গ্রহাণুতে সমুদ্র! এদিকে চাঁদে পড়ছে মরচে, বিস্ময়কর তথ্য দিলো চন্দ্রযান ১

Advertisement

সবচেয়ে বড়ো গ্রহাণু সেরেস সম্পর্কে এবার এক অদ্ভুত তথ্য দিল নাসার মহাকাশ যান ‘ডন’। সেরেসের ৩৫ কিলোমিটার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ‘ডন’ সেরেসের ভূ-পৃষ্ঠে এক গভীর নোনতা জলের সমুদ্র আবিষ্কার করল। যার গভীরতা প্রায় ৪০ কিলোমিটার। অপরদিকে ‘চন্দ্রযান ১’ তথ্য পাঠিয়েছে চাঁদের গায়ে মরচে পড়ার। মরচে পড়ার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন ও জলীয় বাস্পের উপস্থিতি। কিন্তু এই দুটিই চাঁদের পরিবেশে পাওয়া যায় না। তাই স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা পড়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। – ছবি : সংগৃহীত

ocean in asteroids the moon is rusting chandrayaan 1 gave wonderful information

রঞ্জন সরকার : জ্যোতির্বিজ্ঞানের উন্নতি যত ঘটছে, ততই উন্মুক্ত হচ্ছে মহাকাশের যতসব রহস্যজনক ঘটনা। আর সেই সব রহস্যগুলিকে একের পর এক সমাধান করে চলেছে পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাঁরা হাজির করছে নতুন নতুন বিস্ময়কর তথ্য।

     সেরেস নামের যে গ্রহাণুটি মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝে অবস্থান করছে, তার ভূ-পৃষ্ঠে রয়েছে গভীর এক নোনতা জলের সমুদ্র। সম্প্রতি আবিষ্কার হওয়া এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা এর নতুন নামও দিয়ে ফেলেছেন, ‘সমুদ্রের পৃথিবী’। এমনিতেই সেরেসের ব্যাস মাত্র ৯৫০ কিলোমিটার প্রায়। যা কিনা পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদের এক চতুর্থাংশের কিছুটা বেশি। অন্য গ্রহাণুদের থেকে অনেকটাই বড়ো হওয়ার জন্য একে ‘বামন গ্রহ’ও বলা হয়েছে।

     সেরেসের উত্তর গোলার্ধে ওকেটর নামক স্থানে ৯২ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের একটি ক্রেটার রয়েছে। নাসার বিজ্ঞানীদের ধারণা এই গর্তটি প্রায় ২২ মিলিয়ন বছর আগে কোনও এক মহাজাগতিক কারণে সৃষ্টি হয়েছিল। পরে জল সঞ্চিত হয়ে এটি এখন সমুদ্রের আকার ধারণ করেছে। ভূ-পৃষ্ঠের নিচে এটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত নেমে গিয়েছে। এই অদ্ভুত তথ্যটি ২০১৮ সালে সেরেসের ৩৫ কিলোমিটার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় সংগ্রহ করেছে নাসার মহাকাশ যান ‘ডন’। সৌরজগতের এই বামন গ্রহে এত বিশাল জলের ভাণ্ডার দেখে স্বাভাবিকভাবেই অবাক হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এবার সেখানে প্রাণের সন্ধান চালানোর কথাও ভাবছেন তাঁরা।

     এদিকে চিন্তা বাড়িয়েছে চাঁদ। ঝকঝকে চির পরিচিত এতদিনের চাঁদে নাকি মরচে পড়ছে এখন! বিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় মরচের জন্য প্রয়োজন পড়ে অক্সিজেন ও জল বা জলীয় বাস্পের। কিন্তু শুষ্ক চাঁদে যার কোনও অস্তিত্বই এখনও পর্যন্ত ধরা পড়েনি। তাহলে মরচে পড়ছে কীভাবে?

     সবচেয়ে মজার ব্যাপার, চাঁদের এই নতুন তথ্য কিন্তু নাসার পাঠানো কোনও মহাকাশ যানের সংগৃহীত নয়। এই তথ্য পাঠিয়েছে ভারতের ইসরোর পাঠানো স্যাটেলাইট ‘চন্দ্রযান-১’। যা কিনা সম্পূর্ণ নাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বের তাবড় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চিন্তা শক্তিকে। অক্সিজেন ও জল ছাড়া কিভাবে মরচে পড়ছে চাঁদে, তার রহস্য উন্মোচন করতেও ইতিমধ্যে গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা।

     চন্দ্রযান-১ এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ‘মুন মিনারোলজি’ মাপক যন্ত্র ‘এম-৩’। এখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে চাঁদে মরচে পড়ার ব্যাপারটি জানতে পেরেছে ইসরো। লৌহ মিশ্রিত মাটিতে মরচে পড়াটা এমন কিছু অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন পড়ে অক্সিজেন ও জলীয় বাস্পের। কিন্তু চাঁদের পরিবেশে এই দুটিরই অভাব রয়েছে। তাহলে কীভাবে মরচে পড়ছে, ভেবে পাচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি এই বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘পিয়ার রিভিউ জার্নাল সায়েন্স অ্যাডভান্স’-এ।

     একদিকে চিন্তা বাড়িয়ে চলেছে চাঁদ, অপরদিকে পৃথিবীর বাইরে প্রাণ সৃষ্টির আশা জিইয়ে রেখেছে ‘সমুদ্রের পৃথিবী’। অপার রহস্য নিয়ে আকাশ জুড়ে শুধুই মিটমিট করে চলেছে আলোর সারি। যদিও এক এক করে পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সমাধান করে চলেছেন মহাকাশের বিশাল রহস্যের। এই রহস্যের সমাধানও খুব শীঘ্রই করবেন তাঁরা।

Advertisement
Previous articleসবজির মূল্য বৃদ্ধির পর এবার খাদ্য সঙ্কটে গবাদি পশু
Next articleকালানুক্রমে যেভাবে সূচনা হল মহামায়ার আরাধনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here