Advertisement
বিজয় ঘোষাল : এবারও সপ্তমীর সকালে মা বাসন্তীরমন্দির চত্বরে বেজে উঠেছিল একটানা ঢাক-কাঁসরের শব্দ। কিন্তু সেই শব্দ আকর্ষণ করতে পারেনি এলাকাবাসীদের। কারণ দেশ জুড়ে এখন ‘লকডাউন’ চলছে। করোনা আতঙ্কে ঘর ছাড়া হতে নারাজ সমস্ত গ্রামবাসী। এখানে করোনা যেন সব কিছুকেই দূরে সরিয়ে রেখেছে।
বীরভূম জেলার পশোয়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ভট্টাচার্য বাড়ির বাসন্তী পুজো এবারও শুরু হয়েছে প্রথা মেনেই। তবে জৌলুস নেই একেবারেই। চেনা জনসমাগম যেন হারিয়ে গিয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে। বোঝা গেল, করোনা এখানে দারুণভাবে প্রভাব ফেলেছে এবছর।
কিন্তু তাই বলে পুজোর আয়োজনেও কোনও খামতি রাখতে চাইনি ভট্টাচার্যপরিবার। ৩১ মার্চ ছিল সপ্তমী। নিয়ম মেনেই সম্পূর্ণ হয়েছে সপ্তমী পুজো। দীর্ঘদিন থেকেই এই বাসন্তী পুজো পশোয়া গ্রামের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। সারা বছর যাঁরা গ্রামের বাইরে কর্মজীবন কাটাতে ব্যস্ত থাকেন, তাঁরাও কিছুদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরতে চান। এছাড়াও এই সময়ে আগমন ঘটে প্রচুর বহিরাগতেরও। পুজোর কয়েকটা দিন বেশ হইচই করেই সময় কেটে যায় তাঁদের। কিন্তু এবারে তেমন কিছুই হতে দেখা যায়নি।
ভট্টাচার্য পরিবারের সবচেয়ে প্রবীণ অনন্দাশংকর ভট্টাচার্য, যিনি প্রতিবছর পুজো শুরুর চারদিন আগেই গ্রামে ফিরে আসেন। তিনিও এবারের বাসন্তী পুজোয় যোগ দিতে পারেননি। অনুশোচনা প্রকাশ করে তিনি জানালেন, তাঁর বাসন্তী পুজোয় যুক্ত না হতে পারা এবারই প্রথম। বছরের অন্য সময়ে গ্রামে না ফিরতে পারলেও, এই সময়ে তাঁকে অবশ্যই ফিরতে হয়। কিন্তু এবার আর ফেরা হল না।
ভট্টাচার্য পরিবার সূত্রে জানা গেল, এই পরিবারের আদি বসতি ছিল বোলপুর-শ্রীনিকেতন লাগোয়া আদিত্যপুর গ্রামে। বাসন্তী পুজোর পৌরোহিত্যের জন্য তৎকালীন জমিদার প্রায় ২০০ বছর আগে এই পরিবারকে পশোয়া গ্রামে নিয়ে আসে। জমিদার সরদা সরকার ১২২৮ বঙ্গাব্দে একটি মন্দিরও প্রতিষ্ঠা করেন। পরে পত্তনী প্রথা চালু হলে গ্রামের জমিদারী ও সেই সঙ্গে পুজোর দায়িত্ব গিয়ে বর্তায় পাশ্ববর্তী সাংড়া গ্রামের জমিদার বেচারাম মুখোপাধ্যায়ের হাতে। তখন থেকে বাসন্তী পূজো হতে থাকে সংড়ার জমিদার এবং পশোয়ার ভট্টাচার্য বাড়ির তত্ত্বাবধানে। তাও পরে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে পুজোর পুরো দায়িত্ব চলে আসে ভট্টাচার্য পরিবারের হাতে।
কর্মসূত্রে ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা বাইরে থাকলেও এই পুজোর সময়ে তাঁদের প্রত্যেককেই প্রায় ফিরতে হয় গ্রামে। কিন্তু এবছর তাঁদের অনেকেই ফিরতে পারেননি দেশ জুড়ে চলা ‘লকডাউন’-এর কারণে। ভট্টাচার্য পরিবারের এক সদস্য জানালেন, সরকারি নির্দেশ মেনে পুজোকে ঘিরে যাতে জমায়েত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি, গ্রামবাসীরা যেন করোনায় আতঙ্কিত না হয়ে পুজো দিতে আসতে পারেন, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।
- All Rights Reserved
Advertisement