গ্রাম-বাংলায় বর্ষাকালে বেড়ে যায় সাপের উপদ্রব

Advertisement
সাপের উপদ্রব বর্ষা ঋতুতেই সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। ভারতবর্ষে যত রকমের সাপ রয়েছে, তাদের মধ্যে গোখরো, কালাশ, চন্দ্রবোড়া ও কেউটে সবচেয়ে মারাত্মক। সাপে দংশন করলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। যেহেতু বিশ্ব প্রকৃতির বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করতে সাপের অবদান অনেক, তাই সাপ না মারা-ই উচিত। – ছবি : সংগৃহীত

%25E0%25A6%2597%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AE %25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%2582%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25BE%25E0%25A7%259F %25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B7%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%2587 %25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%2587%25E0%25A7%259C%25E0%25A7%2587 %25E0%25A6%25AF%25E0%25A6%25BE%25E0%25A7%259F %25E0%25A6%25B8%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0 %25E0%25A6%2589%25E0%25A6%25AA%25E0%25A6%25A6%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25AC 1
দেবকুমার দত্ত : “আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে / আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে”, রবি ঠাকুরের গান। বর্ষাকাল : আষাঢ়-শ্রাবণ। ভাদ্রেও রেশ থাকে, বিশেষ করে এই বাংলায়। খাল-বিল-নদী-নালা-ডোবা-পুকুর-ক্যানেল – সবই জলে থই-থই। ভিজে বাতাসে ভেসে আসে সোঁদা মাটির গন্ধ। পলছাতু, ব্যাঙের ছাতা তাদের নরম শরীরে উঠে দাঁড়ায়। এরাও মাটি বা উপরের আস্তরণ ভেদ করে ওঠে। বৃষ্টি পড়ে টাপুর-টুপুর। তারপর ঝরঝর, ঝিরঝির, রিমঝিম। রাতে পুকুরপাড়ে বা আলপথে ব্যাঙের বৃন্দগান। ঝিঁঝিঁর ঐকতান। কালো মেঘের বুক চিরে অশনি সংকেত দেখে বুক ঢিপঢিপ করে। “গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি গরজে গগনে গগনে”। শালিক-কাক ভিজে একসা। বাদল দিনের প্রথম কদমফুল তার সৌরভ ছড়িয়ে দেয় বেশ অকৃপণভাবে।
     এ-সবই তো ভালো। তবে সাপের উপদ্রব বাড়ে এই বাংলায়, এই বর্ষায়। সর্পদংশনে মৃত্যুর খবর আসে প্রায় প্রতিদিনই। তাই সতর্ক হওয়া আবশ্যক। বর্ষায় সাপ থেকে বাঁচতে সাবধান হওয়া বাঞ্ছনীয়।
     ভারতবর্ষে প্রায় আড়াইশো প্রজাতির সাপ আছে। তাদের মধ্যে গোটা কতক সাপ সবচেয়ে মারাত্মক বিষধর। আরেকটু বাড়িয়ে বলা যেতে পারে, গ্রাম-বাংলায় ৭-৮ রকম সাপ বেশ বিষধর। গোখরো, কালাশ, চন্দ্রবোড়া ও কেউটে- এই চারটি সাপ থেকে সাবধান।
%25E0%25A6%2597%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AE %25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%2582%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25BE%25E0%25A7%259F %25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B7%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%2587 %25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%2587%25E0%25A7%259C%25E0%25A7%2587 %25E0%25A6%25AF%25E0%25A6%25BE%25E0%25A7%259F %25E0%25A6%25B8%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0 %25E0%25A6%2589%25E0%25A6%25AA%25E0%25A6%25A6%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25AC 3
গোখরো
     সাপ আত্মরক্ষার জন্য কামড়ায়, তারা খাবার মনে করে ছোবল দেয়। গোখরো বা কেউটে সাপের কামড় ভয়ঙ্কর। কামড়ানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ক্ষতস্থান ফুলতে শুরু করে। তীব্র জ্বালা অনুভূত হয়। কিন্তু কালাশের কামড় বুঝতে পারা যায় না। যখন রোগীর চোখ শিবনেত্র অর্থাৎ পাতা এলিয়ে পড়তে শুরু করে বা কথা জড়িয়ে যায়, তখন বোঝা যায়, কালাশ সাপে কেটেছে। চন্দ্রবোড়ার কামড় বোঝা যায়, তবে বিষ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
     বিষ আসলে কি? বিষ অত্যন্ত ঘন প্রোটিন। যা বিভিন্ন ভারী রাসায়নিকের মিশ্রণ। সাপের দাঁত শিরায় ক্ষত সৃষ্টি করে বিষ ঢেলে দিলে মানুষের অবস্থা সংকটময় হয়ে ওঠে। বাঁধন দিয়ে বিষের প্রসার রোধ করা যায়, এটি ষোল আনা ভ্রান্ত ধারণা। অনেক সময় বাঁধনের ফলে পরবর্তীকালে ক্ষতকে ঘিরে পচন তথা গ্যাংগ্রিন হয়।
%25E0%25A6%2597%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AE %25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%2582%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25BE%25E0%25A7%259F %25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B7%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%2587 %25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%2587%25E0%25A7%259C%25E0%25A7%2587 %25E0%25A6%25AF%25E0%25A6%25BE%25E0%25A7%259F %25E0%25A6%25B8%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0 %25E0%25A6%2589%25E0%25A6%25AA%25E0%25A6%25A6%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25AC 2
চন্দ্রবোড়া
     কালাশ সাপ (Common Krait) বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন- কালাচ, কালাস, কালাছ, ঘামচাটা, শিয়রচিতি, নিশাচিতি ইত্যাদি। এশিয়ার সবচেয়ে বিষধর সাপ বলেও অনেকে একে মনে করেন। কালো গায়ের ওপর চুড়ির মতো সাদা বেষ্টনী দিয়ে কালাশকে সাজিয়েছে প্রকৃতি। কালাশের কামড় খুব একটা বোঝা যায় না। নিশাচর এই সাপটি মানুষের ঘুমন্ত অবস্থায় বিছানায় উঠে দংশন করে বেশি। এদের কামড়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর এক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়। কালাশের কামড় খেলে কারও ভোরের দিকে পেটব্যথা, পা ফোলা, জ্বরজ্বর ভাব, চোখের পাতা পড়ে আসা স্বাভাবিক।
     গোখরা, গোখরো বা গোখুরা (Spectacled Cobra) বেশ বড়ো ফণা মেলতে পারে। বিষ তীব্র হলেও কালাশের মতো নয়। কেউটে (Monocled Cobra) গ্রাম-বাংলায় বেশি পরিচিত ‘কেলে’ সাপ নামে। গোখরোর সাথে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে অত্যন্ত দ্রুত চলে আর ভীষণ বদরাগী প্রকৃতির হয়। কৃষিকাজে মাঠেঘাটে যারা কাজ করে, তারা কেউটে বা চন্দ্রবোড়ার শিকার হয় বেশি। চন্দ্রবোড়ার (Russell’s Viper) কামড়ে ক্ষতস্থানে বেশি রক্তক্ষরণ হয়। তাই দংশিত ব্যক্তি তীব্র ভয়ে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মারা যায়।
%25E0%25A6%2597%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AE %25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%2582%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25BE%25E0%25A7%259F %25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B7%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%2587 %25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%2587%25E0%25A7%259C%25E0%25A7%2587 %25E0%25A6%25AF%25E0%25A6%25BE%25E0%25A7%259F %25E0%25A6%25B8%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0 %25E0%25A6%2589%25E0%25A6%25AA%25E0%25A6%25A6%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25AC 4
কেউটে
     সাপে কামড়ালে রোগীকে ওঝা, ঠাকুরস্থান, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদির পরিবর্তে খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। ক্ষতস্থান সাবধান, ডেটল বা জল দিয়ে ধোয়া একেবারেই উচিত নয়। ক্ষতস্থানের উপরে বাঁধন দেওয়াও ঠিক নয়। বেশি নড়াচড়া না করাই ভালো, কেননা শরীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেশি নড়াচড়া করলে বিষ ছড়িয়ে পড়ে তাড়াতাড়ি। সাইকেল চালিয়ে, হেঁটে বা দৌড়ে রোগীর হাসপাতালে যাওয়া ঠিক নয়। যাওয়ার পথে ঝাঁকুনি কম হবে তেমন যানবাহনেই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। একমাত্র অ্যান্টি-ভেনম্ ইনজেকশন ও ডাক্তারি পরামর্শ সাপের কামড় থেকে বাঁচার উপায়।
     বিশ্ব প্রকৃতিতে সাপেরও অংশ আছে। দক্ষিণ মেরুবলয় ছাড়া সব মহাদেশেই সাপ আছে। সাপ নিরীহ অথচ সুন্দর জীব। স্বভাবতই তারা মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতেই বেশি ভালোবাসে। কিন্তু অকারণ ভয় আর অনিষ্ট আশঙ্কা করে মানুষ সাপকে মেরে ফেলতে চাই। ফসল নষ্টকারী ইঁদুর, পোকামাকড় ইত্যাদি ধ্বংস করে তারা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে। প্রকৃতির জীবৈচিত্র্যে তাদের অবদান অসীম। সে কথা স্মরণ করে প্রতি বছর ১৬ জুলাই বিশ্বসর্প দিবস পালন করা হয়।
Advertisement
Previous articleগিরগিটির রঙ পরিবর্তনের রহস্য আসলে লুকিয়ে রয়েছে ওদের ত্বকেই
Next article‘চাদর বাঁধনী’ পুতুল শিল্পকে বাঁচাতে বিশেষ কর্মশালা শান্তিনিকেতনের সৃজনীতে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here