ঘটনাটি বাংলাদেশের নলছিটি উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের ঘটনা। ওই অঞ্চলের সিদ্দিক মার্কেটের পাশের তালগাছে ঘাসপাতা দিয়ে বাসা বেধেছিল এক ঝাঁক বাবুই পাখি। বাসায় তাদের ছানাও ছিল। আর ওখানেই ছিল জালাল সিকদার নামে এক ব্যক্তির চাষের খেত। বাবুইদের অপরাধ ছিল তারা নিত্যদিন জালাল সিকদারের খেত থেকে ফসল খেয়ে যায়। তাতেই নাকি তিনি লোকসানের মুখে পড়েছেন। আর এর জবাব দিতে ওই ব্যক্তি তালগাছে থাকা কমপক্ষে ১১টি বাবুইয়ের বাসায় বাঁশের মাথায় কাপড় জড়িয়ে তা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। – ছবি : সংগৃহীত |

অনলাইন পেপার : এ কেমন মানসিকতা! নিজের স্বার্থে মানুষ এতটাও নিষ্ঠুর হতে পারে! না হয় পেটের দায়ে নিত্যদিন খেয়ে যায় খেতের ফসল। তাই বলে চূড়ান্ত শাস্তি স্বরূপ জীবন্ত পুড়িয়ে মারতে হবে তাদের! এত মধ্যযুগীয় শাস্তি পন্থাকেও হার মানিয়ে দিয়েছে আধুনিক মানুষ! ওরা অবোধ। জানে না কোন মাঠে রয়েছে কার ফসল। কারটা খাওয়া যাবে, আর কারটা নয়। যদিও অপরাধ যা করেছে তা সবই পেটের দায়ে, তবে চূড়ান্ত শাস্তি পেল তাদের ছোট্ট ছানারা। যারা উড়তেই শেখেনি এখনও।
প্রথম আলো সংবাদ সংস্থার সূত্র অনুযায়ী, ঘটনাটি বাংলাদেশের নলছিটি উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের ঘটনা। ওই অঞ্চলের সিদ্দিক মার্কেটের পাশের তালগাছে ঘাসপাতা দিয়ে বাসা বেধেছিল এক ঝাঁক বাবুই পাখি। বাসায় তাদের ছানাও ছিল। আর ওখানেই ছিল জালাল সিকদার নামে এক ব্যক্তির চাষের খেত। বাবুইদের অপরাধ ছিল তারা নিত্যদিন জালাল সিকদারের খেত থেকে ফসল খেয়ে যায়। তাতেই নাকি তিনি লোকসানের মুখে পড়েছেন। আর এর জবাব দিতে ওই ব্যক্তি তালগাছে থাকা কমপক্ষে ১১টি বাবুইয়ের বাসায় বাঁশের মাথায় কাপড় জড়িয়ে তা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এই ঘটনায় পুড়ে মারা যায় কমপক্ষে ৩৩টি বাবুই ছানা। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আসলে মারা গিয়েছে এর থেকেও বেশি।
এই ঘটনায় ওই এলাকায় যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি হয়। ক্ষোভে ফেটে পড়েন পাখিপ্রেমিরা। এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য ওই ব্যক্তির শাস্তিও চেয়েছেন অনেকে। ঝালকাঠি বনবিভাগে এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন তাঁরা।
বাবুই পাখি প্যাসারাইন বর্গের প্লোসিডাই পরিবারের পাখি। ঘাসপাতা দিয়ে অসম্ভব সুন্দর বাসা বুনতে পারার জন্য গ্রাম-বাংলায় এরা ‘তাঁতি পাখি’ নামেও পরিচিত। ইউকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গদেশে দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুইয়ের দেখা মেলে। এর মধ্যে বাংলা বাবুই ও দাগি বাবুই প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তবে দেশি বাবুই এখনও কোনওরকমে টিকে রয়েছে গ্রাম-গঞ্জে। এরা ঝাঁক বেধে মনুষ্য বসতির কাছাকাছি, বিশেষ করে চাষের খেতের আশেপাশে বাসা বাধতে পছন্দ করে। তাতে খাদ্যের জন্য প্রয়োজনীয় দানা-শস্য অতি সহজে পাওয়া যায়। অনেক সময় মানুষ অবিবেচকের মতো তাদের বাসা ভেঙে দেয় বা নষ্ট করে। যার ফলে খুব সহজেই বাবুইয়ের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এই গ্রাম-বাংলা থেকে।
ঈশ্বরকাঠি গ্রামের ওই নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটানোর জন্য পরে অবশ্য নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন জালাল সিকদার। প্রথম আলোকে তিনি জানিয়েছেন, নিত্যদিন ফসল খাওয়ার জন্য তিনি মেজাজ ঠিক রাখতে পারেননি। বাসা নষ্ট করে দিয়েছেন। এ জন্য অনুতপ্ত।