এখনও এল নিনো সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনে উঠতে পারেনি বিজ্ঞানী মহল

Advertisement

চলতি বছরে এল নিনো আসতে পারে, এমন সতর্ক বার্তা আগেই দিয়ে রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। এমনিতেই ৩ থেকে ৮ বছর অন্তর এল নিনো আসার কথা। তবে কয়েক দশক ধরেই বড্ড অনিয়মিতভাবে বারংবার আঘাত হানছে এই এল নিনো। আর এর ফলে পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বড্ড বেশি প্রভাব পড়তে দেখা যাচ্ছে। যা নিয়ন্ত্রণের কোনও উপায় আপাতত জানা নেই বিজ্ঞানীদের কাছে।


নিনো
Symbolic Image – Image by Sven Lachmann from Pixabay

অনলাইন পেপার : ক্রমবর্ধমান বিশ্ব উষ্ণায়ণের জন্য আবহাওয়াবিদরা বহু দিন ধরেই দায়ী করে আসছেন চলমান কলকারখানা থেকে নিঃসৃত অতিরিক্ত কার্বন আর প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া এল নিনো কে। অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য প্রায় প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সম্মেলন করে থাকেন বিশ্ব নেতারা। প্রতিশ্রুতিও দিয়ে থাকেন নিজেদের সাধ্য মতো। তবে শেষমেশ কার্বন নিঃসরণ আদৌ কমে কি?

যাইহোক, কার্বন নিঃসরণ যেহেতু মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাই একে কমানো ইচ্ছা অনুযায়ী যেতেই পারে। তবে এল নিনো র প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার পথ কী? এ তো প্রাকৃতিক বিষয়। বছরের পর বছর ধরে একে নিয়ে চলছে গবেষণা। ইচ্ছা মতো একে নিয়ন্ত্রণও করা সম্ভব নয়। আর একে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বিশ্ব উষ্ণায়ণকেও পুরোপুরিভাবে আয়ত্তে আনা সম্ভব নয়। আসলে এই এল নিনো সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই জানতে বাকি রয়ে গিয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে।

চলতি বছরে এল নিনো আসতে পারে, এমন সতর্ক বার্তা আগেই দিয়ে রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। এমনিতেই ৩ থেকে ৮ বছর অন্তর এল নিনো আসার কথা। তবে কয়েক দশক ধরেই বড্ড অনিয়মিতভাবে বারংবার আঘাত হানছে এই এল নিনো। আর এর ফলে পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বড্ড বেশি প্রভাব পড়তে দেখা যাচ্ছে। যা নিয়ন্ত্রণের কোনও উপায় আপাতত জানা নেই বিজ্ঞানীদের কাছে।

কী এই এল নিনো? প্রায় ৪০০ বছর আগে প্রথম এল নিনো র প্রভাব অনুভব করেছিল প্রশান্ত মহাসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের একদল জেলে। তারা লক্ষ্য করেছিলেন সমুদ্রের জল আগের তুলনায় অনেকটাই উষ্ণ হয়ে উঠেছে। আর সেটি ছিল ক্রিসমাসের সময়। কোনও কিছু বুঝতে না পেরে ওই পরিস্থিতিকে তারা নাম দিয়েছিল এল নিনো দা নাভিদাদ। এটি একটি স্প্যানিশ শব্দ। এই ভাষায় এল নিনো র অর্থ ছোট ছেলে।

পরে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই পরিস্থিতি কেবলমাত্র প্রশান্ত মহাসাগর বিশেষ করে দক্ষিণ গোলার্ধের অস্ট্রেলিয়া আর পেরু বা ইকুয়েডরের মধ্যবর্তী জলসীমায় উৎপন্ন হয়ে থাকে। সাধারণ সময় এই অঞ্চলে বাতাসের গতি থাকে পশ্চিমমুখী। তাই সমুদ্রের জলও পশ্চিমে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ দক্ষিণ গোলার্ধে পেরু বা ইকুয়েডরের উপকূলভাগ থেকে সমুদ্র স্রোত বয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া উপকূলের দিকে।

কিন্তু এল নিনো এলে বাতাস তার বিপরীত মুখী কাজ করে। বাতাস উষ্ণ হয়ে উঠে গতি পরিবর্তন করে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বইতে শুরু করে। অথবা বাতাস বওয়া কোনও কোনও সময় পুরোপুরি থেমেও যায়। ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের জলও তুলনামূলক উষ্ণ হয়ে উঠে পূর্ব দিকে গতি নেয়। তাই অস্ট্রেলিয়া উপকূল অঞ্চলের জল কমে গিয়ে পেরু বা ইকুয়েডরের সমুদ্র উপকূলে জল বেড়ে যায়। আবহাওয়ায় দেখা দেয় ব্যাপক পরিবর্তন। অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে যায় কয়েক ডিগ্রী। সেই সঙ্গে কমে যায় বৃষ্টির পরিমাণ। এমনকি খরার পরিস্থিতিও প্রকট হয়ে ওঠে এই সময়।

কিন্তু এত কিছুর পরেও বিজ্ঞানীরা এল নিনো তৈরি হওয়ার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে পুরোপুরি জেনে উঠতে পারেননি। এল নিনো অনেকটাই নির্ভর করে বাতাসের গতি পরিবর্তনের উপর। কিন্তু কেন হঠাৎ এই পরিবর্তন? এখানেও প্রশ্ন চিহ্ন থেকে গিয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে। এছাড়াও এল নিনো প্রতিবারই আলাদা আলাদা কারণে ও পরিস্থিতিতে তৈরি হতে দেখা যায়, যা সুনির্দিষ্ট নয়। তাই বিজ্ঞানীরাও এখনও বুঝে উঠতে পারেননি এল নিনো র প্রকৃত স্বরূপ।

Advertisement
Previous articleমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতী বিভাস অনুপ্রেরণা পেয়েছে সদ্য প্রয়াত বাবার থেকে
Next articleমুক্তা কীভাবে এল ঝিনুকের শরীরে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here