Advertisement
রঞ্জন সরকার : করোনা যখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্ব জুড়ে, মানুষ যখন তার থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে ব্যস্ত, ঠিক এই সময়েই পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সন্ধান পেলেন আর এক বিপদের। সুমেরু বা উত্তর মেরুর আকাশের ওজোন স্তরে সৃষ্টি হয়েছে এক বিশাল গর্তের। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি জানিয়েছে, কোপার্নিকাস সেন্টিনেল ৫পি উপগ্রহে ধরা পড়েছে ওই গর্তের অস্তিত্ব।
সুমেরুকে বলা হয় মেরুজ্যোতির দেশ। টানা ছয় মাস রাত থাকার সময়ে অন্ধকার আকাশে লাল, সবুজ, হলুদ বা বেগুনী রঙের ফিতার মতো অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে পাওয়া যায় এখানে। তা নিয়ে স্থানীয়রা রচনা করেছে একাধিক অলৌকিক কাহিনীও। এঁদের অনেকেরই ধারণা, মেরুজ্যোতি আসলে স্বর্গের সিঁড়ি। অবশ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এটি কোনও অলৌকিক ঘটনা নয়। মহাজাগতিক রশ্মি সুমেরু অঞ্চলের পাতলা ভ্যান অ্যালেন সীমারেখা ভেদ করে বায়ুস্তরে পৌঁছলে বায়ুর কণার সঙ্গে সংঘর্ষে এই অপূর্ব মায়াময় মেরুজ্যোতি সৃষ্টি করে। এ অঞ্চলে লোক বসতি খুবই কম। এস্কিমোরাই সংখ্যাই এখানে সর্বাধিক। আর আছে সাদা বা মেরু ভাল্লুক। তাদের অবস্থাও খুব যে ভালো তা বলা যাবে না।
![]() |
ছবি : সংগৃহীত |
যাইহোক, পরিবেশ বিজ্ঞানীদের এখন সবচেয়ে বড়ো চিন্তার বিষয়, সুমেরুর আকাশে এই ওজোন স্তরে সৃষ্টি হওয়া নতুন গর্ত নিয়েই। পৃথিবীতে ওজোন স্তরের গুরুত্ব অনেক। অনেকে একে ‘পৃথিবীর ছাতা’-ও বলে থাকেন। মহাকাশ থেকে ছুটে আসা মহাজাগতিক রশ্মি ও সূর্যের মারাত্মক ক্ষতিকর অতি বেগুনী রশ্মির অধিকাংশই পৃথিবীতে প্রবেশ করতে পারে এই স্তরের জন্যেই। ফলে রক্ষা পায় জীবকুল। তাই ওজোন স্তরকে পৃথিবীর আশীর্বাদ বললেও ভুল কিছুই বলা হবে না। এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তরে বিশাল গর্ত তৈরি হওয়ায় পরিবেশ বিজ্ঞানীদের চিন্তা হওয়াটাই স্বাভাবিক।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের দাবি, সুমেরুর আকাশে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা হঠাৎ করে কমে গিয়েছে। ফলে ওই অঞ্চলের ঘূর্ণাবর্ত অনেকটাই স্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। আর সেই সঙ্গে সুমেরুর বায়ুমণ্ডলে অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে ক্লোরিন ও ব্রোমাইনের মতো বিষাক্ত গ্যাসের উপস্থিতি, যা মারাত্মক ক্ষতি করছে ওজোন স্তরকে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে ওই বিশাল গর্ত।
তবে এখনই আশঙ্কার কোনও কারণ নেই বলেও জানিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, যদি গর্তের আকার সুমেরুর প্রান্তর ছাড়িয়ে গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত প্রসারিত হত, তবেই কিছুটা চিন্তার বিষয় হতে পারত। তাঁরা আশা করছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রাকৃতিকভাবে ওই গর্ত বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক নিয়মে আবার পূর্বের মতো মিলিয়ে যেতে পারে। যদি তাই হয়, তাহলে কল্যাণই হবে পৃথিবীর পক্ষে।
Advertisement