মায়ানমার ও লাওসের সীমান্তবর্তী চিনের একটি সংরক্ষিত বনভূমিতে তাদের আবাস ছিল। পরে এখান থেকেই তারা উত্তরে যাত্রা শুরু করে। হাতির দলটিতে পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা মিলিয়ে মোট ১৫টি হাতি রয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সাড়ে ৫০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে উপস্থিত হয়েছে চিনের কানমিং শহরের পাশে। |

অনলাইন পেপার : স্থান পরিবর্তন করা প্রাণীদের একটি স্বাভাবিক স্বভাব। এতে অবাক হওয়ার কোনও কারণ থাকতে পারে না। তবে সেই স্থান পরিবর্তন যদি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অনবরত ও অক্লান্তভাবে চলতে থাকে, তবে সেটিকে অস্বাভাবিক না বলে থাকা যায় না। চিনের একদল হাতি এখন এই অস্বাভাবিক আচরণই করে চলেছে। নির্দিষ্টভাবে যার কোনও কারণ বা ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
এমনিতেই পরিমাণ মতো খাদ্য ও পানীয়, উপযুক্ত নিরাপত্তা ও যৌনসঙ্গমের জন্য প্রাণীরা নিজের পুরনো আবাস ত্যাগ করে থাকে। বিপদের আভাস পেলেও তারা স্থান পরিবর্তন করতে চাই। যদিও বন্যপ্রাণীদের নির্দিষ্ট কোনও আবাসও থাকে না। তবে জন্মের পর জন্মস্থান সংলগ্ন পরিবেশই তাদের মুখ্য বাসস্থান হয়ে ওঠে। কোনও কারণে স্থান পরিবর্তন করলেও খুব বেশি দূর তাদের বিচরণক্ষেত্র তৈরি হয়ও না।
আফ্রিকার বন্যপ্রাণীরা, বিশেষ করে বাফেলো, বাইসন, জেব্রা প্রভৃতি বছরের নির্দিষ্ট সময় খাদ্যের প্রাচুর্যের জন্য বার কয়েক স্থান পরিবর্তন করে ঠিকই, কিন্তু পুনরায় তারা আবার নিজেদের পুরনো বাসস্থানে ফিরে আসতে চায়। পরিযায়ী পাখিরাও বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বিচরণ করে থাকে। তবে এসবই একটি নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট পথ ধরে হয়ে থাকে। বছরের পর বছর এইভাবেই স্বাভাবিক নিয়মে তাদের বিচরণ চলে।
তবে চিনের ওই চলমান হাতির দলটির অদ্ভুত আচরণের কোনও ঠিকঠাক যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। চিনের একাধিক সংবাদ মাধ্যমে এই নিয়ে বিস্তর লেখালিখিও হয়েছে। সেখান থেকে জানা যাচ্ছে, মায়ানমার ও লাওসের সীমান্তবর্তী চিনের একটি সংরক্ষিত বনভূমিতে তাদের আবাস ছিল। পরে এখান থেকেই তারা উত্তরে যাত্রা শুরু করে। হাতির দলটিতে পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা মিলিয়ে মোট ১৫টি হাতি রয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সাড়ে ৫০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে উপস্থিত হয়েছে চিনের কানমিং শহরের পাশে।
এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে তারা কম ঝুঁকিও নেয়নি। চলার পথে একাধিক বন, গ্রাম, ফসলক্ষেত, শহর, ঘন বসতি যুক্ত অঞ্চল, পাহাড়, ঝর্ণা পেয়েছে তারা। কোথাও বিশ্রাম নিয়েছে, কোথাও বা অনবরত হেঁটে পেরিয়েছে। তবে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্য ঠিক কোথায়, সে বিষয়ে কোনও বিশেষজ্ঞই সঠিক ধারণা দিতে পারছেন না।
কিছু বিশেষজ্ঞের দাবি, চিনের যে সংরক্ষিত অঞ্চলে হাতির দলটি এতদিন বিচরণ করত, সেখানে হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য সঙ্কটের জন্য তারা নতুন আস্থানার খোঁজে বেরিয়ে পড়েছে। তাই বলে এতটা পথ! এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দিচ্ছেন, অনবিজ্ঞ পাণ্ডা হাতির পাল্লায় পড়ে হাতির দলটি হয়তো পথ হারিয়ে ভুল পথে চলেছে।
তবে সঠিক কোনও যুক্তি এখনও দাঁড় করাতে পারেননি কোনও বিশেষজ্ঞ। হাতির দলটি আসলে কোথায় যেতে চাইছে, এই বিষয়েও কোনও বিশেষজ্ঞ স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না। হয়তো হাতি-রাই জানিয়ে দেবে সেই উত্তর, যেদিন পথ চলা শেষ হবে তাদের। আপাতত ড্রোন ব্যবহার করে ওই দলটির দিকে গোপনে নজর রেখে চলেছে চিন প্রশাসন। তাদের খাদ্যেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।