জামাই ষষ্ঠী : কীভাবে শুরু হল জামাইদের এই ভুঁড়িভোজের রীতি

Advertisement

পুরনো হিন্দুশাস্ত্রগুলিতে জামাই ষষ্ঠী র কোনও বিধান খুঁজে পাওয়া যায় না। এই অনুষ্ঠানের ভাবনা এসেছে অনেক পরে। মূলত ভারতে মধ্যযুগ চলাকালে শুরু হয়েছিল এই জামাই ষষ্ঠী র অনুষ্ঠান। তবে কীভাবে সেসময় এই লৌকিক আচার শুরু হয়েছিল, তা নির্দিষ্টভাবে বলা যায় না। বিশ্লেষকেরা অবশ্য জামাই ষষ্ঠী র ইতিহাস তুলে ধরার সময় দুটি উদাহরণ দিয়ে থাকেন ভিন্নভাবে।


ষষ্ঠী

অনলাইন পেপার : এবছর জামাই ষষ্ঠী র দিন স্থির হয়েছে ২৫ মে বা ১০ জ্যৈষ্ঠ। পুরনো দিনের রীতি অনুযায়ী এই দিনে বাংলাদেশের জামাইয়েরা গায়ে পাঞ্জাবী চাপিয়ে, মালকোঁচা মেরে ধুতি পড়ে শ্বশুরবাড়ি যেতেন ভুঁড়িভোজের আশায়। এখন অবশ্য দিন অনেক বদলে গিয়েছে। ধুতি বাদ গেলেও পাঞ্জাবী রয়েছে বহাল। হেলেদুলে হাতে মিষ্টি বা ফলের ঝোলা নিয়ে শ্বশুরবাড়ির আঙিনায় পৌঁছে যান জামাইয়েরা।

তবে কীভাবে শুরু হল এই জামাই ষষ্ঠী র সমাদর? পুরনো হিন্দুশাস্ত্রগুলিতে জামাই ষষ্ঠী র কোনও বিধান খুঁজে পাওয়া যায় না। এই অনুষ্ঠানের ভাবনা এসেছে অনেক পরে। মূলত ভারতে মধ্যযুগ চলাকালে শুরু হয়েছিল এই জামাই ষষ্ঠী র অনুষ্ঠান। তবে কীভাবে সেসময় এই লৌকিক আচার শুরু হয়েছিল, তা নির্দিষ্টভাবে বলা যায় না। বিশ্লেষকেরা অবশ্য জামাই ষষ্ঠী র ইতিহাস তুলে ধরার সময় দুটি উদাহরণ দিয়ে থাকেন ভিন্নভাবে।

এক সময় দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি দেশে নাকি রীতি ছিল, বিবাহের পর মেয়েরা পুত্রবতী না হলে বাপের বাড়িতে যেতে পারবে না। কিন্তু মেয়েদের পুত্রবতী হওয়া কখনওই ইচ্ছানুযায়ী হয় না। অনেক সময় বেশ দেরিতে অনেকে পুত্রবতী হত। অনেকে আবার হতেই পারত না। শারীরিক সমস্যার শিকার হয়ে অনেক বধূ সন্তান ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলত।

তাই সমস্যায় পড়তেন বধূ ও তার বাপের বাড়ির মানুষেরা। বিবাহের পর মেয়ে বাপের বাড়িতে যেতে পারত না। আবার মেয়ে ও জামাইকে দীর্ঘদিন নিজের বাড়িতে আনতে না পেরে বাপের বাড়ির মানুষেরা মানসিক শান্তি পেতেন না। এই সব কারণে সমাজের নীতি নির্ধারকেরা নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। তারা বছরের একটি নির্দিষ্ট দিন স্থির করে, যেদিন মেয়ে ও জামাই উভয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে যেতে পারবে মেয়ের বাপের বাড়িতে।

এই নির্দিষ্ট দিনটিকে জামাই ষষ্ঠী হিসাবেই গণ্য করা হতে শুরু হয় তখন থেকে। কিন্তু বছরের কোন দিনটি নির্দিষ্ট করা হয়েছিল জামাই ষষ্ঠী র জন্য? সমাজের নীতি নির্ধারকেরা বিভিন্ন দিক বিচার করে বাংলায় জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীকে জামাই ষষ্ঠী র দিন হিসাবে নির্ধারণ করেছিলেন তখন। যা আজও বলবত রয়েছে।

আরও একটি লৌকিক উদাহরণ তুলে ধরেন বিশ্লেষকেরা। জানা যায়, কোনও এক সময় একই পরিবারে দুজন পুত্রবধূ ছিল। ছোট বধূ ছিল বেশ লোভী ও পেটুক। বাড়িতে ভাল কোনও খাবারের আয়োজন করলে ছোট বধূ চুরি করে তা খেয়ে ফেলত। আর দোষ দিত বাড়িতে পোষা বিড়ালের উপর। এদিকে বিড়াল ছিল দেবী ষষ্ঠীর বাহন। যার কৃপায় সন্তান ধারণ করে বধূরা। ষষ্ঠী দেবী এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ছোট বধূর সন্তান কেড়ে নেয়। পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে ছোট বধূ দেবীর ষষ্ঠীর কাছে ক্ষমা চায়। দেবী ক্ষমা করে তার সন্তান তাকে ফিরিয়ে দেয়।

এদিকে এই ঘটনা জানতে পারে ওই বাড়ির অন্যান্যরা। তারা ছোট বধূকে শাস্তি স্বরূপ বাপের বাড়ি যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে ছোট বধূর বাপের বাড়ি থেকে জামাই ও মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার নিমন্ত্রণ এলে এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায় এবং নিমন্ত্রণের ওই নির্দিষ্ট দিনকে জামাই ষষ্ঠী হিসাবে পালন করা শুরু হয়।

পরে ধীরে ধীরে এই রীতি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। এদিন জামাই ও মেয়ের কল্যাণের জন্য ও সুস্থ-সবল সন্তান ধারণের জন্য দেবী ষষ্ঠী বা অরণ্য ষষ্ঠীর পুজো করে থাকেন শাশুড়িরা। জামাইয়ের হাতে পরিয়ে দেন হলুদ সুতো। তারপর জামাইকে সাদরে খেতে দেন তার প্রিয় খাদ্যাদি।

Advertisement
Previous articleমুক্তা কীভাবে এল ঝিনুকের শরীরে?
Next articleসাবধান! লিচু কিন্তু সবার জন্য নয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here