করোনার জন্য শুধু বাদুড়কে দোষ দেওয়া ঠিক নয়, দাবি বিজ্ঞানীদের

Advertisement
পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা সংক্রমণের জন্য অনেকেই বাদুড়কে দায়ী করছেন। আর এর জন্যেকিছু দেশে রীতিমতো বাদুড় নিধনও করা হয়েছে। নিধনকারীদের বিশ্বাস, বাদুড় নিধন করলেই নাকি করোনার মতো মহামারির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে বাদুড় বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মহামারি তাড়াতে বাদুড় নিধন সম্পূর্ণ একটি ভুল যুক্তি। বাদুড় স্ব-ইচ্ছায় মানুষের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে দেয়নি। বিশ্ব জুড়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ার জন্য মানুষ নিজেই দায়ী।

করোনার জন্য শুধু বাদুড়কে দোষ দেওয়া ঠিক নয়, দাবি বিজ্ঞানীদের
Image by Syaibatul Hamdi from Pixabay

অনলাইন পেপার : এই বিশ্বে বাদুড়ই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী যারা পাখিদের মতো আকাশে উড়তে পারে। তবে দিনের আকাশে কখনওই তাদের দেখা যায় না। ওড়ার জন্য তারা বেছে নেয় রাতের আকাশকে। বাদুড় দেখতেও বেশ কদাকার। ঠিক যেন ইঁদুরের পিঠে ডানা যুক্ত করলে যেমনটি হয়। অত্যন্ত নিরীহ স্বভাবের এই প্রাণীটিকে নিয়ে অবশ্য মানুষের আতঙ্কের শেষ নেই। বিভিন্ন গল্প-কাহিনীতেও এদের বিনা কারণে আতঙ্কের রূপ দেওয়া হয়েছে।

বাদুড়ের প্রতি মানুষের আরও বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে বিশ্ব জুড়ে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর। গত বছরের ডিসেম্বরে চিনের ইউনান প্রদেশে প্রথম এই সংক্রমণের দেখা মেলে। তারপর ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে গোটা পৃথিবী জুড়ে। কিভাবে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করল তার রহস্য আজও নিশ্চিতভাবে ভেদ করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তবে অনেকেই এর জন্য দায়ী করছেন হর্স-শু নামের এক প্রজাতির বাদুড়কে। কারণ গবেষণায় ওই প্রজাতি সহ আরও অন্য প্রজাতির বাদুড়ের শরীরে কোভিড ১৯ পাওয়া গিয়েছে।

এই ঘটনার জেরে আবার কিছু দেশে রীতিমতো বাদুড় নিধনও করা হয়েছে। নিধনকারীদের বিশ্বাস, বাদুড় নিধন করলেই নাকি করোনার মতো মহামারির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে এই প্রসঙ্গে বাদুড় বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মহামারি তাড়াতে বাদুড় নিধন সম্পূর্ণ একটি ভুল যুক্তি। তবে এটা ঠিক, বাদুড় অবশ্যই বিভিন্ন রোগের বাহক। তাই বলে বাদুড়ের মতো পরিবেশ বান্ধবকে নিধন করা একেবারেই যুক্তি সঙ্গত নয়। তাদের আরও দাবি, এই বাদুড় কিন্তু স্ব-ইচ্ছায় মানুষের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে দেয়নি। বিশ্ব জুড়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ার জন্য মানুষ নিজেই দায়ী।

বিবিসি সংবাদ মাধ্যমে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে ইউনান প্রদেশে আবিস্কৃত হর্স-শু বাদুড়ের শরীরে সার্স ভাইরাসের জিন মিলেছিল। গবেষকরা তখনই সতর্ক করেছিল এই রকমই কোনও মহামারি সম্পর্কে। তাদের ধারণা যে পুরোপুরি মিথ্যে ছিল না, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে ২০২০ সালে পৌঁছে।

বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের ওই রিপোর্ট থেকে আরও জানা যাচ্ছে, বিজ্ঞানীদের ধারণা নতুন সংক্রমিত রোগের চার ভাগের তিন ভাগই আসছে কোনও না কোনও প্রাণীর থেকে। আর এই ব্যাপারে ২০০২ সালে সার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরই সতর্ক করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে এই সব সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার জন্য বাদুড় সহ অন্য সব প্রাণীদের কখনওই সরাসরি দোষ দিতে নারাজ তাঁরা। কারণ ওই সব প্রাণী বহু যুগ ধরেই বিভিন্ন রোগের জীবাণু বা ভাইরাস বহন করে চলেছে। তাদের সংস্পর্শে না গেলে কখনওই ওই জীবাণু বা ভাইরাস মানুষের শরীরে আসে না।

এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মানুষই ধ্বংস করছে প্রকৃতিকে। নিজেদের বাসস্থান, কৃষিক্ষেত্র বৃদ্ধির জন্য বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থলগুলি ক্রমশই দখল করে নিচ্ছে মানুষ। এমনকি ব্যবসা ক্ষেত্রেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে ওই সমস্ত বন্যপ্রাণীরা খুব সহজেই মানুষের সংস্পর্শে আসতে বাধ্য হচ্ছে। যদি তাদের আবাসস্থলগুলিকে দখল না করা হয়, বন্যপ্রাণীদের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রায় বাধা না দেওয়া হয়, তবে কোনওভাবেই তারা মানুষের সংস্পর্শে আসতে পারবে না। আর করোনার মতো অন্য সব মহামারি রোগের সৃষ্টিকেও রোধ করা যাবে।

Advertisement
Previous articleপিঁপড়ে : ক্ষুদ্র কিন্তু অবাক করে দেবে যে কাউকেই (ভিডিও সহ)
Next articleএবছর (২০২০) যাঁরা নোবেল পুরস্কার পেলেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here