গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় : তিনিই ছিলেন বাংলা গানের স্বর্ণযুগের শেষ তারকা

Advertisement

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের গায়িকা হওয়া সত্ত্বেও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়-এর আসল পরিচিতি আধুনিক বাংলা গানের জন্য। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি সঙ্গীত জগতে পা রেখেছেন। আধুনিক বাংলা গান এক সময়ে যাঁদের হাত ধরে পূর্ণতা পেয়েছিল, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ছিলেন তাঁদের অন্যতম। সেসময়ে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও মান্না দে-র সঙ্গে জুটি বেঁধে গেয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী বাংলা গান। সঙ্গীত প্রেমীদের দাবি, তাঁর গাওয়া ‘মধু মালতী’, ‘এ লগন গান শোনাবার’, ‘হয়তো কিছুই নাহি পাব’, ‘চন্দনও পালঙ্কে শুয়ে’, ‘যমুনা কিনারে’ গানগুলি কখনওই পুরনো হওয়ার নয়।


গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় : তিনিই ছিলেন বাংলা গানের স্বর্ণযুগের শেষ তারকা

জনদর্পণ ডেস্ক : মাত্র নয় দিন আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। আর এবার ওই একই পথের পথিক হলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে শেষ হল সম্পূর্ণ একটি স্বর্ণযুগের। আধুনিক বাংলা গানের পুরুষ কণ্ঠের পূর্ণতা পেয়েছিল যেখানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। নারী কণ্ঠকে সেখানে ‘চিরকালীন’ করে রেখেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। অন্যেরা অনেক আগে বিদায় জানালেও এবার বিদায় জানালেন এই ‘গীতশ্রী’।

গত ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা নাগাদ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ভর্তি করানো হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। তখন জানা গিয়েছিল, তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে। চিকিৎসায় তাঁর শরীর সাড়াও দিচ্ছিল। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা নাগাদ তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রাত ৮টা নাগাদ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

৪ অক্টোবর ১৯৩১ সালে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়-এর জন্ম কলকাতার ঢাকুরিয়াতে। তাঁর পিতা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও মা হেমপ্রভা দেবী। তিনি ছিলেন ৬ ভাই-বোনের মধ্যে সকলের ছোট। ১৯৬৬ সালে তিনি বিয়ে করেছিলেন কবি ও গীতিকার শ্যামল গুপ্ত-কে। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় উস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খান ও তাঁর পুত্র উস্তাদ মুনাওয়ার আলী খানের কাছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন পণ্ডিত সন্তোষ কুমার বসু, এ টি ক্যানন, চিন্ময় লাহিড়ীর কাছেও।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের গায়িকা হওয়া সত্ত্বেও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়-এর আসল পরিচিতি আধুনিক বাংলা গানের জন্য। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি সঙ্গীত জগতে পা রেখেছেন। আধুনিক বাংলা গান এক সময়ে যাঁদের হাত ধরে পূর্ণতা পেয়েছিল, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ছিলেন তাঁদের অন্যতম। সেসময়ে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও মান্না দে-র সঙ্গে জুটি বেঁধে গেয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী বাংলা গান। সঙ্গীত প্রেমীদের দাবি, তাঁর গাওয়া ‘মধু মালতী’, ‘এ লগন গান শোনাবার’, ‘হয়তো কিছুই নাহি পাব’, ‘চন্দনও পালঙ্কে শুয়ে’, ‘যমুনা কিনারে’ গানগুলি কখনওই পুরনো হওয়ার নয়।

বাংলা গানের পাশাপাশি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় অসংখ্য হিন্দি গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। ১৯৫০ সালে ‘তারানা’ সিনেমায় তিনি প্রথম হিন্দি গান গেয়েছেন। মোট ১৭টি হিন্দি চলচ্চিত্রের হিন্দি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।

কালজয়ী এই গায়িকা ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কারে। ১৯৭১ সালে ‘নিশিপদ্ম’ ও ‘জয় জয়ন্তী’ চলচ্চিত্রের গানের জন্য সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসাবে জাতীয় পুরস্কার। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে তিনি পেয়েছেন ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কার। ২০২২ সালে ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে মনোনীত হলেও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তা প্রত্যাখ্যান করেন।

Advertisement
Previous articleভয়ঙ্কর খাদ্য সঙ্কট-এ রয়েছে আফ্রিকার ৩ দেশের কোটি মানুষ
Next article‘ডিস্কো কিং’ বাপ্পি লাহিড়ী : সঙ্গীত জগতের আরও এক তারকা হারিয়ে গেলেন চিরতরে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here