চলতি বৈদিক বিবাহ পদ্ধতির বদল ঘটিয়ে দিয়েছেন নন্দিনী দেবী-রা

Advertisement
নন্দিনী দেবীদের বিবাহ পদ্ধতি একটু আলাদা রকমের। এক ঘন্টার মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুভদৃষ্টি, মালাবদল, সিঁদুর দান যেমন থাকে। তেমনি থাকে না কন্যাদান, কনকাঞ্জলির মতো আচারগুলি। মন্ত্রের সঙ্গে ‘রবীন্দ্র সঙ্গীত’ বিবাহ নিয়ম নিয়ে পরিবেশন করেন সেমন্তি ও পৌলোমী দেবী। তিনি বলেন, “যুগের সাথে আমাদের অনেক আচার যেমন যুক্ত হয়েছে, বাদও পরেছে অনেক।”

চলতি বৈদিক বিবাহ পদ্ধতির বদল ঘটিয়ে দিয়েছেন নন্দিনী দেবী-রা
Image by Brij Vaghasiya from Pixabay

রেমা মণ্ডল : তিনি কোনও গল্প বা উপন্যাসের কাল্পনিক চরিত্র নয়। বাস্তব জীবনের রক্ত-মাংসে গড়া এক মানবী। যিনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যুগ যুগ ধরে ঘটে চলা শাস্ত্র নিয়ে বন্ধকতাকে ভেঙে শাস্ত্রের নতুন ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। দীর্ঘ এক দশক ধরে পৌরোহিত্যের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। হ্যাঁ, তিনি বাংলার অন্যতম মহিলা পুরোহিত নন্দিনী ভৌমিক। যে কাজের দায়িত্ব এতদিন সামলে এসেছেন পৈতেধারী ব্রাহ্মণ সমাজ, সেই সমাজে দাঁড়িয়ে শাস্ত্রের ব্যাখ্যার গোঁড়ামি ভেঙে তুলে ধরেছেন হিন্দু শাস্ত্রের উদার মানসিকতাকে।

কথাটা শুনতে যতটা সহজ বলে মনে হবে, এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কাজটা অতটাও সহজ ছিল না। নন্দিনী ভৌমিক ছিলেন কলকাতা লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্রী। সেখানে একজন অধ্যাপিকা ছিলেন গৌরী ধর্মপাল। গৌরী ধর্মপাল বিবাহের নিয়মাবলী একসূত্রে গেঁথে এবং তার সাথে এ যুগের উপযোগী বিভিন্ন বিষয় যোগ করে একটি নতুন বিবাহ প্রস্তুতি পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন। যার নাম দিয়েছিলেন ‘পুরো নতুন বৈদিক বিবাহ’।

ছাত্রাবস্থা শেষ করে নন্দিনী ভৌমিক আধ্যাপনা শুরু করেন, সেই সঙ্গে প্রবেশ করতে হয় সংসার জীবনেও। দুই কন্যার মা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রুপ থিয়েটারে অভিনয়ও করেছেন। সংস্কার মুক্ত পরিবারে বড় হয়ে উঠলেও তাঁর বিয়ে হয় গোঁড়া হিন্দু পরিবারে। ফলে প্রতি মুহূর্তে শুরু হয় মানসিক সংগ্রাম। এই সময় আধ্যাপিকা গৌরী ধর্মপালের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে, আর শুরু হয় নতুন এক জীবনের খোঁজ। ততদিনে গৌরী দেবীর দেখান পথ ধরেই তিনি নিজের পথ তৈরি করে নিয়েছেন। সঙ্গে ছিলেন সহপাঠী রুমা দেবী।

তিনি বলেন, “ধর্ম হচ্ছে সেই চলার পথ, যে পথে সামাজিক মানুষ সমাজে সুন্দরভাবে চলতে পারে, একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে পারে, একে অপরকে ভালোবাসতে পারে। সুরক্ষিত একটা পথ।” তিনি আরও বলছেন, “ধর্ম শাস্ত্রের মধ্যে আছে ‘সোসিওলজি’, ‘ল’, ‘পলিটিক্যাল সায়েন্স’, ‘এথিক্স’, ‘সাইকোলজি’ এই সবকিছু।” তিনি বাহ্যিক আড়ম্বরে বিশ্বাস করেন না। এবিষয়ে তিনি বলেন, “ধর্ম বৈষম্য আমাদের সমাজকে শেষ করে দিচ্ছে।”

নন্দিনী দেবীদের বিবাহ পদ্ধতি একটু আলাদা রকমের। এক ঘন্টার মধ্যে বিবাহ অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুভদৃষ্টি, মালাবদল, সিঁদুর দান যেমন থাকে। তেমনি থাকে না কন্যাদান, কনকাঞ্জলির মতো আচারগুলি। মন্ত্রের সঙ্গে ‘রবীন্দ্র সঙ্গীত’ বিবাহ নিয়ম নিয়ে পরিবেশন করেন সেমন্তি ও পৌলোমী দেবী। তিনি বলেন, “যুগের সাথে আমাদের অনেক আচার যেমন যুক্ত হয়েছে, বাদও পরেছে অনেক।” তিনি আরও বলছেন, “এই মন্ত্রগুলি আজকের নয়, ঋক বেদের যুগ থেকে চলে আসছে। বেদের পদ্ধতি আমরা নতুনভাবে ব্যবহার করছি।”

Advertisement
Previous articleমঙ্গলে মানুষের বসতি গড়তে অনেক বড়ো চ্যালেঞ্জ নিতে হবে
Next articleসমাজের মুখ ভেসে ওঠে নাটকে : আমোদপুরে ৪ দিন ধরে চলবে নাট্যোৎসব

1 COMMENT

  1. ধর্মের গোঁড়ামির উর্ধ্বে মনুষ্যত্বের জয়গান হোক ওনার দেখানো পথ ধরেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here