Advertisement
পরিবর্তন শুধু পৃথিবীর বাইরে ঘটছে না, ঘটছে অভ্যন্তরেও। তবে বাইরের পরিবর্তন সচক্ষে দেখে তার প্রতিকারের চেষ্টা করা সম্ভব। কিন্তু অভ্যন্তরের পরিবর্তন শুধু অনুমান করা যায়। প্রতিকার করার কোনও উপায় নেই। ৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে বেশ কয়েকবার পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল শক্তি প্রদর্শনের জন্য। ভূ-বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, তাতেই বেশ বড়-সড় পরিবর্তন ঘটেছে পৃথিবীর অভ্যন্তরে। – ছবি : সংগৃহীত
|
রঞ্জন সরকার : পৃথিবী হয়তো বুড়িয়ে গিয়েছে, কিন্তু জুরিয়ে যায়নি। পৃথিবীর গভীর থেকে তাই তো মাঝে মধ্যে বেরিয়ে আসে ফুটন্ত পাথর, ধাতু, লাভা। হয়তো এসব অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটিয়ে পৃথিবীবাসীদের মনে করিয়ে দিতে চায়, তার ভিতরটা এখনও সজীব, অগ্নিময়।
তামাম বিজ্ঞানীরা মহাকাশে যতটা এগোতে পেরেছেন, তার কিছুই বোধহয় পৃথিবীর অভ্যন্তরের বিষয়ে এগোতে পারেননি। তাই সেখানে কি ঘটছে, তার সঠিক উত্তর পাওয়া মুশকিল। তবে ভূ-কেন্দ্র নিয়ে যাঁরা গবেষণা করছেন, তাঁরা শোনালেন এক শিহরণ জাগানো অনুমান। অনেক দিন আগেই তাঁরা জানিয়েছিলেন পৃথিবীর চৌম্বকদণ্ডটি ভেঙে গিয়েছে এবং ক্রমশই পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র পালটাতে শুরু করেছে। এবার শোনালেন অন্য এক বিপদের কথা। তাঁদের বক্তব্য থেকে জানা যাচ্ছে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঘটে চলেছে বড়-সড় কোনও পরিবর্তন। আর এটি ঘটছে পৃথিবীর ‘ইনার কোর’ অঞ্চলে।
ভূ-বিজ্ঞানীদের মতানুযায়ী, এই পরিবর্তন শুরু হয়েছে প্রায় ৭০-দশকের গোড়ার দিক থেকে। সেসময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়ার চলছিল ঠাণ্ডা যুদ্ধ। নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য অল্পদিনের মধ্যেই এই সময়ে অন্তত শ’খানেক পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরীক্ষা চালিয়েছিল তারা। তার মধ্যে ১৯৭১ সালে নোভায়া জেমলিয়া দ্বীপে রাশিয়া একটি বড়-সড় পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। এই বিস্ফোরণের শক্তি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, তার তেজস্ক্রিয়তা পৃথিবীর অভ্যন্তরের ‘ইনার কোর’-এ ধাক্কা খেয়ে অর্থাৎ প্রতিফলিত হয়ে আবার ভূ-পৃষ্ঠে ফিরে আসে। এই ঘটনার ৩ বছর পর রাশিয়া ওই একই জায়গায় আবার আর একটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়। ভূ-বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, পৃথিবীর ‘ইনার কোর’ এতে দারুণ প্রভাবিত হয়েছে।
এরপর থেকে ভূ-বিজ্ঞানীরা টের পাচ্ছেন, পৃথিবীর অভ্যন্তরে ক্রমাগত হাতুড়ি পেটার মতো শব্দ হয়ে চলেছে। যদিও এসবই বিজ্ঞানীদের অনুমান। কারণ অভ্যন্তরে কি ঘটছে। তা সঠিকভাবে বলার কোনও উপায় নেই।
এর পাশাপাশি আরও একটি অদ্ভুত বিষয় ভূ-বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন লক্ষ্য করছেন। পৃথিবীর আহ্নিক গতি (নিজের অক্ষের ওপর দাঁড়িয়ে নিজের চারপাশে পাক খাওয়া) ভূ-অভ্যন্তরের কোরের ঘূর্ণন গতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এক্ষেত্রে পৃথিবীর কোর ঘুরছে আরও দ্রুত। পৃথিবী পৃষ্ঠ যেমন ২৪ ঘণ্টায় একবার নিজের চারপাশে ঘুরে আসে, কোরের এই ঘূর্ণন তার অনেক আগেই শেষ হয়ে যায়।
বিজ্ঞানী ভিদালের অনুমান, পৃথিবীর নিরক্ষরেখার ওপর কাউকে দাঁড় করিয়ে রেখে ওই স্থান থেকে উল্লম্বভাবে ভূ-অভ্যন্তরে যদি অপরজনকে দাঁড় করানো যায়, এক বছর পর দেখা যাবে ভূ-অভ্যন্তরের ব্যক্তিটি ৪.৮ কিলোমিটার এগিয়ে রয়েছে।
অর্থাৎ পৃথিবীর কেন্দ্র আর বাইরের অংশের ঘূর্ণন গতির সঙ্গে পার্থক্য থেকে যাচ্ছে অনেকটাই। পরিবর্তন এখানে অবশ্যই ঘটেছে। তাই কোন খেয়ালে পৃথিবী কবে আবার তার নিজের কী পরিবর্তন ঘটাবে তা শুধু পৃথিবী-ই বলতে পারবে। এরই সঙ্গে আবার পরমাণু বিস্ফোরণ, যেন গরম তেলে জল ছেটানোর মতো ঘটনা। দুশ্চিন্তা তাই থেকেই যাচ্ছে।
Advertisement
ঘটনাটা জানা থাকলেও, এখানে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেক ধন্যবাদ।