Advertisement
সোমনাথ মুখোপাধ্যায় : হ্যালির ধূমকেতুর মতোই একটি অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি বৃহৎ ধূমকেতুর সন্ধান পাওয়া গেছে। যার নামকরণ করা হয়েছে C/2019Q4 বা ২১/বরিসভ। এটি আবিষ্কারক Gennadiy Borisov–এর নামে নামকরণ করেছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (IAU)। এই বহির্জাগতিক ধূমকেতুর পরিক্রমণ পথ অত্যন্ত দীর্ঘ উপবৃত্তাকার। তাই সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ধূমকেতুটির সময় লাগে মোটামুটি ৯০০০০ বছর। এই সময়ে সে এক আলোকবর্ষের দূরত্ব অতিক্রম করে।
![]() |
হ্যাবল টেলিস্কোপ থেকে তোলা ২১/বরিসভ-এর সাম্প্রতিক ছবি |
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২১/বরিসভনামের এই ধূমকেতুটি ৮ ডিসেম্বর নাগাদ সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসবে। ফলে তার গ্যাসীয় দীর্ঘ পুচ্ছ আয়নিত হয়ে আলোক উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। এই সময় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তার বিষয়ে বিশদভাবে তথ্য সংগ্রহ করবেন বলে মুখিয়ে আছেন। গত ২৪ নভেম্বর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ধূমকেতুর একটি ছবিও তুলে ফেলেছেন। পরে হ্যাবল টেলিস্কোপের সাহায্যেও ছবি তোলা হয়েছে। তা থেকে জানা গেছে, ধূমকেতুটির লেজের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১৬০০০০ কিলোমিটার, যেখানে পৃথিবীর আয়তন হল ১২৭৪২ কিলোমিটার মাত্র। অর্থাৎ ২১/বরিসভের লেজটাই পৃথিবী থেকে আকারে ১৪ গুন বড়ো। ধূমকেতুটির নিউক্লিয়াসের দৈর্ঘ্য ১.৬ থেকে ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে, যার পুরোটাই কার্বন–ডাই–অক্সাইড নানা ধরনের গ্যাস, জল ও বরফের মতো জমাট বাঁধা হিমায়িত পিণ্ড। নিউক্লিয়াসটিকে ঘিরে আছে পুরু ধুলো ও গ্যাসের আস্তরণ (Coma)। তাই নিউক্লিয়াসের সঠিক আয়তন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা এখনও করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ধূমকেতুটি পৃথিবী থেকে ৪১৮ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর দিয়ে পরিক্রমণ করায় হ্যাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমেও খুব সুস্পষ্ট ছবি এখনও তোলা সম্ভব হয়নি।
![]() |
জেমিনি অবজার্ভেটরি থেকে তোলা ২১/বরিসভ |
২১/বরিসভ যখন সূর্যের সবচেয়ে নিকটতম বিন্দুতে পৌঁছোবে তখন তার সূর্য থেকে দূরত্ব হবে ৩০০ মিলিয়ন কিলোমিটার (2AU)। যা পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের দ্বিগুণ। এটি যখন মঙ্গলের কক্ষপথকে অতিক্রম করবে তখন সেটি একটি অ্যাস্টরয়েড বেল্টের কাছে আসবে যদিও তার জন্য পৃথিবীর কোনও আশঙ্কার কারণ নেই।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন ৮ ডিসেম্বরের দিকে যদি কোনও নতুন তথ্য হাতে আসে। কারণ আগামী ৯০০০০ বছরে আর দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়া যাবে না। তাই ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ চলছে ধূমকেতুটির প্রকৃতি জানার জন্য। ৮ ডিসেম্বর উত্তর আকাশে ধূমকেতুটিকে দেখা যাবে। কিন্তু দূরত্বের কারণে খালি চোখে কতটা দেখা যাবে সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। তবে ধূমকেতুটি এযাবৎকালের মধ্যে সর্ববৃহৎ বলেই যা ভরসা…..।
Advertisement