মঙ্গলের মাটিতে জমির দাম একর প্রতি এখন মাত্র ৩ হাজার টাকা। শুনতে অবাক লাগলেও ইতিমধ্যেই মঙ্গলের মাটিতে জমি কিনে ফেলেছেন ৫০ লক্ষ মানুষ। এমনকি সেখানে জমি কেনার সুযোগ পেয়েছেন শ্রীরামপুরের শৌনক দাস। শুধু জমি কেনায় নয়, মিলবে সেই জমির দলিল ও ম্যাপও। যদিও এখনই সেখানে জমির মালিক বসবাস করার সুযোগ পাবেন না। অদূর ভবিষ্যতে বসবাসের সুযোগ তৈরি হলে নিশ্চয় তা হবে অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। – ছবি : সংগৃহীত |
রঞ্জন সরকার : শ্রীরামপুরের শৌনক দাস জমি কিনেছেন। তা কিনতেই পারেন। টাকা যখন আছে, আর প্রয়োজন যখন রয়েছে, তখন না কেনার কোনও কারণও নেই। কিন্তু জমি কিনেছেন কোথায়? এক্কেবারে পৃথিবীর বাইরে! মঙ্গলের মাটিতে। শুনতে অবাক লাগলেও সত্য। তাও একটু আধটু নয়, রীতিমতো ১ একর জমি মাত্র ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি কিনে ফেলেছেন।
শুধু শ্রীরামপুরের শৌনক দাস-ই বা কেন, সদ্য প্রয়াত বলিউড সুপারস্টার সুশান্ত সিংহ রাজপুতেরও পৃথিবীর বাইরে জমি কেনা ছিল চাঁদের মাটিতে। এমনকি আর এক বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানেরও জমি কেনা রয়েছে চাঁদে। অর্থাৎ চাঁদ বা মঙ্গলে জমি কেনাটা একেবারেই মজার বা আজগুবি কাহিনী নয়।
মহাকাশে জমি বিক্রির কপিরাইট নিয়ে বসে রয়েছে ‘বাইমার্স’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। তারা দাবি করছে, শুধু তারাই একমাত্র সংস্থা, যারা পৃথিবীর বাইরে অর্থাৎ মহাকাশে জমি বিক্রি করতে পারে। তবে তাই নয়, এই সংস্থা গত ৩০ বছর ধরে মহাকাশে নক্ষত্র বা তারা-দের নামকরণ করার কাজটাও করে আসছে। কি বিশাল আয়োজন, ভাবলে অবাক হতে হয়! ১৭৬টি দেশের এখনও পর্যন্ত ৫০ লক্ষ মানুষ তাদের কোম্পানির পরিষেবা নিয়েছেন।
তবে মঙ্গলের জমি এত সস্তা কেন, তার অবশ্য কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। শুধু জানা গিয়েছে, অন্য সাধারণ বিষয়ের মতো সেখানকার জমির দাম কখনও বাড়ে, আবার কখনও কমে। এখন যেমন সেখানে জমির দাম কম রয়েছে।
পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় সরকারি বা বৈধভাবে জমি কিনলেই যেমন পাওয়া যায় সেই জমির দলিল, ম্যাপ, রেজিস্ট্রি পেপারস। ঠিক তেমনি মঙ্গলের মাটিতে জমি কিনলেও বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যাবে। তবে তার জন্য অবশ্য কিছু খরচ করতে হবে।
তবে পৃথিবীর ক্ষেত্রে জমি কেনার ব্যাপাটা সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে সরজমিনে গিয়ে চাক্ষুষ জমি দেখে আসা সম্ভব। কিন্তু মঙ্গল যে অনেক দূরে! যেখানে মানব বিহীন মহাকাশ যান পাঠানো দুষ্কর, সেখানে সরজমিনে জমি দেখে আসা একেবারেই অসম্ভব। এক্ষেত্রে বৈধ জমি কেনা হবে তো?
১৯৬৭ সালে আউটার স্পেস ট্রিটি-তে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশের কোনও গ্রহে জমি কেনার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল সোভিয়েত রাশিয়া, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-কে। এবিষয়ে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছিল। অনেক পরে আরও ১৪টি দেশ এই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে।
পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি কমার্শিয়াল স্পেস লঞ্চ কমপিটিটিভ অ্যাক্ট নিয়ে আসে, এখানে উল্লেখ করা হয়, যে কোনও বেসরকারি সংস্থা এই বেচার কাজটি করতে পারবে। তবে সেখানে নাসা গবেষণা চালানোর প্রয়োজন বুঝলে সেই জায়গাটি ছেড়ে দিতে হবে। অর্থাৎ সেই জায়গাটি তখন চলে যাবে সরকারের হাতে।
তাহলে আর দেরি কেন? ঢুকে পরুন মঙ্গলের জমির মালিকের লিস্টে। সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীরামপুরের শৌনক দাসের পাশের জমিটি কিনেছেন হলিউডের বিখ্যাত সুপারস্টার টম ক্রুজ। আপনি কিনবেন কোন সুপারস্টারের পাশে?
হয়তো এখনই আপনি যেতে পারবেন না মঙ্গলে। কিন্তু ভবিষ্যতের কোনও এক সময়ে মঙ্গলের মাটিতে বসবাস করার সুযোগ তৈরি হলে এবং যাতায়াতের সুবিধা পাওয়া গেলে, আপনার থেকে ভাগ্যবান আর কেউ হবে না। ধরে নেওয়া হল, আপনার জীবদ্দশায় সেই সুযোগ আপনি নাও পেতে পারেন, কিন্তু ভবিষ্যতের উন্নত প্রযুক্তি আপনার পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেত্রে হয়তো সেই সুযোগ তৈরিও করে দিতে পারে।