশোরদের শারীরিক, মানসিক ও বৃদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য খেলার মাঠ বা সুস্থ বসার পরিবেশের কোনও বিকল্প নেই। মূলত সুস্থ দেহেই থাকে সুন্দর মন। সুস্থ দেহ ও সুন্দর মনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিশু-কিশোরদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ ও বসার স্থান। কিন্তু সিউড়ির মাঠগুলো এখন ক্রমশই উধাও হয়ে যাচ্ছে। একে একে সব মাঠ ইট-সিমেন্টের পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে। তাই সিউড়ি শহরের শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি কর্মজীবী মানুষ ও প্রবীণ নাগরিকরাও এখন আড্ডা দেওয়ার জন্য সুস্থ-স্বাভাবিক স্থানের অভাব বোধ করছেন।

যদিও এদিন জেলা শাসক বিজয় ভারতী ডেপুটেশন জমা দেওয়ার মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন না। তবে উপস্থিত মহকুমা শাসক দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় আবেদনকারীদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে শোনেন এবং তাঁদের দাবিও গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে তিনি বিষয়টি বিবেচনা করারও প্রতিশ্রুতি দেন।

Advertisement
Previous article৮০০ বছর পর ফের কাছাকাছি বৃহস্পতি-শনি
Next articleএই ডিসেম্বরে ঘটবে তিনটি মহাজাগতিক ঘটনা, দেখা যাবে খালি চোখেই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here