ওড়িশার এই জনপ্রিয় শিল্পকর্মটিকে এবার লোকআঙ্গিকে তুলে ধরতে এক বিশেষ উদ্যোগ নিল পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের শান্তিনিকেতনের সৃজনী শিল্পগ্রাম। গত ৮ আগস্ট সৃজনী শিল্পগ্রামে শুরু হয়েছে এই রুপোর তারের কারুকার্যের ওপর বিশেষ কর্মশালা। যা চলবে আগামী ১৭ আগস্ট পর্যন্ত। ওড়িশা থেকে আগত তিন জন শিল্পী এই কর্মশালাই অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী পঙ্কজ কুমার সাহু। – ছবি : জনদর্পণ প্রতিনিধি |

বিজয় ঘোষাল : ওড়িশার কটক শহরকে ভারতের ‘রুপোর শহর’ বলা হয়। কারণ পূর্বভারতের এই রাজ্যের কটক শহর ও শহরতলির গ্রামের বাসিন্দাদের অধিকাংশের পেশা রুপোর কারুকার্য করা। এখানে শিল্পীরা রুপোর তারের উপাদানের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের পাখি, প্রানী, দেব-দেবীর নান্দনিক ও আকর্ষণীয় শিল্পদ্রব্য তৈরি করেন।
রুপোর তারের এই শিল্পকর্মটি ওড়িশার বেশ পুরনো লোকশিল্পের অন্যতম। এই শিল্পের স্থানীয় নাম ‘তারাকাসি’। ‘তার’ শব্দের অর্থ ধাতুর সরু সুতো এবং ‘কাসি’ শব্দের অর্থ নকশা বা ডিজাইন। এখানে শিল্পীরা রুপোর তারকে গলিয়ে বিভিন্ন আকৃতিতে নিয়ে আসেন। যদিও রুপোর তারের তৈরি এই শিল্পকর্মটি অত্যন্ত জটিল, সূক্ষ্ম ও সময় সাপেক্ষ কাজ।
ওড়িশার এই শিল্পের খ্যাতি এখন বিশ্বজোড়া। তবে কীভাবে ওড়িশায় এই শিল্পের পত্তন হয়েছিল তার সঠিক উত্তর আজ আর কেউ-ই দিতে পারেন না। তবে অনেকের ধারণা, এই শিল্পকর্মটি ৫০০ বছরেরও প্রাচীন। মোঘল যুগে এর গোড়াপত্তন ঘটেছিল।

ওড়িশার এই জনপ্রিয় শিল্পকর্মটিকে এবার লোকআঙ্গিকে তুলে ধরতে এক বিশেষ উদ্যোগ নিল পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের শান্তিনিকেতনের সৃজনী শিল্পগ্রাম। গত ৮ আগস্ট সৃজনী শিল্পগ্রামে শুরু হয়েছে এই রুপোর তারের কারুকার্যের ওপর বিশেষ কর্মশালা। যা চলবে আগামী ১৭ আগস্ট পর্যন্ত। ওড়িশা থেকে আগত তিন জন শিল্পী এই কর্মশালাই অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী পঙ্কজ কুমার সাহু। শিল্পী পঙ্কজ কুমার সাহু তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৪-৯৫ সালে বস্ত্রমন্ত্রকের কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি শৈল্পিক কারুকার্য ও কারিগরি দক্ষতার সঙ্গে রুপোর তারের সাহায্যে তৈরি করছেন রুপোর সজ্জিত রথ।
বিলুপ্তপ্রায় এই শিল্পের উন্নতি হেতু এই কর্মশালার আয়োজন, জানালেন পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতিকেন্দ্রের অধিকর্তা গৌরী বসু। অন্যদিকে সৃজনী শিল্পগ্রামের আধিকারিক অমিত অধিকারী জানালেন, লুপ্তপ্রায় লোকশিল্পের গুরুত্ব ও লোকশিল্পীদের এই কাজে উৎসাহ জোগাতে এই রকম কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে সৃজনী শিল্পগ্রামে। এছাড়া পরবর্তী ক্ষেত্রে রুপোর তারের তৈরি কারুকার্য যেন আরও বেশি মাত্রায় সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়তে পারে, এই আশাও তিনি করছেন। তাতে মানুষের আগ্রহ এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করবে।